Thank you for trying Sticky AMP!!

রাম রহিমকে ২০ বছর সাজা খাটতে হবে

দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে দুটি মামলায় ভারতের হরিয়ানার কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৭৬/৫০৬ ধারায় তাঁকে এ দণ্ড দেওয়া হয়।

সিবিআইয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আজ রোববার এনডিটিভির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর নেওয়া হয় রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে।

আজ সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে সানোরিয়া কারাগারে উড়ে যান সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহ। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই কারাগারে অস্থায়ী আদালত পরিচালনা করা হয়। কারাগারটি ঘিরে রেখেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

‘আমাকে মাফ করে দেন’
আদালতের বিচারক শুনানির শুরুতেই বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১০ মিনিট করে সময় বেঁধে দেন। এ সময় রাম রহিমের আইনজীবী দাবি করেন, রাম রহিম একজন সমাজকর্মী। তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। তাই বিচারককে রাম রহিমের অপরাধকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে রাম রহিম কেঁদে ফেলেন এবং বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে মাফ করে দেন।’ রায় ঘোষণার পর তিনি মেঝেতে পড়ে যান। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন ‘আমি আমি নির্দোষ’।

ডেরা চেয়ারপারসন বিপাসনা ইনসানের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা জানায়, তিনি ডেরার অনুসারীদের আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে সিরসায় দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে ভক্তরা।

রায়ের পর রাম রহিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর তাঁকে কারা পোশাক পরিয়ে সেলে পাঠানো হবে।

রাম রহিমের আইনজীবীরা আদালতকে অনুরোধ করেন তাঁর সঙ্গে কিছু ওষুধ রাখার অনুমতি দিতে। এরপর রায়ের কপি ডেরার প্রধান ও সিবিআইএর আইনজীবীকে দেওয়া হয়।

রায়ের পর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং জরুরি বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘জনসাধারণকে অবশ্যই এ রায় মেনে নিতে হবে। অবশ্যই শান্তি বজায় রাখতে হবে। এখন পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক। আমাদের বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না।’

এদিকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্যের পুলিশের মহাপরিদর্শককে নিয়ে জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন।

এর আগে বাদীপক্ষ রাম রহিমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে।

ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) একটি বিশেষ আদালত গত শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এরপরই তাঁর ভক্তরা তাণ্ডব চালায়। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় ভক্তদের লাগামছাড়া সহিংসতায় নিহত হন ৩৮ জন। জখম হন ২৫০ জনের বেশি।

শুক্রবারের ঘটনার পর রোহতক কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। হরিয়ানার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মুঠোফোনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ভক্তরা যাতে কারাগারের আশপাশে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারাগারের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং হরিয়ানা পুলিশ। শহর থেকে সেখানে যাওয়ার পথ আটকে দেওয়া হয়েছে, যাতে ভক্তরা কারাগারের আশপাশে জড়ো হতে না পারে। জেলা কর্তৃপক্ষ সেনা-সহায়তা চেয়েছে। সেনাবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। রোহতকের পুলিশ কোনো ধরনের তাণ্ডবের ইঙ্গিত পেলেই গুলি করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে।

এদিকে সিরসায় রাম রহিমের প্রধান ডেরা সচ সউদে এখনো ৩০ হাজার ভক্ত অবস্থান করছে। তারা আজকের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ভক্তরা যাতে নতুন করে কোনো সহিংসতা করতে না পারে, সে জন্য সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।

হরিয়ানার পঞ্চকুলা ও সিরসায় বলবৎ রয়েছে কারফিউ। দিল্লির ১১টি, উত্তর প্রদেশের নয়টি ও রাজস্থানের একটি জেলায় বড় ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার পর শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত হাঙ্গামায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনার পর সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণে হাইকোর্ট রাম রহিমের ডেরা সচ সউদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।