Thank you for trying Sticky AMP!!

রাহুল নিজেকে প্রমাণ করলেন

রাহুল গান্ধী

ঢোঁক গিলে নয়, চরম সমালোচকও এখন নির্দ্বিধায় স্বীকার করছেন, নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করলেন। এবং কী আশ্চর্য, রাজনৈতিক পরিপক্বতার নিদর্শন রেখে রাহুলও বুঝিয়ে দিলেন, এই উত্তরণের জন্য তিনি যাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদি।

তিন রাজ্যে সরকার গড়া নিশ্চিত করে গত মঙ্গলবার রাত আটটায় ভিড়ে ঠাসা কংগ্রেস সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃপ্ত রাহুল যা বললেন এবং যেভাবে বললেন, তাতেই স্পষ্ট গত এক বছরে তিনি কতটা বদলে গিয়েছেন। বদলটা ঘটেছিল গত বছরের ঠিক এই সময়ে গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন চলাকালে। নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্যে একের পর এক জনসভায় রাহুল তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থ–নীতির ‘অসারত্ব’, তাঁর ‘শিল্প ও কাছের শিল্পপতিদের প্রতি প্রীতি’, কৃষিক্ষেত্রকে ‘বঞ্চনার’ নজিরগুলো। রাজ্য দখলে রাখতে অতিরিক্ত ঘাম ঝরাতে বাধ্য হয়েছিলেন মোদি এবং তাঁর দোসর অমিত শাহ। রাজনীতির প্রতি রাহুলের একাগ্রতার প্রমাণ সেই প্রথম পাওয়া গিয়েছিল। গুজরাট কোনোরকমে দখলে রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসকে রাজ্যছাড়া করতে পারেনি। সেই থেকে রাহুলের উত্থান উত্তরমুখীই শুধু নয়, গো–বলয়ের তিন রাজ্য হারানোর পর বিজেপি এখন রাহুলের কংগ্রেসকে রীতিমতো সমীহ করতে বাধ্য হচ্ছে। এতটাই যে মঙ্গলবার বিজেপির কোনো নেতা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন না। কিন্তু রাহুল এলেন। আগাগোড়া মুখে ধরে রাখলেন তৃপ্তির স্মিত হাসি এবং পরাজিত দলের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। বরং রাহুল বললেন, ‘মোদিজির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ২০১৪ সালেই ওঁর কাছ থেকে আমি শিখেছি, রাজনীতিতে কী কী বলা উচিত নয়।’

চার বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক আক্রমণ করে গেছেন রাহুল, সোনিয়া, জওহরলাল নেহরু এবং দল হিসেবে কংগ্রেসকে। এই আক্রমণ বহু ক্ষেত্রে শালীনতার বেড়া টপকেছে। গান্ধী পরিবারকে ‘নামদার’ ও নিজেকে ‘কামদার’ বলে অভিহিত করেছেন। সর্দার প্যাটেলের গৌরবগাথা বর্ণনা করতে গিয়ে ছোট করেছেন নেহরুকে। বারবার শুনিয়েছেন কংগ্রেসমুক্ত ভারত গঠন করার অঙ্গীকারের কথা। তুলনায় রাহুল কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণে যাননি, বরং হাতে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে রাফালের দুর্নীতি প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে বঞ্চনার উদাহরণগুলো টেনেছেন।

এক বছর ধরে মোদির ‘নীতি ও দুর্নীতির’ যে সমালোচনা রাহুল করে আসছেন, সন্দেহ নেই তার মোকাবিলায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব চূড়ান্ত ব্যর্থ। রাজ্য নির্বাচনেও রাহুলের আক্রমণের ফলা ছিল ওই দিকগুলোতেই। দুর্নীতি, কৃষক–বঞ্চনা, কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি, স্বজন পোষণ, উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির জন্য সামাজিক অসন্তোষ বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাহানি। কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোকে রাজ্য বিধানসভার ভোটে প্রধান ইস্যু করে তুলে তিন রাজ্যের ভোট তিনি মোদির বিরুদ্ধে ‘গণভোটের’ রূপ দিতে চেয়েছিলেন। সেই কাজে রাহুল সফল। মঙ্গলবার তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ২০১৯ সালের মোদির বিরুদ্ধে লড়াই তাঁকে বাদ দিয়ে হবে না। তিনিই হয়ে উঠবেন মোদির বিরুদ্ধে প্রধান মুখ। দেশের বহুত্ববাদী চরিত্র রক্ষাও যে তাঁর দায়িত্ব, তা বুঝিয়ে রাহুল বললেন, ‘আমাদের লড়াই বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে। কখনো আমরা কোনো দল মুক্ত ভারত গঠনের ডাক দেব না।’

একের পর এক হার কংগ্রেসকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছিল। গুজরাটে ভালো ফল এবং কর্ণাটকে সরকার গঠন সেই হতাশা কাটিয়ে তুলেছে। সর্বশেষ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্রিশগড় জয়ের মধ্য দিয়ে রাহুল হতোদ্যম কংগ্রেসকে চাঙা করে তুললেন। দলে এই বিশ্বাস তিনি এনে দিতে পেরেছেন যে ২০১৯ অলঙ্ঘনীয় নয়।