Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারি উদ্যোগে কাশ্মীর গেলেন বিদেশি কূটনীতিকেরা

কাশ্মীরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের গাড়িবহরকে গন্তব্যে নেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকারের উদ্যোগে কাশ্মীর পরিস্থিতি দেখাতে ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূতকে সেখানে নেওয়া হয়। ছবি: এএফপি

কাশ্মীর পরিস্থিতি দেখাতে ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূতকে এবার উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হলো। আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা এক বিশেষ বিমানে শ্রীনগরে পৌঁছান। কড়া প্রহরায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় সেনা সদরে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত পরিস্থিতি সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়। রাজ্য প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

বিদেশি প্রতিনিধিরা আজই চলে যান এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শীতকালীন রাজধানী জম্মু। আগামীকাল শুক্রবার তাঁরা দিল্লি ফিরবেন। জম্মুতে তাঁরা দেখা করবেন উপরাজ্যপাল জি সি মুর্মুর সঙ্গে। এই প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এই রাজ্যের মন্ত্রী আলতাফ বুখারি। তাঁকে সামনে রেখে ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকার গড়তে চাইছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৫ আগস্ট সংসদে বলেছিলেন, ৭০ বছর ধরে তিনটি মাত্র রাজনৈতিক পরিবার কাশ্মীরকে লুটেপুটে খেয়েছে। তাঁরা চান এই তিন পরিবারকে বাদ দিয়ে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের তুলে আনতে। তিন পরিবার বলতে তিনি আবদুল্লা, মুফতি ও কংগ্রেসকে বুঝিয়েছিলেন।

কূটনীতিকদের এই দলে রয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ আই জাস্টার। বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার রকিবুল হকও এই প্রতিনিধিদের অন্যতম। তাঁরা ছাড়া রয়েছেন ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, নিগার, নাইজেরিয়া, মরক্কো, গায়ানা, আর্জেন্টিনা, ফিলিপাইন, নরওয়ে, মালদ্বীপ, ফিজি, টোগো ও পেরুর রাষ্ট্রদূতেরা। ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি যাত্রা বাতিল করেন। সফরসঙ্গী হননি অস্ট্রেলিয়া ও কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের প্রতিনিধিরাও।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘উপত্যকার পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে আসছে, তা দেখানোই এই সফরের উদ্দেশ্য। আমরা সংখ্যাটা বেশি বাড়াতে চাইনি। ইইউ রাষ্ট্রদূতসহ অন্যদের পরে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা শুরু বলা যায়।’ চীন, মালয়েশিয়া ও তুরস্ক কাশ্মীর সিদ্ধান্তের ঘোর সমালোচক। তাদের রাষ্ট্রদূতদেরও উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হবে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, ‘ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলতে পারব না।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত উগো অস্তুতোর এই সফরে কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের তিন গৃহবন্দী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির সঙ্গে তিনি দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধ না রাখায় ইইউ রাষ্ট্রদূত কাশ্মীর যাননি। সূত্রের খবর অনুযায়ী, তিনি নাকি এমন মন্তব্য করেছেন, কোনো ‘গাইডেড ট্যুরে’ উপত্যকা যেতে চান না। রবীশ কুমার অবশ্য এই খবর অসত্য বলে জানান। তিনি বলেন, ইইউ রাষ্ট্রদূতেরা দল বেঁধে যেতে চান। এত অল্প সময়ে তা করা সম্ভব নয়।

জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের মধ্য দিয়ে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করা হয় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। সেই থেকে উপত্যকার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ নেতাই গৃহবন্দী। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ। গোটা উপত্যকা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞায় মোড়া। ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক নয়। নৈশকালীন কারফিউও জারি রয়েছে। এভাবে তিন মাস কাটার পর গত অক্টোবর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জন দক্ষিণপন্থী সাংসদকে দুই দিনের জন্য উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর এবার এটি দ্বিতীয় দফার কূটনৈতিক সফর।

ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আগের মতো এবারও এই সফরের বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নিজের দেশের সাংসদদের যেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই, বিদেশিদের সেখানে নিয়ে গিয়ে সরকার বোঝাতে চাইছে কাশ্মীর স্বাভাবিক! তিনি বলেন, সব যদি স্বাভাবিকই হবে, তাহলে এত কড়াকড়ি কেন? সরকার উপত্যকাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিক না?