Thank you for trying Sticky AMP!!

সারদা, রোজভ্যালি, নারদ তদন্তে নতুন করে তৎপর সিবিআই

দেশব্যাপী যখন আসামের নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস যখন এই ইস্যুতে একে অন্যের বিরুদ্ধে মুখর এবং রাজনৈতিক অস্ত্র নিয়ে লড়াইতে নেমেছে, তখনই পশ্চিমবঙ্গের চলমান দুর্নীতি মামলা নিয়ে তৎপর সিবিআই।

এসব মামলার মধ্যে অন্যতম সারদা মামলার তদন্তে এবার নতুন করে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। গত শুক্রবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চিঠি দিয়ে সিবিআই ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় হিসাবে ১০ লাখ রুপির ওপর জমা দেওয়া ডিমান্ড ড্রাফটের (ডিডি) তথ্য চেয়েছে। চাওয়া হয়েছে এসব ডিডির দাতার নাম-ঠিকানাও। এর আগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে তৃণমূল কংগ্রেসের ২১টি ব্যাংক হিসাবেরও তথ্য চেয়েছিল সিবিআই। সে সময় তৃণমূল নেতা সাংসদ সুব্রত বক্সী সিবিআইয়ের কাছে এ-সংক্রান্ত নথি জমা দিয়েছিল।

সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, তৃণমূলের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআইর হাতে উঠে আসে ব্যাংক ড্রাফটের তথ্য।

এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের ২০১৪ সালের ব্যাংক হিসাবের নথি সংগ্রহ করেছিল ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)।

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণদার সুদীপ্ত সেন অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর অবর্তমানে তাঁর সংস্থার সম্পত্তি লুট হচ্ছে। বেনামে বিক্রি হচ্ছে। এর বিহিতও দাবি করেছেন তিনি। সুদীপ্ত সেন এখন কারাগারে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার একটি মামলায় তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের বিশেষ আদালতে নেওয়া হলে আদালতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ জানান তিনি। এদিন আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা ও সাবেক ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্র, সাবেক সাংসদ কুণাল ঘোষ, সারদার কর্মকর্তা দেবযানী মুখোপাধ্যায়, মাতঙ্গ সিং, মনোরঞ্জন সিং, রমেশ গান্ধী ও নিতু সরকার। তাঁরা সবাই সারদা মামলার সঙ্গে যুক্ত।

সারদা মামলায় তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগে কলকাতায় সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা অভয় সিংহকে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভয় সিং ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে দায়েরকৃত সারদা, রোজভ্যালি ও নারদ আর্থিক দুর্নীতি মামলার সুপারভাইজিং কর্মকর্তা।

সম্প্রতি দিল্লি থেকে আসা সিবিআইয়ের বিশেষ পরিচালক রাকেশ আস্থানা কলকাতার নিজাম প্যালেসে মামলার এই তিন তদন্ত কর্মকর্তা ও আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই তদন্তের ঢিলেমির বিষয়টি ধরা পড়ে। রাকেশ আস্থানা মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। ফলে, চাঞ্চল্যকর এই তিন আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে নতুনভাবে প্রাণসঞ্চার হয়। সিবিআইও তৎপর হয় দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য।

জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর এই তিন আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে খুশি হতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। দীর্ঘদিন আগে এসব মামলা দায়ের হলেও সিবিআই এখনো এই মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি। এতেই অখুশি হন সিবিআইর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডট কম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। সেই ভিডিও আবার কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়েও সেদিন ফাঁস করে দিয়েছিল বিজেপি। ওই স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। তাঁরা তা গ্রহণও করছেন।

এই স্টিং অপারেশনে যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী ২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েত মন্ত্রী ৫ লাখ), প্রয়াত সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), প্রসূন ব্যানার্জি (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), শোভন চ্যাটার্জি (কলকাতার মেয়র ৪ লাখ), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ৫ লাখ), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), ফিরহাদ হাকিম (পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ৫ লাখ) এবং মুহম্মদ আহমেদ মির্জা (সিনিয়র পুলিশ অফিসার ৫ লাখ টাকা)। এই নিয়ে সিবিআই বা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মামলা দায়ের করলেও সেই মামলা চলেছে শ্লথ গতিতে।

এই ঘটনার আগে ২০১৩ সালের এপ্রিল ফাঁস হয় সারদা অর্থ কেলেঙ্কারি। অভিযোগ ওঠে, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের নামে ১৪ হাজার কোটি রুপি তোলা হয় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। সেই অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয় সারদা কেলেঙ্কারি মামলায়। এই মামলায় জড়িয়ে সেদিন গ্রেপ্তার হন সারদা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেনসহ তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ ও সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, রাজ্য পুলিশের সাবেক ডিজি রজত মজুমদারসহ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। সেই মামলার তদন্তর দায়িত্ব পায় সিবিআই। সেই মামলার তদন্ত শেষ দিকে শ্লথ হয়ে পড়ে।

২০১৫ সালে ফাঁস হয় রোজভ্যালি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। এ মামলায় ৬০ হাজার কোটি রুপির আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠার পর গ্রেপ্তার হন রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ, অভিনেতা তাপস পাল প্রমুখ। এই মামলারও তদন্ত ভার পায় সিবিআই।

চলতি মাসেই এই মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে সিবিআইয়ের। সিবিআইয়ের পাশাপাশি এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ইডি।