Thank you for trying Sticky AMP!!

সীমান্ত নিয়ে তৎপর নেপাল, সংযত ভারত

ভারত-নেপাল সীমান্ত উত্তেজনা চলছে (এএফপির ফাইল ছবি)

চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও নেপাল সীমান্ত এখনো ভারতের গলার কাঁটা হয়ে খচখচ করছে। নেপালের সংসদ দেশের নতুন ম্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদনের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছে। সংসদের নিম্নকক্ষে বিপুল ভোটে নতুন ম্যাপসংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু ভারত এখনো সংযত।

নেপালের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ভারত বরং দুই দেশের ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। ভারত কতটা সুপ্রতিবেশী, কতভাবে নেপালের সাহায্যে এসেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ওপর জোর দিয়েছে। স্পষ্টতই, ভারত অপেক্ষার নীতি গ্রহণ করাকেই পছন্দ করছে।

নেপাল সংসদের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধিসভায় আজ শনিবার সংবিধান সংশোধন বিলটি পাস হয়। নিম্নকক্ষের ২৭৫ ভোটের মধ্য ২৫৮টি পড়েছে সংশোধনের পক্ষে। নিম্নকক্ষে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থনে পাস হওয়া বিলটি উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পাস করাতে হবে। এরপর তা পাঠানো হবে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে অনুমোদনের জন্য।

নতুন ম্যাপ চূড়ান্ত করে সংসদীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার পর নেপাল সরকার ৯ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে। ওই দলের সদস্যদের কাজ লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা যে নেপালের অন্তর্গত তার ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ জোগাড় করা। নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতকে অবাক করেছে। ভারত মনে করছে, কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আলাপ–আলোচনার একটা পথ নেপাল খুলে রাখতে চাইছে।

এই কারণে নেপালের উদ্যোগ নিয়ে ভারত এখনো বিরূপ কোনো মন্তব্য করেনি। এমন কিছু বলেনি যাতে ভারতের উদ্বেগ ফুটে ওঠে। ভারতের সেনাপ্রধান মনোজ মুকুল নারভানে আজ চীন প্রসঙ্গে বলেন, লাদাখে চীনের সীমান্ত পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। একাধিক বৈঠকের পর দুই দেশই তাদের বহু সেনা সরিয়ে নিয়েছে। মতপার্থক্য যা কিছু রয়েছে সবই মিটে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। নেপাল প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ভারত ও নেপালের জনগণ আদি অনন্তকাল থেকে সম্পর্কযুক্ত।

ভারত–নেপালের বহুমুখী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, নেপালের প্রয়োজনে ভারত কতবার কতভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার সেই উল্লেখ করেছিল। পরের দিন শনিবার সেনাপ্রধান নারভানে দুই দেশের মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উল্লেখ করেন। সেনাপ্রধান এই মন্তব্য করেন নেপাল সংসদে নতুন ম্যাপ অনুমোদনের জন্য সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে আলোচিত হওয়ার ঠিক আগে।

নেপালের শাসক দলের রাজনৈতিক উদ্যোগকে গুরুত্ব না দিয়ে দুই দেশের জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উল্লেখের মধ্য দিয়ে ভারত সম্ভবত এটাই বোঝাতে চেয়েছে, জমি বিরোধের চেয়েও মানুষের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক বেশি জরুরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো মহলের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী খড়্গ প্রসাদ শর্মা ওলির এই জাতীয়তাবাদী পদক্ষেপের লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিজের আসন পোক্ত করা। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও তিনি কিছুটা সংশয়ী। তাই বারবার ভারতকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিচ্ছেন এবং ৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন। সাউথ ব্লকের একাংশের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী ওলি সব রাস্তা একেবারে বন্ধ করতে চাইছেন না। ভারতও তাই অপেক্ষার নীতি নিয়েছে।

ভারতের সংযত আচরণের আরও একটি নমুনা শুক্রবারের সীমান্ত উত্তেজনা, যেখানে নেপাল সশস্ত্র পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় গ্রামবাসী নিহত ও কয়েকজন আহত হন। ভারতীয় কৃষকদের সঙ্গে নেপালিদের বচসার পরিণতি ওই গুলি চালনা। নেপালের ম্যাপ রাজনীতি ওই উত্তেজনার কারণ বলে মনে করা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ভারতের সশস্ত্র সীমা বলের মহাপরিচালক রাজেশ চন্দ্র বলেন, ঘটনা নেপাল সীমান্তের অন্তত দেড় কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঘটেছে। বিবাদ নিতান্তই স্থানীয়।

চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মেটানো ভারতের প্রথম কাজ। সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমিত হলে নেপালের ম্যাপ বিতর্কের অবসানে ভারত মনোযোগী হবে। ভারত ইতিমধ্যেই নেপালকে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তারপর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে ভাবা যাবে।