Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বরাষ্ট্রসচিব-সিআইডির এডিজি প্রত্যাহার, কমল ভোট প্রচারের সময়

পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

লোকসভার নির্বাচনের শেষ দফার ভোটের আগে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের অভিনব কর্মকাণ্ড দেখল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। রাজ্যের স্বরাস্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে অপসারণ করা হলো। রাজ্যের সিআইডির এডিজি রাজীব কুমারকেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, তাঁরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বারবার হস্তক্ষেপ করছেন।

এতেই ক্ষান্ত হয়নি ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। এই প্রথম ভারতের সংবিধানের ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচার এক দিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের এসব সিদ্ধান্তকে ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর রোড শো ঘিরে বিজেপি–তৃণমূল সংঘর্ষের জেরেই এসব সিদ্ধান্ত বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। ওই দিন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বিদ্যাসাগর কলেজে স্থাপিত মহান সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলে একদল লোক। এরপরই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক অভূতপূর্ব নির্দেশ জারি করে নির্বাচন কমিশন। দিল্লিতে নির্বচন সদনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ জারির কথা ঘোষণা করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার ও সুদীপ জৈন।


নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী এখন পশ্চিমবঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব সামলাবেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে। এর আগে স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য গত সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিটি ভালোভাবে গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। তারা সিআইডির এডিজি এবং কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলেছে।
নিয়মমতো কাল শুক্রবার রাত থেকে এই নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা কমিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত করা হয়েছে। ভারতের লোকসভার শেষ বা সপ্তম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রোববার। ওই দিন পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা।

নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, বিজেপির নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মমতা আরও বলেন, আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে মোদির দুটি সভা আছে বলে নির্বাচন কমিশন আজ রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারের সময় বেঁধে দিয়েছে। মমতা বলেন, অমিত শাহ দাঙ্গা করিয়েছেন। অন্যায় করল বিজেপির গুন্ডারা, আর ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?

নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে সমালোচনায় মুখর হয়েছে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
কমিশনের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল বলেছেন, যদি পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এতই খারাপ হয় যে প্রচারের সময় কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, তবে কেন আজ রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছে? আজ পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সভা আছে, তাই বলে?

সিআইডির এডিজি রাজীব কুমার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘জেগে ওঠার সময় এসেছে ভারতের। এই ধর্মান্ধ রাজনীতি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এখন মহান সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই হিংসা ও গুন্ডামির জবাব দেবে।’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, বৃহস্পতিবার মোদির দুটি সভা করার সুযোগ দিতে কি আজ রাত ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন?

গত মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি অমিত শাহ একটি রোড শোতে যোগ দেন। এই রোড শো চলার সময় কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক দফা সংঘর্ষ বাধে। এরপর রোড শো চলার সময় বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে থেকে যাওয়ার সময় ফের সংঘর্ষ বাঁধে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। একপর্যায়ে কলেজের ভেতরে থাকা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর হয়। তৃণমূল দাবি করে, বিজেপি তাদের রোড শো থেকে হামলা চালায় বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রদের ওপর। এরপর বিজেপি ভাঙচুর করে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। বিজেপি তা অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করে, রোড শো যখন বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে থেকে যাচ্ছিল, তখন ওই কলেজে অবস্থান নেওয়া তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা ইটপাটকেল ছুড়লে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে তৃণমূলের সমর্থকেরা ওই মূর্তি ভেঙে বিজেপির ওপর দোষ চাপায়। এ ঘটনা নিয়ে দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৮ জন। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূর্তি ভাঙার দায় চাপিয়েছেন বিজেপির ওপর। আর অমিত শাহ ও মোদি দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের ওপর।
এদিকে মোদি আজ বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশে একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে মূর্তি ভাঙার দায় তৃণমূলের ওপর চাপিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, তিনি ওই কলেজে পঞ্চধাতু দিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানিয়ে দেবেন। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘আমরা কেন নিতে যাব ওদের কাছ থেকে মূর্তি। বিজেপির দেওয়া মূর্তি নেব না। আমরা নিজেরাই মূর্তি বানাব। মূর্তি ভাঙা বিজেপির সংস্কৃতি।’