Thank you for trying Sticky AMP!!

হিংসার দিল্লিতে ভালোবাসার আখ্যান

দাঙ্গা বিধ্বস্ত দিল্লির একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য। ছবি: এএফপি

‘তিন পুরুষ ধরে এ এলাকায় আছি, কখনো এমনটা দেখিনি। হিন্দু-মুসলিম সবাই এবারের এ দাঙ্গার ঘটনায় প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। আমাদের এলাকায় আমরা কোনো অঘটন ঘটতে দিইনি। আমরা সবকিছু একসঙ্গে করি। আজানের ধ্বনি শুনলে আমরা গান থামিয়ে দিই। যখন দরকার হয়, একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে যাই।’


কথাগুলো ভারতের রাজধানী দিল্লির চান্দু নগরের বাসিন্দা প্রবীণ গুপ্তের। তরুণ এ ব্যবসায়ী স্থানীয় গুপ্ত মার্কেটের মালিক। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লি যখন সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে জ্বলছে তখন পাশের এলাকা খাজুরির ২৫০ হিন্দু-মুসলিম পরিবারের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এই চান্দু নগর। এসব মানুষের আশ্রয়-খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এলাকা নিরাপদ রেখেছি। কোনো দাঙ্গাবাজকে ঢুকতে দিইনি।’

দিল্লির হিংসার আগুন মিইয়ে এসেছে। কিন্তু হানাহানির ক্ষত এখনো শুকায়নি মানুষের মন থেকে। যারা স্বজন হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন—তারা হয়তো আমৃত্যু বয়ে বেড়াবেন এই নির্দয়তার স্মৃতি। কিন্তু হানাহানির অসংখ্য ঘটনার মধ্যে এখন মানবতার নানা আখ্যান উঠে আসছে। সহিংস মানুষের নিষ্ঠুরতা দিল্লিকে বিদ্ধ করেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর পাশে উল্টো চিত্রও আছে। উপদ্রুত প্রতিবেশীর দিকে স্বজনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আরেক প্রতিবেশী। এমন এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চান্দু নগর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রলডট ইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সহিংসতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়। এর শিকার ছিলেন মূলত মুসলিমরা। তবে রক্তপাত ও উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্বের গল্পও আছে। অনেক এলাকায় হিন্দু পরিবারগুলো সহিংসতা থেকে বাঁচাতে মুসলিমদের ঠাঁই দিয়েছে। এলাকা অথবা সড়কে উন্মত্ত জনতার সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে মুসলিমদের রক্ষা করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

সেই সহিংসতার ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন শেহজাদ জায়েদি। ভারতের উত্তর পূর্ব দিল্লির মহালক্ষ্মী ইনকিলাব এলাকায় ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের দোকান আছে তাঁর। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে দোকানে যান তিনি। তাঁর দোকানের চারপাশে অস্ত্রের মহড়া, উন্মত্ত জনতার তাণ্ডব, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও এলোপাতাড়ি গুলোগুলি দেখেছেন তিনি। এসব তাণ্ডবে তাঁর দোকানের সব পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁর। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি।

শেহজাদ জায়েদির ভাষ্য, সে দিন যদি উন্মত্ত জনতা রুখতে তাঁর পাশে হিন্দু বন্ধুরা না দাঁড়াত, তাহলে আজ তিনি জীবিত থাকতে পারতেন না।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে ভারতের দিল্লি। আন্দোলন রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। যা পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ। কয়েক দিনের সহিংসতায় প্রায় ৪০ জনের প্রাণহানি হয়।

যে চান্দু নগরের কথা বলা হলো, সেখানকার বাসিন্দা আহমদ হোসেন (৬০)। তিনি এবারের এ সহিংসতার পেছনে গত ৮ ফেব্রুয়ারির দিল্লি নির্বাচনের আগে নেতাদের ঘৃণাভরা বক্তৃতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এসবের এখন একটা শেষ দরকার। মানুষের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে।’ আহমদের কথা, এর জন্য রাজনীতিবিদেরাই দায়ী।