Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এসেছেন মর্ত্যে। কলকাতার বরিষা ক্লাবের পূজা

হেঁটে নয়, নেটে পূজার যত আয়োজন কলকাতায়

কলকাতার দুর্গাপূজার সুনাম বিশ্বজোড়া। কিন্তু করোনাকাল কেড়ে নিয়েছে উৎসবের আনন্দ। ‘করোনাসুর’ আবির্ভূত হয়ে শুধু কলকাতা নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গের পূজার জৌলুশকেই ম্লান করে দিয়েছে।

আজ বুধবার শারদীয়া দুর্গাপূজার মহাপঞ্চমী। অন্য বছরগুলোয় এদিন থেকেই শহরে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু এ বছর সেই চিরপরিচিত দৃশ্য প্রায় উধাও।

কলকাতার বোসপুকুরের প্রতিমা

এবার কলকাতাসহ এ রাজ্যে ৩২ হাজার পূজা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বলেছে, পূজা হবে সাদামাটা। পূজায় কোনো বাড়তি উৎসব নয়। তাই এবার রাজ্যের অধিকাংশ পূজা কমিটিই সাধারণভাবে নিয়ম রক্ষার পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের অধিকাংশ পূজা কমিটিই ঘোষণা দিয়েছে, তারা এবার করোনার কারণে বিশাল আকারে পূজা করবে না।

পূজা দর্শনে গিয়ে রাজ্যের কোনো মানুষ যাতে করোনার কবলে না পড়ে, তার আগাম সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার। পূজার সময় ভিড় কমাতে গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট পূজা নিয়ে এক মামলায় নির্দেশ দিয়েছেন, এবারের দুর্গাপূজায় রাজ্যের সব পূজামণ্ডপ ‘কনটেনমেন্ট জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।

চেতলা অগ্রণীর প্রতিমা

যদিও করোনার সংক্রমণ রুখতে এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, পূজা শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন সংবাদপত্রে যেভাবে নিয়ন্ত্রণহীন দর্শকের ভিড় লক্ষ করা গেছে, তাতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এ বছর কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠেয় ৩২ হাজার সর্বজনীন পূজামণ্ডপকে চিহ্নিত করতে হবে ‘কনটেনমেন্ট জোন’ হিসেবে, যাতে কোনো দর্শকই মণ্ডপে ঢোকার অনুমতি না পায়।

নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি বড় মণ্ডপের ১০ মিটার ও ছোট মণ্ডপের ৫ মিটার এলাকাকে আটকিয়ে গোটা পূজামণ্ডপকে কনটেনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করে নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ, এই নির্দিষ্ট এলাকায় কেউ প্রবেশাধিকার পাবে না। পূজা হবে শূন্য দর্শক নিয়ে। তবে প্রতিটি বড় মণ্ডপে ২৫ জন এবং ছোট মণ্ডপে ১৫ জনকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হবে মণ্ডপের ভেতরে পূজা অনুষ্ঠান ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য। তবে এই ২৫ অথবা ১৫ জনের তালিকায় যাঁরা থাকবেন, তাঁদের নাম আগেভাগে পুলিশের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে আনতে হবে। পূজার সব কদিনই তাঁরাই দায়িত্ব পালন করবেন। তালিকার নাম পরিবর্তন করা যাবে না। তাঁদের নামও টাঙিয়ে রাখতে হবে পূজামণ্ডপের সামনে। নির্দেশে বলা হয়েছে, পূজামণ্ডপের চারদিক কর্ডন করে দিতে হবে। লেখা রাখতে হবে ‘নো-এন্ট্রি জোন’।

কলকাতার নামী পূজা কলেজ স্কয়ারের মণ্ডপের প্রতিবিম্ব পুকুরে

তবে ভার্চ্যুয়াল কভারেজে দর্শকদের মণ্ডপ দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর গোটা রাজ্যে পূজার আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। তবুও কলকাতার পূজার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য কলকাতাসহ রাজ্যের সব নামী পূজার পরিসর কমিয়ে আনা হলেও কিছু কিছু পূজামণ্ডপ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একডালা এভারগ্রিনের দৃষ্টিনন্দন প্যান্ডেল

সব সময়ই কলকাতার পূজার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল সাবেকি পূজার সঙ্গে থিম পূজার লড়াই। প্রতিবছর এই লড়াই হয়েছে। এবার সে লড়াই অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তবুও কিছু কিছু পূজা কমিটি অতীতের লড়াইকে জিইয়ে রাখার জন্য এবারও মাঠে রয়েছে। যদিও সেই পূজার লড়াই দেখার ওপর জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবু এবারও কলকাতাসহ রাজ্যের কিছু কিছু এলাকায় লড়াই জারি রয়েছে সাবেকি পূজার সঙ্গে আধুনিক থিম পূজার লড়াইকে।

এই করোনা আবহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সেই সঙ্গে করোনা মহামারি। এবার কলকাতাসহ রাজ্যের বহু মণ্ডপে পূজার থিম করা হয়েছে করোনা আর আম্পানকে।

যোধপুর পার্কে ভিন্ন সাজে দেবী দুর্গা

কলকাতার দমদম পার্ক তরুণ দল এবারের পূজার থিম করেছে আম্পান, আর দমদমের ভারতচক্র থিম করেছে ‘দুঃখ-জাগানিয়া’কে। তরুণ সংঘ থিম করেছে আম্পান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উজ্জীবন মন্ত্র। বসিরহাটের উই দ্য গ্রিন ক্লাব থিম করেছে ‘করোনা নাশে সর্বমঙ্গলা’। প্রান্তিক স্পোর্টিং ক্লাব থিম করেছে আম্পানকে।

কাশী বোস লেনের মণ্ডপের অপরূপ সাজ

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ মিত্র স্কয়ার থিম করেছে ‘হেঁটে নয়, নেটে দেখুন পূজা’। কলকাতার বাদামতলা আষাঢ় সংঘ এবার থিম করেছে ‘পথের পাঁচালী’কে। মন্দির বাজারের চাঁদপুর মিলন সংঘ এবার থিম করেছে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জারোয়া জনগোষ্ঠীর জীবন, জীবিকা ও কাহিনি নিয়ে। ডুমুরগাছের কাঠ, চট আর উলুঘাস দিয়ে নির্মাণ করেছে পূজামণ্ডপ। এখানেই তুলে ধরা হয়েছে জারোয়াদের জীবনকাহিনি। আর মথুরাপুর সর্বজনীনের থিম এবার করোনাসুর। টালা পার্ক প্রত্যয় থিম করেছে লোকহিত। করোনাযুদ্ধের পর মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয়কে।

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শোভাবাজার রাজবাড়ীর প্রতিমা

কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিনের থিম এবার সাবেকিয়ানাকে। সিংহী পার্কের থিম ধানভরা কলসি। বোসপুকুর শীতলামন্দিরের থিম এবার কাল্পনিক এক মন্দিরকে। পিকনিক গার্ডেনের থিম এবার মহাভারত ও রামায়ণের অংশবিশেষ।

এই করোনাকালেও শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের প্যান্ডেলের সামনে মানুষের ভিড়

কলকাতার আরেক ঐতিহ্যবাহী শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব এবার থিম করেছে কেদারনাথ মন্দিরকে। ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া ক্লাব বিভিন্ন ধর্মস্থানের মাটি জল, আর সেনিটাইজার মিশিয়ে গড়েছে দুর্গা প্রতিমা। কলকাতার হরিদেবপুর ৪১ পল্লি থিম করেছে বর্ণ। করোনায় বেরঙিন হওয়া মানবজীবনে নতুন করে রঙের প্রলেপ দেওয়াকে।

সুরুচি সংঘে দেবী দুর্গা এসেছেন দুর্গতিনাশিনী রূপে

অজয় সংহতির থিম এবার সংহতি। কলকাতার বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম ‘প্রার্থনা’। মায়ের কাছে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা। বাবুবাগান সর্বজনীনের থিম এবার করোনা জয়ের আহ্বান। যোধপুর পার্কের থিম এবার করোনার আবহে পরস্পরের পাশে থাকা। বরাহনগরের দাদাভাই সংঘ এবার সাম্যবাদকে থিম করেছে।

ত্রিধারা সম্মিলনীর পূজা প্যান্ডেলে নানা উপাদানের সম্মিলন

অন্যদিকে, কলকাতার সল্টলেকের এ কে ব্লকের থিম মৌসুমি শ্রমিকদের দুর্দশা। এ ই ব্লকের থিম এবার ‘মানবিকতার বন্ধন’। আর এফ ডি ব্লকের থিম শিশুদের জঙ্গল বুক। থাকছে মোগলি।