Thank you for trying Sticky AMP!!

নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নোটিশ পাঠাল কমিশন, তবে মোদির নাম নিল না

ভারতে কয়েক দিন ধরে সবার নজর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে। নির্বাচনী প্রচারে ঘৃণা ভাষণ ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেয় কি না, কিংবা নিলেও কেমন, সেদিকেই নিবব্ধ ছিল মানুষের দৃষ্টি।

আজ বৃহস্পতিবার কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে জবাব তলব করে নোটিশ পাঠাল। তবে তা পাঠানো হলো বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে। লক্ষণীয়, দুই পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে ইসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি!

তবে শুধু বিজেপি সভাপতিই নন, ইসি একই বিষয়ে চিঠি দিয়েছে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপির আনা আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে। সেই চিঠিতেও ইসি রাহুলের নাম করেনি।

ইসি দুই দলের সভাপতিকেই বলেছে, নির্বাচনবিধি রক্ষার ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ‘স্টার ক্যাম্পেনারদের’ ভাষা সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত বলে দুই দলের সভাপতিকে নির্বাচনী নীতিজ্ঞানের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে।

মোদি ও রাহুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে দলের সভাপতিদের বক্তব্য ২৯ এপ্রিল (সোমবার) বেলা ১১টার মধ্যে জানাতে হবে। সেই নির্দেশ দিয়ে ইসি দুই নেতার বিরুদ্ধে দাখিল হওয়া অভিযোগের প্রতিলিপি চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল কংগ্রেস, সিপিআই ও সিপিআই (এমএল), রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি।

সেই সঙ্গে চিঠিতে দুই সভাপতিকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন দলের তারকা প্রচারকদের কঠোরভাবে আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেন। সে বিষয়ে তাঁরা যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অনেক অভিযোগ আনা হয়েছিল। ইসি এই প্রথম কোনো অভিযোগ নজরে এনে নোটিশ পাঠাল। এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় যেসব অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেগুলোর কোনোটাই বিধিভঙ্গ করেনি বলে ইসি মনে করেছিল। যদিও সেই সময়ের অন্যতম কমিশনার অশোক লাভাসা ভিন্নমত দিয়েছিলেন। তারপর তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আয়কর–সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত হয়েছিল।

প্রথম দফার ভোটের পর প্রথমে রাজস্থানের বাঁশবাড়া ও পরে উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের জনসভায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মোদি বলেন, ওই দলটা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, ক্ষমতায় এলে তারা দেশের মানুষের কষ্টার্জিত সম্পত্তি দখল করে মুসলমানদের মধ্যে বিলি–বাঁটোয়ারা করে দেবে। এই অভিযোগ করার সময় প্রধানমন্ত্রী মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলেন।

মোদি আরও বলেন, তারা শুধু বেশি বেশি বাচ্চার জন্ম দেয়। তিনি এ কথাও বলেন, মা-বোনদের গলা থেকে মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়ে কংগ্রেস তা মুসলমানদের বিলিয়ে দেবে। ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দেওয়া এক ভাষণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলমানেরাই দেশের সম্পত্তির প্রথম দাবিদার। জনসভায় উপস্থিত শ্রোতাদের মোদি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কংগ্রেসকে এমন করতে দেবে কি না।

কংগ্রেস, সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) দলের অভিযোগ, মিথ্যা প্রচার ও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে নরেন্দ্র মোদি ভোট চাইছেন। সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে।

কংগ্রেসের ইশতেহারে মুসলিম লিগের ছায়া আছে বলেও মোদি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দেওয়ার ভাবনা মাওপন্থী ও শহুরে নকশালদের মতো।

মোদির বিরুদ্ধে ইসির কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল ২১ এপ্রিল। আর রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগ করেছিল ১৯ এপ্রিল। দুই অভিযোগকেই ইসি একসূত্রে গেঁথে নোটিশ পাঠায়। বিজেপি আপত্তি জানিয়েছিল কেরালার কোট্টায়ামে ১৮ এপ্রিল এক জনসভায় দেওয়া রাহুলের ভাষণের বিরুদ্ধে।

ওই রাজ্যে কংগ্রেস নেতা বলেছিলেন, ‘কেরালায় কোনো মেয়ে স্নাতক হলে তার মা–বাবা তাকে মালয়ালম ভাষায় অভিনন্দন জানায়। ভাই ভাইকে হারালে মালয়ালম ভাষায় ভাবের আদান–প্রদান করে। এর অর্থ কেরালা মানে মালয়ালম, মালয়ালম মানে কেরালা। আমি অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি প্রধানমন্ত্রী এক দেশ, এক ভাষা, এক ধর্মের কথা বলেন। কী করে তামিল জনতাকে বলা যায় তামিল ভাষায় কথা বোলো না কিংবা কেরালার মানুষকে মালয়ালম ভাষায় কথা না বলতে?’

রাহুল বলেছিলেন, প্রতিটি ভাষাই জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বিজেপি সব সময় বিভাজন করে। ভাষা নিয়ে, জায়গা নিয়ে, জাত নিয়ে, ধর্ম নিয়ে। যখনই সুযোগ পায়, দেশে তারা ভাগাভাগি সৃষ্টি করে।

বিধিভঙ্গের অভিযোগে এই প্রথম নেতাকে নোটিশ না ধরিয়ে দলের সভাপতিকে জবাবদিহি করতে বলল ইসি। বিরোধীরা মনে করছে, এটাও মেরুদণ্ডহীন ইসির প্রমাণ। কয়েক দিন আগেই যদিও কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে ও বিজেপির দিলীপ ঘোষকে ইসি সরাসরি বিধিভঙ্গের নোটিশ পাঠিয়েছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালাকে ৪৮ ঘণ্টা প্রচার না করার শাস্তি দিয়েছিল।

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই প্রসঙ্গে ইসির সমালোচনা করে আজ বৃহস্পতিবার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (অমিত শাহ) ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ‘সুপার কনশাস’। অর্থাৎ প্রবল সাবধানী। আর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তারা ‘সুপার সুপার কনশাস’!

মোদিকে খাড়গের চিঠি

কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরব হওয়ার দিনেই মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। কংগ্রেসের ইশতেহারে ঠিক কী লেখা আছে, সে বিষয়ে তাঁকে শিক্ষিত করতে চান। আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লিখে তিনি সেই আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মোদির সরকারকে ‘সুট বুট কি সরকার’ বলে বর্ণনা করে খাড়গে চিঠিতে লিখেছেন, ‘চাকরিজীবীরা আয়কর দিয়ে যায় আর আপনি শিল্পপতিদের কর মওকুফ করেন। গরিবদের খাবার, লবণ কিনতেও জিএসটি দিতে হয়, আর আপনি ধনী শিল্পপতিদের জিএসটি ফেরত দেন। ধনী–দরিদ্রের এই বৈষম্যের কথাই আমরা বলি, আর আপনি তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দু-মুসলমানের রং চড়ান। আমাদের ইশতেহার ভারতের জনগণের জন্য, তারা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন বা পারসি যেই হোন।’

খাড়গে চিঠিতে লিখেছেন, ‘আজ আপনি মঙ্গলসূত্র কাড়ার কথা বলছেন। অথচ আপনার সরকারই মণিপুরের নারীদের অত্যাচারের জন্য দায়ী। দলিত নারীদের অত্যাচার করেছে, ধর্ষকদের মালা পরিয়েছে আপনার দলই। কৃষকেরা যখন আত্মহত্যা করছিলেন, তাঁদের স্ত্রী–কন্যাদের আপনি কি রক্ষা করেছিলেন? অনুগ্রহ করে আমাদের ইশতেহার পড়ুন। ন্যায়পত্র পড়ুন। নারী ন্যায় কীভাবে করা হবে জানুন। আমরা ক্ষমতায় এলে এই ন্যায়ই প্রতিষ্ঠা করব।’

কটাক্ষ করে খাড়গে লিখেছেন, ‘সামগ্রিক থেকে একটা দুটো শব্দ বেছে নিয়ে সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি ছড়ানো প্রধানমন্ত্রীর অভ্যাস হয়ে গেছে। এ ধরনের কথা বলে আপনি প্রধানমন্ত্রীর আসনের মর্যাদা নষ্ট করেছেন। সবকিছু মিটে গেলে মানুষ বুঝবে, ভোটে হারার আশঙ্কায় দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছিলেন।’

মোদির সমালোচনা করায় নেতাকে বহিষ্কার

রাজস্থানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর তার প্রতিবাদ করেছিলেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা ওসমান গনি। ওই ভাষণ ‘অনভিপ্রেত’ বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। সেই অপরাধে বিজেপি আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

বিজেপির অভিযোগ, গনি দলের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করতে চাইছিলেন। গত মঙ্গলবার এক টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে গনি বলেছিলেন, মুসলমানদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা কাম্য নয়। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, গতবারের মতো এনডিএ এবার রাজস্থানের ২৫টি আসন জিততে পারবে না।