Thank you for trying Sticky AMP!!

পুলওয়ামা হামলা: সরকারের ভুল চেপে যেতে বলেছিলেন মোদি

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জওয়ান নিহত হন

আদানি–কাণ্ডের মতো কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলা নিয়েও চুপ বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারকে সরাসরি দায়ী করা হলেও সরকার বা শাসক দল এখনো একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। এ অভিযোগ কোনো বিরোধী দলের নয়। অভিযোগকারী বিজেপিরই নেতা সত্যপাল মালিক, মোদি সরকারই তাঁকে জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যপাল নিযুক্ত করেছিল। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯–এর অক্টোবর পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সত্যপাল মালিকের এ মারাত্মক অভিযোগের পর চার দিন কেটে গেছে। বিজেপি নিযুক্ত জম্মু–কাশ্মীর, গোয়া ও মেঘালয় রাজ্যের এই সাবেক রাজ্যপাল এখনো দলীয় সদস্য হিসেবে বহাল আছেন। তাঁর গুরুতর অভিযোগ নিয়ে এখনো টুঁ শব্দ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা দলের কোনো পদধারী ব্যক্তি। অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতিও দেননি কেউ। তবে এর মধ্যে কংগ্রেস দাবি করেছে, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে সরকার অবিলম্বে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।

কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রোহিত চৌধুরী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার অনুমা আচার্যও মঙ্গলবার এ দাবি জানিয়ে বলেছেন, কীভাবে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা হলো, গোয়েন্দা ব্যর্থতা কোথায়, কেন আড়াই হাজার জওয়ানকে সড়কপথে গাড়িবহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কার গাফিলতিতে মাত্র পাঁচটি বিমান মঞ্জুর করা হয়নি, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভূমিকা কী ছিল—সবকিছু জানিয়ে সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।

শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে ‘জালিয়াতি ও কারচুপি’ করে সম্পদ বৃদ্ধির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, যা নিয়ে দেশ এখনো উত্তাল, দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সে বিষয়ে পার্লামেন্ট অথবা বাইরে সরকার কিংবা বিজেপি কোনো মন্তব্য করেনি। সত্যপাল মালিকের অভিযোগটি তার তুলনায় মাত্র চার দিন পুরোনো।

বিজেপির এই নেতা সাংবাদিক করণ থাপারকে ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ১৬ এপ্রিল। দীর্ঘ এক ঘণ্টার ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পুলওয়ামা–কাণ্ডের দায় পুরোপুরি সরকারের। তিনিও এ দায় থেকে মুক্ত নন। কারণ সেই সময় তিনিই ছিলেন রাজ্যপাল এবং সরকারের অংশ। সত্যপাল বলেন, আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ পাঁচটি উড়োজাহাজ চেয়েছিল জওয়ানদের স্থানান্তরের জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা মঞ্জুর করেনি। ফলে সড়কপথে গাড়িবহর নিয়ে যেতে হচ্ছিল। এভাবে যেতে গেলে যে সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, তা করা হয়নি। সেনাবহর চলাচলের সময় সংযোগকারী রাস্তাগুলো বন্ধ করে রাখা হয়নি। অথচ গোয়েন্দাদের কাছে নাশকতার খবর ছিল। ৩০০ কেজি আরডিএক্স বিস্ফোরক কী করে রাজ্যে ঢুকল, তা বিস্ময়। বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি কীভাবে সবার চোখ এড়িয়ে রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তা–ও বিস্ময়ের বলে সত্যপালের মন্তব্য।

সত্যপাল বলেন, বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি সেনাদের বহরে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, সরকারের ভুলে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। বিমান মঞ্জুর করলে এমন হতো না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, লোকজনকে নিজেদের ভুলের কথা বলতে হবে না। সত্যপাল বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও তাঁকে একই পরামর্শ দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে সত্যপাল বলেন, ‘আমি তখনই বুঝেছিলাম বিষয়টা অন্যদিকে ঘোরানো হবে।’

সেটাই হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রচারে প্রধান হাতিয়ার হয়েছিল পুলওয়ামা হামলা এবং তার বদলা হিসেবে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রথমবারের ভোটারদের কাছে জানতে চাইছি, আপনাদের প্রথম ভোট পুলওয়ামার বীর শহীদদের জন্য সমর্পিত হবে কি না।’ মোদির সেই বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে সত্যপাল বলেন, ‘সম্ভবত এ (রাজনৈতিক) কারণেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে চুপ থাকতে বলেছিলেন।’

এ বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে সাবেক রাজ্যপাল ও বিজেপি নেতা আরও অনেক মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন। যেমন দুর্নীতির। যে সরকারের কাছে দুর্নীতি ‘জিরো টলারেন্স’, প্রধানমন্ত্রী বারবার যে কথা বলেছেন ‘আমি খাব (ঘুষ) না, কাউকে খেতেও দেব না’—সেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুর্নীতি যে আদৌ চক্ষুশূল নয়, সত্যপাল তা প্রমাণসহ তুলে ধরেছেন। বলেছেন, রাজ্যপাল থাকাকালে কিছু প্রকল্পের ছাড়পত্রের জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও তাঁকে ফোন করা হতো। দলের বড় নেতারাও তদবির করতেন। দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ৩০০ কোটি রুপি ঘুষের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প দুটি তিনি খারিজ করে দিয়েছিলেন বলে জানান।

কংগ্রেসসহ বিরোধীরা অবশ্য পুলওয়ামা–কাণ্ডকেই নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার করতে চাইছে, যেহেতু বর্তমান সরকার ‘উগ্র জাতীয়তাবাদকে’ নির্বাচনী হাতিয়ার করেছে।

কংগ্রেসসহ বিরোধীদের এ দাবি সহায়ক হয়েছে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জয়ন্ত রায়চৌধুরীর এক মন্তব্যে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক ইংরেজি দৈনিককে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘পুলওয়ামা–কাণ্ডের প্রাথমিক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারেরই। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও সে জন্য সমান দায়ী।’ তিনি বলেন, পাকিস্তান সীমান্তের এত কাছ দিয়ে সড়কপথে এত গাড়িতে করে সেনাদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। উড়োজাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হলে ওই নাশকতা এড়ানো যেত।’

সত্যপাল মালিকের অভিযোগ অথবা অভিযোগের ভিত্তিতে কংগ্রেসসহ অন্য দলগুলোর দাবি নিয়ে বিজেপি ও সরকার চুপ থাকলেও বিজেপির আইটি সেল সত্যপাল মালিককে ‘অকিঞ্চিৎকর’ প্রমাণে উদ্যোগী। তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুল গান্ধী সম্পর্কে করা তাঁর এক পুরোনো মন্তব্য জুড়ে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এক টুইটে বোঝাতে চেয়েছেন, সত্যপালকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদানি–কাণ্ডের মতো পুলওয়ামা নিয়েও দলের নীরবতা বোঝাচ্ছে, বিজেপি ও সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে আছে।