Thank you for trying Sticky AMP!!

বিজেপি ও কংগ্রেস

ইডি সিবিআইয়ের তল্লাশির পর ৩০ প্রতিষ্ঠান বিজেপিকে দেয় ৩৩৫ কোটি রুপি

নির্বাচনী বন্ড প্রথা খারিজ করার সময় সুপ্রিম কোর্ট দেওয়া-নেওয়ার বোঝাপড়া নিয়ে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল শুক্রবার কংগ্রেস সরাসরি সেই বিষয়ে তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা বলেছে, ইডি, সিবিআই বা আয়কর বিভাগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে গুরুতর অভিযোগ এনেছে দুই গণমাধ্যম। সেই অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হোক।

কংগ্রেসের মুখপাত্র ও গণমাধ্যমের ভারপ্রাপ্ত জয়রাম রমেশ গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বিজেপির ‘চাঁদাবাজি’ বা ‘তোলাবাজি’ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। অর্থমন্ত্রীকে লেখা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের চিঠির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেপি জিম্মি করে অর্থ আদায়ের রাজনীতি চালাচ্ছে। সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগের অপব্যবহার করে তারা বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে জবরদস্তি করে টাকা আদায় করছে। তোলাবাজি চলছে।

জয়রাম রমেশ বলেন, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সেসব তথ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া গেছে।

রমেশ বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ৩০টির মতো সংস্থার নাম রয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিজেপি ৩৩৫ কোটি রুপি অনুদান (চাঁদা) নিয়েছে। ১ কোটি নয়, ১০ কোটি নয়, ৩৩৫ কোটি রুপি! এই অনুদান পাওয়ার কথা বিজেপি ঘোষণাও করেছে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেন, কেউ নিয়ম ভাঙলে সরকার নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া বুঝিয়ে দেয়, মূল লক্ষ্যটা কী?

জয়রাম রমেশ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের কাছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছেন। প্রথমত, তিনি জানতে চান, সরকার সব সময় অনুদানসংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে আসছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবর সত্য না মিথ্যা, সে কথা কি সরকার বলবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সরকারি সংস্থার তদন্তের আওতায় থাকা সংস্থা বিজেপিকে চাঁদা দিয়েছে, এই তথ্য তিনি কি অস্বীকার করবেন? তৃতীয়ত, কোনো অন্যায় বা অপরাধ না করে থাকলে এ বিষয়ে আপনারা কি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত মেনে নেবেন?

‘নিউজলন্ড্রি’ ও ‘দ্য নিউজ মিনিট’ নামের দুটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে বিজেপি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে এই ‘দেওয়া-নেওয়া বোঝাপড়া’-সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিজেপি ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ সালের অর্থবর্ষে ৩০টি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ৩৩৫ কোটা রুপি চাঁদা পেয়েছে। প্রতিটি সংস্থার বিরুদ্ধেই ইডি, সিবিআই ও আয়কর বিভাগের তদন্ত চলছিল।

অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বেনুগোপাল লিখেছেন, এর মধ্যে ২৩টি সংস্থা বিজেপিকে দিয়েছে ১৮৭ কোটি ৫৮ লাখ রুপি। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সাল থেকে তল্লাশি শুরুর বছর পর্যন্ত কোনো দিন বিজেপিকে এক টাকাও চাঁদা দেয়নি। অভিযোগ, চারটি এমন সংস্থা রয়েছে, যারা ইডি বা সিবিআই তল্লাশি চালানোর চার মাসের মধ্যে বিজেপিকে ৯ কোটি রুপি চাঁদা দিয়েছে।

বেনুগোপাল লিখেছেন, এসব অদ্ভুত সমাপতন! নির্বাচন কমিশনের নথিতেও এর সত্যতা প্রমাণিত বলে তাঁর দাবি।

তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বেনুগোপালের চিঠিতে এ কথাও বলা হয়েছে, ছয়টি প্রতিষ্ঠান বরাবর বিজেপিকে চাঁদা দিত। এক বছর তারা চাঁদা দেয়নি। সেই বছরেই তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করে। ওই ৩০ সংস্থার বাইরের তিনটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মোদি সরকারের কাছে থেকে অন্যায় সুবিধা আদায় করেছে।

চিঠিতে বেনুগোপাল লিখেছেন, পার্টি তহবিলে দানের নামে এ হলো নির্ভেজাল তোলাবাজি। এই তথ্যাদি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

নির্বাচনী সংস্কার ও কালোটাকা রোখার স্বার্থে নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৮ সালে ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করেছিল। সেই ব্যবস্থা অস্বচ্ছ ও অসাংবিধানিক বলে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তা খারিজ করে দেন।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কারও কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বদলে তাঁকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার অবকাশ (কুইড প্রো কো) থেকে যায়। সেই সন্দেহ নির্মূল করা যায় না।

দুই অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সেই সন্দেহই দৃঢ় করছে। কংগ্রেস সেই কারণেই শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছে। নির্মলা সীতারমণের কাছে জানতে চেয়েছে, তল্লাশি অভিযানের পর বেসরকারি সংস্থাগুলো কেন বিজেপিকে চাঁদা দিচ্ছে, তার কি কোনো সদুত্তর আছে?