Thank you for trying Sticky AMP!!

লেবাননে বিক্ষোভকারীদের দখলে মন্ত্রণালয়

লেবানন-সংকট

বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছিল লেবানন। তার মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১৫৪ জন নিহত, ৫ হাজার জন আহত এবং ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে লেবাননবাসীর চাপা ক্ষোভেরও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তারই প্রকাশ যেন গতকাল শনিবার ঘটল বৈরুতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভকারীদের হামলার মধ্য দিয়ে।

বৈরুতের বন্দরে গত মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গের আঘাতে মূল শহরের অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ব্যালকনি ধসে পড়েছে, দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে। লেবাননের সরকারের তথ্যমতে, বৈরুতের বন্দরে অগ্নিকাণ্ড থেকে সেখানে মজুত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয় ওই দিন। ওই বিস্ফোরক পদার্থগুলো ছয় বছর ধরে বন্দরে মজুত রাখা হলেও তেমন নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনীতির অভিজাত শ্রেণির দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অভিযোগে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিল লেবাননের জনগণ। তার ওপর ভয়ংকর বিস্ফোরণে রাতারাতি ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি এবং রাতারাতি তিন লাখ মানুষের গৃহহীন হয়ে পড়ার ঘটনা সেই ক্ষোভে ঘি ঢেলেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মিছিল করে বৈরুত শহরের প্রাণকেন্দ্রে এসে জড়ো হন। নিরাপত্তা বাহিনীর মনোযোগ যখন সেদিকে, ঠিক তখনই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একদল বিক্ষোভকারী লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। ওই ভবনকে তাঁরা ‘বিপ্লবের সদর দপ্তর’ ঘোষণা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে সামি রাম্মাহ নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা লাউড স্পিকারে ঘোষণা দেন, ‘বিপ্লবের কেন্দ্র হিসেবে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছি। আমরা লেবাননের সচেতন জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সড়কে নেমে আসুন এবং সব দুর্নীতিবাজের বিচার দাবি করুন।’ এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি লেবাননের সরকারকে বর্জন করারও আহ্বান জানানো হয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ছিল। একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘তোমরা দুর্নীতিপরায়ণ ছিলে, এখন তোমরা অপরাধী।’ বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিশোধ নেওয়া অব্যাহত থাকবে।

রিতা (৩৩) নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা (দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিক) আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি: কোনো স্বপ্ন নেই, কোনো ভবিষ্যৎ নেই…কোনো মর্যাদা নেই, অর্থ নেই, আর এখন কোনো ঘরও নেই।’ বিস্ফোরণে রিতার বাড়িও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

লেবাননের পার্লামেন্ট ভবনেও ঢোকার চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। তরুণ বিক্ষোভকারীরা এ সময় পার্লামেন্ট ভবন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মেরেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে লেবাননের শুল্ক কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক বদরি দাহেরও রয়েছেন। বিস্ফোরণের পর প্রতিবাদ হিসেবে লেবাননের পাঁচজন আইনপ্রণেতা পদত্যাগ করেছেন।

লেবাননের এই পরিস্থিতি এমন এক দিনে সৃষ্টি হলো, যার পরদিনই, আজ রোববার দেশটির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায়ে ফ্রান্স ও জাতিসংঘের উদ্যোগে এক ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে আরব লিগ আলাদাভাবে লেবাননকে সহায়তা দেওয়ার ও তদন্তে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, বিস্ফোরণের কারণে বৈরুত বন্দরে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ওই বন্দর দিয়ে দেশটিতে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। এতে বেড়ে যাবে খাদ্যপণ্যের দাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বিস্ফোরণে তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লেবাননের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।