Thank you for trying Sticky AMP!!

তুরস্ক–সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

তুরস্কে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি এলাকা

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ২০ দিন পেরিয়েছে। এখনো গৃহহীন মানুষেরা আশ্রয় খুঁজছেন। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই ভূমিকম্পে গৃহহীন হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পণ্য রপ্তানির কনটেইনারে। আবার অনেকেই এখনো আশ্রয় পাননি। এ পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডি জানিয়েছে, দেশটিতে ৪৪ হাজার ২১৮ জন মারা গেছেন। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৯১৪ জন।

তুরস্কের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি তুলে ধরে এএফএডি জানিয়েছে, সেখানে ৩ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবু টানানো হয়েছে। এ ছাড়া কনটেইনার দেওয়া হয়েছে মানুষের থাকার জন্য। সীমান্তবর্তী ১৩০টি স্থানে এমন থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তবে এরপরও যে অনেকেই আশ্রয় পাননি, তারও উদাহরণ রয়েছে। ওমরান আলসোইদ এমন একজন। তুরস্কের সির্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নার্সিংয়ে পড়েছেন এই তরুণ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সবাই এখনো আশ্রয় খুঁজে পাননি।

ওমরান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ির পাশে একটি বাগানে আমরা আশ্রয় নিয়েছি। এখন সবচেয়ে বেশি সংকট হলো তাঁবুর। ভূমিকম্পের পর এতগুলো দিন পেরিয়েছে কিন্তু এখনো আমরা একটিও তাঁবু পাইনি। তাঁবু আছে, এমন শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব শিবিরে কোনো জায়গা ফাঁকা নেই।’

তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে

অন্যতম হাতায় প্রদেশের আনতাকিয়া শহর। এ শহর থেকে একটি রাস্তা গেছে রেহানলি শহরে। সেখানে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে ২৫ বছর বয়সী ওমরানের পরিবার। তাঁরাসহ ৬০ সিরীয় নাগরিক সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও রয়েছে। প্লাস্টিক, কম্বল ও কংক্রিট দিয়ে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছেন তাঁরা।

হাতায় প্রদেশের এই এলাকার তাপমাত্রা রাতে থাকছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সেখানে বৃষ্টিও হচ্ছে। ফলে কোনোরকমে প্লাস্টিক, কম্বল ও কংক্রিট দিয়ে আশ্রয়স্থল বানিয়ে থাকাটা বেশ দুষ্করও বটে। ওমরান বলেন, তিনি সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে এএফএডি এবং অন্য ত্রাণসহায়তাকারী সংগঠন ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের কাছ থেকে তাঁবু চেয়েছেন। কিন্তু পাননি। তবে একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁদের খাবার ও টয়লেট টিস্যু দিয়ে গেছে। আর শিশুদের জন্য খেলনা দিয়ে গেছে।

আনতাকিয়ার বাইরে কিরিখান শহরের চিত্রও এমন। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা হয় আয়শে নামের এক নারীর। তিনিও তাঁবু পাননি, তবে পলিথিনে ঢাকা একটি সবজির বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন। বলেন, ‘আমরা কোনো তাঁবু পাইনি। তবে এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁদের অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ। আমি চাই তাঁরা আগে তাঁবু পাক।’

ধসে যাওয়া বাড়ি থেকে সোফা এনেছেন আয়শেরা। সোফায় ছেলেমেয়েরা থাকছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে অপেক্ষা করছেন আয়শেরা।

আবারও ভূমিকম্প

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর ১০০টির বেশি পরাঘাত অনুভূত হয়। সর্বশেষ গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের নিগদে প্রদেশের বোর এলাকায় আঘাত হানে। এএফএডি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে সাত কিলোমিটার গভীরে। তবে এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সাংবাদিক গ্রেপ্তার

তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। সর্বশেষ মির আলি কোচে নামের এক সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন মির আলি। তিনি সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভিডিও টুইটারে প্রকাশ করছিলেন। তাঁর কাছে অনেক মানুষই বলেছেন, তাঁরা কোনো সাহায্য পাননি। কিন্তু এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর তিন বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে, এমন সংগঠনগুলো বলছে, ভূমিকম্পের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকেই সেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেককেই আটক করা হয়েছে। তবে তুরস্ক সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।