Thank you for trying Sticky AMP!!

ইমরানের সম্ভাব্য উত্তরসূরি কে এই শাহবাজ

শাহবাজ শরিফ

দীর্ঘ নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরেছেন ইমরান খান। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি পতন হয়েছে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ শরিফ।

শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী। আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল এই জোটের দলগুলোই।

শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির পর জাতীয় পরিষদে বক্তব্য দেন শাহবাজ। এ সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অতীতের তিক্ততায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা তাঁদের ভুলে যেতে চাই ও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা প্রতিশোধ নেব না ও অবিচার করব না।’

Also Read: ইমরান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ যে আদেশ দিয়েছিলেন

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন শাহবাজ। তবে আগে থেকেই দেশের ভেতরে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য তাঁর সুনাম ছিল। তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই।

Also Read: কত দিন টিকলেন ইমরান

৭০ বছর বয়সী শাহবাজের জন্ম লাহোরে। ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের এই সন্তানের পড়াশোনা পাকিস্তানেই। পড়াশোনা শেষে পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে পাকিস্তানের একটি ইস্পাত কারখানায় যৌথ মালিকানা রয়েছে তাঁর।

শাহবাজের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৯৭ সালে, পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৯৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে কারারুদ্ধ হন তিনি। পরের বছরেই সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানো হয় তাঁকে।

Also Read: ইমরানকে সরানোর পেছনে কারা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর ২০০৭ সালে নিজ দেশে ফিরে আসেন শাহবাজ। আবার পা রাখেন রাজনীতিতে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে ফের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তৃতীয় মেয়াদে শাহবাজ প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে।

Also Read: প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন ইমরান

শাহবাজ জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখেন তাঁর ভাই নওয়াজ শরিফ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে পাকিস্তান ত্যাগের পর। এরপর তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতির দায়িত্ব পান। তবে নওয়াজের বিরুদ্ধে ওই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলে দাবি করে আসছে তাঁর পরিবার ও সমর্থকেরা।

Also Read: সেনাপ্রধান বাজওয়াকে কি সরাতে চেয়েছিলেন ইমরান

নওয়াজ ছাড়াও শাহবাজের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি মামলা হয়েছে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও মামলার মুখে পড়েছেন তিনি। তবে সেসব মামলায় শাহবাজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।

এদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্কের দিক দিয়ে ভাই নওয়াজের চেয়ে শাহবাজ আলাদা বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের ভাষ্য, শাহবাজের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর এ দেশটিতে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নীতিতে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর।

Also Read: নতুন সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না: শাহবাজ

পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার পতনেও দেশটির সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার দেশটিতে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী। এমনকি পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই এখন পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকের মতে, শাহবাজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে তাঁকে খুব শিগগিরই একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে চরম সংকটে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতি সামাল দেওয়া। বিরোধীরা ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পেছনে একটি কারণ দেখিয়েছিল এই আর্থিক দুরবস্থাকেই।

এ ছাড়া শাহবাজ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, তাঁকে কাজ করতে হবে জোট সরকারের অন্য দলের দাবি ও মতামতকে সঙ্গে নিয়ে।

Also Read: অতীতের ভুলের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে: ইমরান খান