Thank you for trying Sticky AMP!!

পাকিস্তানের গুহাবাসীদের গল্প

আমির উল্লাহ খান (খাটে বসা) বন্ধুর সঙ্গে গল্পে মজেছেন। নিক্কো গ্রাম, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৬ নভেম্বর। ছবি: এএফপি

এ যুগেও গুহাবাসী আছেন? প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ। এই গুহাবাসীরা থাকেন পাকিস্তানে। দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে। গ্রামের নাম হাসান আবদেল। নিক্কা নামের আরও একটি গুহা গ্রাম আছে। বোমা হামলা থেকে নিরাপদ, ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং দামে বেশ সস্তা হওয়ায় গুহাবাড়িতে মানুষের বাস বাড়ছে।

এমনিতেই আবাসন–সংকটের কারণে সমস্যায় আছেন পাকিস্তানের নিম্ন আয়ের মানুষ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আবাসন–সংকট সমাধানে কাজ করার কথা বলেছেন। তবে জীবনের প্রয়োজনে জীবনধারণের উপায় করে করে নিয়েছেন পাকিস্তানের মানুষ। হাসান আবদেল গ্রামে হাজার তিনেক মানুষের বাস। মাটির নিচে গুহা বানিয়ে তৈরি করা বাড়িতে এঁরা থাকেন। এসব গুহাবাড়ি আবার বিক্রিও হয়। অনেকেই বাড়ি তৈরি করে কেনাবেচা করেন। গুহাবাড়ির আঙিনায় সবজির চাষও করেন অনেকে। আবার প্রয়োজনে গবাদিপশুও আছে অনেক বাড়িতে।

পাকিস্তানের নিক্কো গ্রামের একটি গুহায় এই শিশু। ছবি: এএফপি

হাসান আবদেল গ্রামের কাউন্সিলর হাজি আবদুল রশীদ এএফপিকে বলেন, এসব বাড়িকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বুরাই’।

বুরাইগুলো এক বা দুই কামরার। কোনো কামরার জানালা থাকে। তবে কোনো কোনো গুহাবাড়িতে জানালা থাকে না। অনেক বাড়িতে আছে বিদ্যুৎ, তবে সংখ্যায় কম। সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই বিদ্যুৎ–সংযোগ নিতে পারেন না। এলাকার মজুরেরাই কোদাল–শাবল চালিয়ে গুহা কেটে ঘর বানান। পরে দেয়ালে কাদা দিয়ে ভালোভাবে লেপে দেওয়া হয়। গুহার বাসিন্দারা বলেন, ঘরে ঠিকমতো মেরামত করলে ভূমিধসেও বাড়ির কোনো ক্ষতি হয় না। আবদুল রশীদ বলেন, ‘এমন বাড়ি আর কোথাও পাবেন না। ধরুন, আপনি একটি মাটির ঘর বানালেন। প্রবল বৃষ্টিতে সেটি ধসে যেতে পারে। কিন্তু এই বাড়ি বৃষ্টিতে কিছুই হবে না। বোমা পড়লেও ক্ষতি হয় না। ভূমিকম্প থেকেও নিরাপদ এসব বাড়ি।’

গুহাবাড়ির আঙিনায় আছে গবাদিপশু। ছবি: এএফপি

হাসান আবদেল গ্রামের এলাকাটি পত্তন হয় মোগল শাসনের সময়। এরপর প্রায় ৫০০ বছর ধরে এখানকার বাসিন্দারা গুহাবাড়িতে বাস করে আসছেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব বাড়ি ও শহরাঞ্চলের বাড়ির দামে বেশ পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় গুহাবাড়ির দিকে সবার নজর পড়েছে। গৃহহীন অনেকেই ছুটছেন এই গ্রামে। কয়েক হাজার রুপি হলেই এখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে।

আমির উল্লাহ খান নামের একজন বাসিন্দা বললেন, ‘আমরা এসব গুহাবাড়ি কিনি কারণ এগুলো দামে বেশ সস্তা। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে নিজেরাই এসব বাড়ি নির্মাণ করতে পারেন।’

গুহার ঘরগুলো বেশ সাজানোগোছানোই। শিশুরা বই পড়ায় ব্যস্ত। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ের গুহাবাসীরা নানান কারণে এসব বাড়ির গুণগান করে থাকেন। পাকিস্তানের আবহাওয়ায় এসব বাড়ি বেশ আরামদায়ক। গ্রীষ্মে দেশটির আবহাওয়া ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায় তখন গুহাবাড়িগুলো থাকে বেশ ঠান্ডা। আর প্রচণ্ড শীতের সময় এসব থাকে উষ্ণ।

মুহাম্মদ সোহাইল নামে এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘বছরের গ্রীষ্মের সময়টা এখানেই কাটাই। বাকি সময়টা অন্যখানে কাটালেও গ্রীষ্মের শুরুতেই অনেকেই চলে আসেন হাসান আবদাল গ্রামে। গ্রীষ্মটা গুহাবাড়িতেই আরামে কাটে। এ ছাড়াও এই গ্রামে গম, ভুট্টা, যবের চাষ করি।’

কোনো কোনো গুহাবাড়িতে আছে বিদ্যুৎসহ নানান সুযোগসুবিধা। ছবি: সংগৃহীত

এত কিছু শুনে গুহাবাড়িগুলো বেশ আরামের মনে হতে পারে। এখানে সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। বাড়িগুলোতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় না। টিভি চালাতে কিংবা মোবাইলে চার্জ দিতে বিদ্যুৎ–সংযোগের ক্ষেত্রেও অনেক ঝামেলা। বাড়িতে পানি সরবরাহও নেই।

এসব অসুবিধার পরও গুহার দিকে ঝুঁকছে মানুষ। কারণ, এক একটি গুহাবাড়ি ৪০ হাজার রুপির মধ্যই মেলে। সেখানে একই ধরনের ইটের একটি বাড়ির দাম শুরু হয় আড়াই লাখ রুপি থেকে। এলাকাবাসী বলছেন, অন্য গ্রামের চেয়ে এসব গুহাবাড়ি সস্তা।

আবাসন ব্যবসায়ী এজেন্ট সাখি রিয়াজ এএফপিকে বলেন, পাকিস্তানের নিভৃত কোনো গ্রামেও জমি কিনে যদি বাড়ি বানানো যায়, তবে কমপক্ষে ৫ লাখ রুপি আপনার হাতে থাকতে হবে।

গুহাবাসী জীবনধারণের জন্য কৃষিকাজ, গবাদিপশু লালনপালন করেন। ছবি: এএফপি