Thank you for trying Sticky AMP!!

কলম্বিয়ায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার

রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার সদস্যরা

২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়ায় সেনাবাহিনীর হাতে ৬ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর এই হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের বিদ্রোহী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

৬ বছরে সেনাবাহিনী ও দেশটির বামপন্থী বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ঘটিত অপরাধ বিশেষ আদালত তদন্ত করে দেখতে পান, এ সময় ৬ হাজার ৪০২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ফারস বিদ্রোহী ও সরকারের মধ্যকার এক শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে এ সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে। এ চুক্তির অংশ হিসেবে এ তদন্ত শুরু হয়। স্পেশাল জুরিডিকশন ফর পিস (জেইপি) এই তদন্ত করে।

কলম্বিয়ার সেনাসদস্যরা মূলত গরিব ঘরের তরুণদের ধরে এনে হত্যা করতেন। এটাকে ‘ফলস পজিটিভ’ নামে অভিহিত করা হয়। কারণ, সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার সদস্যদের নিধনের সংখ্যা বাড়ানো এবং এর মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলায় নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। এ জন্যই তারা সাধারণ লোকজনকে জোর করে ধরে এনে বিদ্রোহী নাম দিয়ে হত্যা করত।

জেইপি হলো ক্রান্তিকালীন আদালত। এটি ১০ বছরের জন্য গঠিত করা হয়। এর কাজ হলো সংঘর্ষে জড়িত সব পক্ষকে তদন্তের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা।
আদালত জানান, অপরাধীদের মধ্যে যাঁরা নিজে থেকে অপরাধ স্বীকার করবেন তাঁদের কারাভোগ করতে হবে না। কিন্তু তাঁদের এই সাজার অংশ হিসেবে মাটির নিচে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণ, মূল অবকাঠামো তৈরি বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ—এ ধরনের কাজ করতে হবে।

আদালত ফারস বিদ্রোহীদের দ্বারা অপহরণের ঘটনা তদন্ত করার পর এখন ফলস পজিটিভ ও সরকারি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের দিকে নজর দিয়েছেন।

কলম্বিয়ার পাবলিক প্রসিকিউটর দপ্তর থেকে গত বছর জেইপিকে দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয় ১৯৮৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২ হাজার ২৪৯ জন ফলস পজিটিভ হত্যার শিকার হয়েছেন। তদন্তদল দাবি করে, প্রকৃত সংখ্যা এর তিন গুণ। তারা জানায়, ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইভারো ইউরিবির সময় বেশি ফলস পজিটিভ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

২০০৮ সালে ফলস পজিটিভসের বিষয়টি সামনে এলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ১৯৮০–এর দশক থেকে চলছে। এসব হত্যার দায়ে ১ হাজার ৭০০–এর বেশি মানুষকে দণ্ডিত করা হয়েছে।

সেনাসদস্যরা কয়েকটি মামলায় আদালতের কাছে গত দশকের কিছু তথ্যপ্রমাণ হাজির করেন। হত্যার হার বাড়াতে তাঁদের ঊর্ধ্বতনেরা কীভাবে তাঁদের চাপ দিয়েছেন, তা জানিয়েছেন। আর পদোন্নতি বা অতিরিক্ত ছুটিসহ কীভাবে তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, তা-ও তাঁরা জানিয়েছেন।

একটি মামলায় আট সেনাসদস্যকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চার কৃষককে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে এনে পেছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করে বিদ্রোহী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। গরিব এলাকাগুলো থেকে তরুণদের চাকরি দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানী বোগেতো এনে হত্যা করা হতো এবং বিদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করা হতো।

জেইপি জানায়, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে সংখ্যা পাওয়া গেছে, তা থেকে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।