Thank you for trying Sticky AMP!!

লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

লুলার বক্তব্যের পর ব্রাজিলের ওপর চড়াও ইসরায়েল

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের (ইহুদিনিধন) সঙ্গে তুলনা করার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ব্রাজিল ইসরায়েলে নিযুক্ত তাদের কূটনীতিককে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল লুলাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত) ঘোষণা করেছে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত ‘কোনো যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা’। তিনি এই সংঘাতকে জার্মান নাৎসি নেতা ‘হিটলারের ইহুদিনিধনের সিদ্ধান্তের’ সঙ্গে তুলনা করেন।

ইসরায়েলের কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, লুলা ‘সীমা অতিক্রম’ করেছেন। তাঁর সরকার গতকাল সোমবার সে দেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতকে জেরুজালেমে ইয়াদ ভাসেম হলোকাস্ট স্মৃতিকেন্দ্রে ডেকে পাঠিয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।

কাৎস লুলার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার না করায় বা ক্ষমা না চাওয়ায় তাঁকে ইসরায়েলে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হলো।

ইসরায়েলের পদক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই দিন ব্রাজিলে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের নিযুক্ত তাদের দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকেছে। ইসরায়েল সরকারের পদক্ষেপকে গুরুতর বলে ব্রাজিল সরকার মনে করছে।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত আজ মঙ্গলবারই দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

জি-২০ বৈঠক

প্রবীণ বামপন্থী নেতা লুলা (৭৮) গ্লোবাল সাউথে সব সময় উচ্চকিত কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁর দেশ বর্তমানে জি-২০-এর সভাপতির পদে আছে।

ইসরায়েলকে নিয়ে লুলা এমন এক সময় এমন মন্তব্য করলেন, যখন তাঁর দেশ কাল বুধবার থেকে দুই দিনব্যাপী জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজন করছে। রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টলি ব্লিঙ্কেন, রুশ প্রেসিডেন্ট সের্গেই লাভরভসহ জি-২০-এর অন্যান্য সদস্যদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। গাজা সংঘাত নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে গতকাল পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৬০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তারা প্রায় আড়াই শ লোককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যায়।

রাজনৈতিক বিভক্তি

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা এটিকে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন।

তবে এরপর গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরু হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরব হন ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট।

সর্বশেষ ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে লুলা ইসরায়েল নিয়ে মন্তব্য করার পর ইসরায়েলপন্থী সংগঠনগুলো তাঁর সমালোচনা শুরু করে। ব্রাজিল-ইসরায়েল ইনস্টিটিউট তাঁর বক্তব্যকে ‘অমার্জিত’ বলে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে, তাঁর বক্তব্য ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ উসকে দিতে পারে।

আরেক ইসরায়েলপন্থী প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি কনফেডারেশন অব ব্রাজিল লুলার বক্তব্যকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত বিকৃত’ বক্তব্য বলে উল্লেখ করে। তারা বলছে, তাঁর বক্তব্য হলোকাস্টের শিকার ব্যক্তি ও তাঁদের উত্তরসূরিদের জন্য অবমাননাকর।

বলা হয়ে থাকে, হলোকাস্টের সময় জার্মানির তৎকালীন নেতা হিটলার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইহুদিদের এক-তৃতীয়াংশ বলে ধারণা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নতুন ইসরায়েল রাষ্ট্রে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ইহুদিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

লুলার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন তাঁর প্রতিপক্ষ রক্ষণশীলেরাও। অবশ্য ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এসব রক্ষণশীল দলও ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত।

উগ্র ডানপন্থী নেতা সাবেক ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারো এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘লুলা শুধু ইতিহাসকে উপেক্ষা করেননি, তিনি বিশ্বের কাছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর ঘৃণার বহিঃপ্রকাশও ঘটালেন।’

তবে রাজনৈতিক মিত্ররা এ ঘটনায় লুলার পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির (পিটি) দীর্ঘদিনের সদস্য ও ফার্স্ট লেডি জানজা দা সিলভা বলেন, লুলার মন্তব্যে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার কথা উঠে এসেছে। এই সংঘাতে সবচেয়ে বেশি হতাহতের শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।

ফার্স্ট লেডি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘লুলার বক্তব্য গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে, ইহুদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়।’