Thank you for trying Sticky AMP!!

অনলাইনে ক্লাস চললে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে

আসন্ন সেমিস্টারের ক্লাস পুরোপুরি অনলাইনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমন ঘোষণা যদি অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও আসে, তাহলে বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ছবি: রয়টার্স

আসন্ন শরৎ সেমিস্টার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি পুরোপুরি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। এ ছাড়া সেখানে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসাও দেওয়া হবে না। গতকাল সোমবার ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক বিপদে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের হিসাবমতে, দেশটিতে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন ক্লাসকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে বলছে আইস।

এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে আইস বলেছে, ‘পুরোপুরি অনলাইনে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অংশ নেওয়া নন-ইমিগ্রান্ট এফ-১ এবং এম-১ শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ অনলাইন কোর্সের বোঝা নিতে পারে না এবং যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া সক্রিয় শিক্ষার্থীদের অবশ্যই দেশ ত্যাগ করতে হবে অথবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন আইনিভাবে থাকতে হলে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে নির্দেশনা নেওয়া যাবে সেখানে স্থানান্তর হতে হবে। যদি তা না হয় তবে শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন করা হবে।’

আইস বলেছে, আসন্ন শরৎ সেমিস্টারে সম্পূর্ণ অনলাইনে চলা স্কুল এবং প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে না মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগও এই শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।

আইসের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে একাডেমিক কোর্স করতে আসা শিক্ষার্থীরা এফ–১ ভিসা এবং কারিগরি কোর্স করতে আসা শিক্ষার্থীরা এম–১ ভিসা নিয়ে আসে। এই ভিসাধারীদের জন্যই এখন শঙ্কার দিন শুরু হলো। এখনো অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শরৎকালীন (ফল) সেমিস্টারের জন্য তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আসন্ন সেমিস্টারের ক্লাস পুরোপুরি অনলাইনে নেবে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি স্কুল ব্যক্তিগত ও অনলাইন দু প্ল্যাটফর্মের সমন্বিত একটি মডেলের দিকে নজর দিচ্ছে। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি অনলাইনেই ক্লাস পরিচালনা করবে। হার্ভার্ড বলেছে, তাদের স্নাতক পর্যায়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে আসতে দেওয়া হবে। তবে সবার জন্যই থাকবে অনলাইন নির্দেশনা।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা ইনস্টিটিউট (আইআইই) অনুসারে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক মিলিয়নেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মার্কিন অর্থনীতিতে ৪৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় চীন থেকে। এর পরের অবস্থানগুলোয় রয়েছে, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও কানাডা।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনেক বাধা পার হতে হয়। নানা যাচাই–বাছাইয়ের পর শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পেয়ে থাকে। আর মার্কিন আইনে অনলাইন–কোর্সের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসা ও অবস্থান করাটা নিষিদ্ধ। এই বিষয়টিকেই এখন কাজে লাগাচ্ছে আইস।

এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভ্যালেরিয়া মেন্ডিওলা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘ভীষণ রকম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা ভীষণ হতাশাজনক। আমার পক্ষে নিজ দেশ মেক্সিকোতে ফিরে যাওয়া সম্ভব। তবে অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই এটা সম্ভব নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড ফার্নসওয়ার্থ বলেন, ‘অন্য অনেকের মতো এ ঘোষণায় আমিও বিস্মিত হয়েছি।’ প্রায় ১৮০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করা এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফার্নসওয়ার্থ বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, এটি আরও বেশি সংশয় ও অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে। আমরা আশা করেছিলাম বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংকট মোকাবিলায় বিকল্প পথ হিসেবে যেসব পন্থা বের করছে, তাকে উৎসাহ দেওয়া হবে।’