Thank you for trying Sticky AMP!!

অভিবাসন নীতির প্রভাব পড়বে মধ্যবর্তী নির্বাচনে?

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গত দুই বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ থেকে শুরু করে শরণার্থী নিষেধাজ্ঞা, ছয় মুসলিম দেশের অভিবাসীদের আমেরিকায় প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা, তরুণ অভিবাসীদের জন্য বিশেষ প্রকল্প ডাকা বাতিল, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) পুলিশের জনবল ও তৎপরতা বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব পদক্ষেপের প্রতি রিপাবলিকান দল প্রেসিডেন্টকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। বিপরীতে ডেমোক্রেটিক দল বারবার অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে

সোচ্চার থেকেছে। ফলে আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুই দলের এই সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীরা অভিবাসন সম্পর্কিত বিষয়টিকেই সামনে আনছে। সীমান্তে আটক অভিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো অমানবিক বিষয়গুলোকে তুলে ধরছেন ডেমোক্র্যাটরা। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনাকে বিরাট অপচয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে আসছে নির্বাচনে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া অভিবাসন ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন পদক্ষেপই ফল নির্ধারণী ভূমিকা নিয়ে নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পলিটিফ্যাক্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নির্বাচনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তারই একটি হিসাব দিয়েছে সম্প্রতি। প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচনে পাঁচটি সিদ্ধান্ত ও সেগুলোর প্রভাব পর্যালোচনা করেছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে আটকের ঘটনা বৃদ্ধি
সীমান্তে আটক বা গ্রেপ্তার সংখ্যাকেই (অ্যাপ্রিহেনশন নম্বর) অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা নির্ধারণে একটি মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সীমান্তে কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা মাত্রই যে আটক করা হয়, তার সংখ্যাকেই এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই সংখ্যাকে একেকজন একেকভাবে মূল্যায়ন করেন। কারও মতে, এ সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে সীমান্তরক্ষীরা যথাযথভাবে কাজ করছে। আবার কারও মতে, এ সংখ্যা কম হওয়াটাই ভালো। কারণ সংখ্যা কম মানে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে মূল জায়গাতেই প্রশাসন কাজ করছে।
বর্তমানে আটকের সংখ্যা ২০০০ সালের গোড়ার সময়ের কাছাকাছি। ২০০০ সালে আমেরিকার সীমান্তে আটকের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ। ২০০৩ সালে এটি কমে ৯ লাখ ৫ হাজারে আসে। ২০০৫-০৬ সালে এ সংখ্যা আবার বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে ২০১১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা কমতে থাকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে গড়ে এই সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের আশপাশে। ২০১৭ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আটক সংখ্যা কম থাকাকে নিজের কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করেন। যদিও ওই অর্থবছরের প্রথম চার মাস ছিল বারাক ওবামা প্রশাসনের আওতায়। ওই বছরে এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৩১, যা ১৯৭১ সালের পর সর্বনিম্ন। কিন্তু ট্রাম্প ঘোষিত এই কৃতিত্ব পরের বছরে বদলে যায়। শেষ হওয়া ২০১৮ অর্থবছরে এ সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেল-খ্যাত গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর থেকে। এই অভিবাসন স্রোত থামানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত কৌশল কাজে আসেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ বিষয়ে উইলসন সেন্টারের আওতাধীন মেক্সিকো ইনস্টিটিউটের র‍্যাচেল শমিদকে বলেন, ‘অভিবাসন রোধে অনুসৃত চিরাচরিত পন্থা তরুণ, পুরুষ ও মেক্সিকোর অভিবাসীদের ঠেকাতে পারলেও তা নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেল থেকে আসা অভিবাসীদের আটকাতে পারেনি।’

অভিবাসন আদালতে জট
অভিবাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন মামলা, আবেদন ও প্রশাসনিক শুনানির এখতিয়ার আমেরিকার বিচার বিভাগের অধীন অভিবাসন পর্যালোচনার নির্বাহী কার্যালয়ের (ইওআইআর)। বর্তমানে এই অভিবাসন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০০৮ সালে অপেক্ষাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার। চলতি বছর এ সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এত বড় জটের জন্য অভিবাসন বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মী স্বল্পতা, অপ্রতুল তহবিল, হঠাৎ করে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলার ধরনসহ বহু কারণ রয়েছে। এসব কিছু একসঙ্গে মিলে অভিবাসন মামলা নিষ্পত্তির গতি ভীষণভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
চলমান বহু মামলায় সংশ্লিষ্ট অভিবাসীরা আবার আমেরিকার আশ্রয়প্রার্থী। নিজ দেশে প্রাণনাশের হুমকি থাকায় তাঁরা আমেরিকায় এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। যেহেতু অন্য কোনো দেশ থেকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেটে এ আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ নেই, সেহেতু তাদের আমেরিকায় এসেই এই আবেদন করতে হয়েছে। এটিও বাড়তি জট তৈরি করছে। তবে মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন সরাসরি এই জট তৈরি না করলেও বড় একটি প্রভাব রেখেছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মোট মামলার ৩০ শতাংশই আশ্রয় প্রার্থনার সঙ্গে যুক্ত। ফলে এর চাপে অন্য মামলাগুলোর শুনানির জন্য দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
অভিবাসন মামলা নিষ্পত্তির এ জট সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসন সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি করছে।

সীমান্তে বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যদের একত্রিকরণ
এই গ্রীষ্মে সীমান্তে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আড়াই হাজারের বেশি সন্তানকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে করে বিপুলসংখ্যক শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তীব্র সমালোচনার মুখে গত জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিশুদের তাদের পরিবারের সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিচ্ছিন্ন করা শিশুদের একটি বড় অংশকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো বহু শিশু পরিবার বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। এদের মধ্যে কিছু শিশুকে স্পনসরের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবার বিচ্ছিন্ন এই শিশুদের আশ্রয়দাতাদের আবার নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও খবর প্রকাশ হয়েছে। ফলে সীমান্তে কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ হচ্ছে না।

অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন
অনুমোদ ছাড়া আমেরিকায় অবস্থান করা সব অভিবাসীকে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও বারাক ওবামার প্রশাসনের শেষ বছরের তুলনায় তাঁর প্রশাসন কমসংখ্যক অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে। ২০১৭ অর্থবছরে তাঁর প্রশাসন ২ লাখ ২৬ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে। এ সংখ্যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮ অর্থবছরের হিসাব জানা না গেলেও তা ২০১৬ অর্থবছরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। আইস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৯২ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন পিছিয়ে থাকলেও তাঁর আস্ফালন অনেক বেশি। এই আস্ফালন ও অভিবাসীদের নানাভাবে হেনস্তা করার যেসব নজির তাঁর প্রশাসন তৈরি করেছে, তা প্রশাসনকে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছে। নিয়ম মেনে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের নীতি মেনে চললে এতটা সমালোচনা হয়তো হতো না। কিন্তু ট্রাম্প যতটা করেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি বলেছেন। এই বলাটাই তাঁকে একজন অভিবাসী-বিরোধী শাসক হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরেছে। তাঁর সময়ে বহিষ্কার কম হওয়ার অন্য কারণও রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্তেই আটকে দিচ্ছে। এমনকি বেশ কিছু দেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেসব দেশ থেকে কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশী আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারছেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। আবার বহু অবৈধ অভিবাসীর মামলা আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব কিছু মিলেই বর্তমান প্রশাসন আমেরিকাকে অবৈধ অভিবাসনমুক্ত করার কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে ততটা দক্ষতা দেখাতে পারছে না।

ডাইভার্সিটি ভিসা (ডিভি) প্রকল্প বন্ধ
শুধু অবৈধ নয়, বৈধ অভিবাসন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিভি প্রকল্প বন্ধের পরিকল্পনা করেছেন। যেসব দেশ থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কমসংখ্যক অভিবাসী এসেছে, সেসব দেশের জন্য মার্কিন প্রশাসন এ বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ হাজার অভিবাসী গ্রহণ করে আমেরিকা। এই প্রকল্প আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদের তেমন বড় ঝুঁকি তৈরি না করলেও এই কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটি বন্ধের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত উজবেকিস্তানের নাগরিককে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যদিও ডিভি প্রকল্পের আওতায় আমেরিকায় আসা ওই ব্যক্তির পরিচালিত হামলার ঘটনা ব্যতিক্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ডিভি প্রকল্পের আওতায় কাউকে আমেরিকায় আসতে হলে তার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হয়। ফলে এই প্রকল্প আমেরিকার জন্য বড় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে এটি বন্ধ করার উদ্যোগ সহজভাবে নিচ্ছেন না অনেকে।