Thank you for trying Sticky AMP!!

অভিবাসী বাংলাদেশিদের গল্প

স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটস

বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আজকের আমেরিকা এক প্রবল বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। যেকোনো সময় দরজায় এসে কড়া নাড়তে পারে অভিবাসন পুলিশ। কোনো যুক্তি-তর্ক না শুনে এক মুহূর্তে তারা ঘর থেকে টেনে নামাতে পারে, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিতে পারে কোনো অভিবাসীকে। পেছনে পড়ে থাকবে অগোছালো সংসার, স্ত্রী- সন্তান ও অপূর্ণ স্বপ্ন।
এমন এক দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত হয়েছে ‘স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটস’। প্রবাসী বাংলাদেশি নাট্যকার ও অভিনেতা গোলাম সারওয়ার হারুন রচিত ও পরিচালিত এই নাটক ২৩ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হলো নিউইয়র্কের সুপরিসর পেশাদার নাট্যমঞ্চ কুইন্স থিয়েটারে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সমর্থনে ও কুইন্স কাউন্সিল অন দ্য আর্টসের আংশিক অর্থানুকূল্যে মঞ্চস্থ এই নাটকের প্রযোজনায় ছিল প্রবাসের নাট্যদল ঢাকা ড্রামা।
জ্যাকসন হাইটস পরিচিত তার বহুজাতিক চরিত্রের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এই এলাকা ব্যবসা ও বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছে, সে কারণে এই উপ-

নগরটিকে অনেকে ‘প্রবাসে বাংলাদেশ’ নামেও অভিহিত করে থাকেন। নাটকের কেন্দ্রে রয়েছে বৈধ কাগজপত্রবিহীন এক বাংলাদেশি পরিবার। একমাত্র উপার্জনকারী বাবা অভিবাসন পুলিশের হাতে আটক হলে দুই কন্যাকে নিয়ে সংসার সামলানোর বিপুল বোঝা এসে পড়ে প্রবাসে কর্ম জীবনে অনভ্যস্ত মায়ের ওপর। যাতে তিনি পালাতে না পারেন সে জন্য পুলিশ তাঁর পায়ে বেঁধে দিয়েছে সতর্কতামূলক ইলেকট্রনিক শিকল, চৌপ্রহর তাঁর ওপর নিরাপত্তা প্রহরা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে তাঁকে রাঁধুনির চাকরি নিতে হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের এক বাঙালি রেস্তোরাঁয়। কিন্তু সেখানেও পদে পদে হয়রানি, রয়েছে মালিকের লালস-চক্ষু। কন্যা দুটিকেও সহ্য করতে বিদ্রূপ। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রমের ফলে স্কুল থেকে তাদের জন্য আসে স্বীকৃতি। সহকর্মীদের সংহতির স্নেহস্পর্শ ভুলিয়ে দেয় মায়ের অহর্নিশ বেদনা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা।
ইংরেজি অভিনয়ে অনভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও নাট্যদলের অধিকাংশ কর্মী একে অপরকে যেভাবে সমর্থন জুগিয়ে অভিনয় করেন, তা দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায়। কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে গার্গী মুখার্জী ছিলেন একদিকে এই নাটকের প্রাণ, অন্যদিকে তার প্রধান ভাষ্যকার। ‘হয়তো এই মুহূর্তে নয়, কিন্তু একদিন অভিবাসী জীবনের এই দৈনন্দিন সন্ত্রাস শেষ হবে। আমেরিকা হয়ে উঠবে বহুজাতিক, বহু বর্ণের এক মানব সভ্যতা’ তাঁর মুখে উচ্চারিত এই বার্তা দিয়ে শেষ হয় নাটকটি।
দর্শকদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল নতুন প্রজন্মের অভিবাসী বাংলাদেশিরা। অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত দর্শকের সংখ্যাও ছিল অনেক। তাঁরা সবাই বলেছেন, এ গল্প তাঁদের নিজেদের অথবা নিকটজনদের। গার্গী মুখার্জীর ইংরেজি রূপান্তরে পরিবেশিত এই নাটক দেখে তাই চোখের জল সামলাতে পারেনি অনেকেই।