Thank you for trying Sticky AMP!!

অভিশংসন শুধু নয়, অর্থনীতিও ট্রাম্পের মাথাব্যথা

ডোনাল্ড ট্রাম্প

বেকারত্বের হার গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন, বাজারভিত্তিক অর্থনীতির জোয়াল ভোক্তাদের কাঁধে চড়ে বেশ সড়গড় চলছে, তারপরও মার্কিন অর্থনীতিতে এক অদ্ভুত ধীর গতি দৃশ্যমান হচ্ছে। অস্থিরতা চলছে পুঁজিবাজারে। প্রেসিডেন্টের অভিশংসন ইস্যু সময়ের সঙ্গে শক্তি পাচ্ছে। এই সব মিলিয়ে বর্তমান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে বেশ বড় পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে। এখনো সংকট সেভাবে প্রকট না হলেও আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সবকিছু সামাল দিতে না পারলে, তা রিপাবলিকান পার্টির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।

গত বছর থেকেই আমেরিকার আর্থিক বাজারে বেশ কয়েকবার অস্থির হয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর এই অস্থিরতা এখন নৈমিত্তিকতায় দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা উৎপাদনমুখী শিল্পে। গত গ্রীষ্মে এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় স্থির অবস্থায় রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে শিল্প খাতের উৎপাদন কমেছে। আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক আইএসএম-শিকাগো বিজনেস সার্ভের সেপ্টেম্বর সূচক ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তবে অনেক কিছুই এখনো ইতিবাচক। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দেখাতে তৎপর যে কর্মসংস্থানের তথ্য, তা এখনো ইতিবাচক। আমেরিকায় বর্তমানে বেকারত্বের হার সাড়ে ৩ শতাংশ, যা ১৯৬৯ সালের পর সর্বনিম্ন। কিন্তু এখানেও একটি শঙ্কার দেখা ঠিকই মিলছে।

কারণ অক্টোবরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনশীল শিল্প খাতে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হলেও তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দু হাজার কম। আর এ ঘটনা ঘটছে আমেরিকার উৎপাদন খাতে প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত ইন্ডিয়ানা ও মিশিগানের মতো মধ্য-পশ্চিমের অঙ্গরাজ্যগুলোয়। এ অঞ্চলগুলোই ২০১৬ সালে ট্রাম্পের ভোটব্যাংক হিসেবে কাজ করেছে।

উৎপাদন খাতের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়, কারণ এ খাতের সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তবে মোট কর্মক্ষেত্র বিবেচনায় এটি তুলনামূলক ছোট। মোট কর্মজীবীর মাত্র ১০ শতাংশ এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। বাকি ৯০ শতাংশ শ্রমশক্তি সেবা খাতসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে যুক্ত। তবে অন্য খাতগুলো নানাভাবে উৎপাদন খাতের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই উৎপাদন খাতে শুরু হওয়া সংকট অন্য খাতগুলোর ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। তবে এখনই কিছু কিছু কিন্তু দৃশ্যমান হচ্ছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বেসরকারি খাতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজারটি।

এখন পর্যন্ত মার্কিন অর্থনীতির মূল শক্তি ভোক্তা অংশটি বেশ ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। মার্কিন অর্থনীতির ইঞ্জিন বলা চলে ভোক্তাদের। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভোক্তাদের ব্যক্তিগত ভোগের পরিমাণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ ও রপ্তানি খাতে সংকটকে সামাল দিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ কম এবং আয় বাড়ছে ভোক্তাদের। ফলে ইঞ্জিনটি বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে বলা যায়। তবে সংকটের আঁচ কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। কারণ গত মাসেই সেবা খাতের একটি সূচকে ধীর গতি দৃশ্যমান হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসা ক্ষেত্রে বেশ দুর্বল অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বেকারত্ব রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে থাকলেও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় এবং গড় মজুরি বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কম হওয়ায় শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

এর আগে ২০১৬ সালেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্প উৎপাদনে নিম্নগতি এসেছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে করপোরেট কর কমিয়ে একে মোটামুটি গতিশীল করে বর্তমান প্রশাসন। এই গতি আরও লম্বা সময় চলার কথা। কিন্তু একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর কারণে তা হয়নি। রপ্তানি কমেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা বৃদ্ধির শঙ্কায় কমেছে বিনিয়োগও। আর এ দুই মিলে কর-হ্রাসের মতো উদ্দীপনামূলক কর্মসূচির ফলটি পুরোপুরি নিতে পারছে না মার্কিন প্রশাসন। বরং চীনের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে অর্থনীতিতে উল্টো গতি দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তাঁর প্রশাসনের পক্ষে কর পুনর্গঠনের মতো উদ্দীপনামূলক কোনো নতুন কর্মসূচি হাতে নেওয়াটা প্রায় অসম্ভব।

অর্থনীতিতে গতি আনতে বর্তমান প্রশাসনের হাতে খুব কম বিকল্প রয়েছে। কারণ, এরই মধ্যে প্রশাসন তার বিকল্পগুলো ব্যবহার করে ফেলেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে বিরতি দেওয়াটা একটা উপায় হতে পারে। কিন্তু কোনো ফল ছাড়াই এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে, তা সারা বিশ্বেই মার্কিন শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবে। একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোটব্যাংককেও এ ধরনের পদক্ষেপ হতাশ করবে, যার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়বে পরবর্তী নির্বাচনে।

এদিকে অভিশংসন তদন্ত সামনে রেখে আমেরিকার রাজনীতিতে এক জটিল অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অর্থনীতির সূচকগুলো বাজে সংবাদ দিতে শুরু করলে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ, যেকোনো একটি সূচক এলোমেলো হলে তা অন্য সূচকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সহমরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই বর্তমান প্রশাসনের অনুকূল পরিস্থিতি নয়। বিশেষত পুঁজিবাজার এমনিতেই অস্থির হয়ে আছে। সংবেদশীল এই কাঠামো যেকোনো পলকা বাতাসে আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। আর তেমনটি হলে কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রগুলোর ইতিবাচক অবস্থান দিয়ে প্রশাসন সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। কারণ, এমন যেকোনো পরিস্থিতিকেই ডেমোক্র্যাট শিবির ট্রাম্প ও তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইবে। নির্বাচন সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক দল এসব পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিতে চাইবে, যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে বড় অস্থিরতার মুখে ফেলতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে ২০২০ সালের নভেম্বরের আগের পর্যন্ত সময়কে অগ্নিপরীক্ষা বললেও তাই কম হবে।