Thank you for trying Sticky AMP!!

আত্মা চেতনা ও দেহ চেতনা

মানুষ যত দিন নিজেকে আত্মা হিসেবে দেখবে না, তত দিন তাঁর মধ্য থেকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, অহংকার, ঘৃণা—এসব যাবে না। আমাদের দেহ চেতনার প্রথম মোহ হচ্ছে, আমি কতটা সুন্দর? বা যার সঙ্গে সম্পর্ক সে কতটা সুন্দর? তারপর আমার নামে কী আভিজাত্য বহন করে? আমার সঙ্গে সম্পর্কিত কারা? আমার পদ কী? আমার পেশাগত স্ট্যাটাস কী? আমার বয়সের পরিমাপ কী? যেমন সন্তানকে মা-বাবা বয়স এবং সম্পর্কের বড় পদ দিয়ে বিচার করেন। তাই কঠোরভাবে শাসন করতে বাধে না। কেউ কেউ মনে করেন, রাগ না দেখালে তার গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব কমে যাবে। লোকে কাজ করবে না। সম্মান দেখানোর জন্য বাইরের পদ-পদবি এগুলোকে গুরুত্ব দেয়।
একজন ভিআইপিকে কোনো সেমিনারে দামি সোফায় বসতে দেওয়া হয়। তাঁর দেহ সচেতনতার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে তাঁকে হয়তো গালিও দেওয়া হচ্ছে। এটা কিন্তু আসলে সম্মান না। সম্মান হলো ভেতর থেকে একজনের প্রতি আমরা কী চিন্তা করছি? এবং এটা যদি বুঝতে পারেন, তবে সে সম্মানিত ব্যক্তি নিজেই বলতেন, সমস্যা নেই আমি কাঠের চেয়ারে বসি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভিআইপিরা দামি গাড়ি, গ্র্যান্ড রিসেপশন না পেলে মনে কষ্ট পান। বলেন ওদের অনুষ্ঠানে আর যাব না।
কিন্তু আমরা যদি বুঝতে পারতাম, আমরা শুধু নাটক-সিনেমার মত কিছু চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি বস। তুমি চাপরাশি। অভিনয় শেষ হলে যেকোনো মুহূর্তই এই গ্রহ ছেড়ে চলে যাব। তাহলে ভাবতে পারতাম, আমাদের সব আত্মা সমান। সব হিরা। তখন হয়তো সমস্যাও থাকত না। সহজ-সরল নিয়মে নিজের চারিত্রিক সনদ ব্যাগে গুছিয়ে রেখে দিতাম। যাত্রা শেষ হলেই সে ব্যাগ নিয়ে পাড়ি দিতাম। কিন্তু আমরা তো এমনটা ভাবি না। ভাবলে দেহ চেতনার বিষয়গুলো আসত না। আসে দেখেই মানুষের মধ্যে এত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করে। আমাদেরকে আত্মা চেতনায় (Soul consciousnesses) শিফট করতে হবে দেহ চেতনা (Body consciousnesses) থেকে।
সূর্য সব সময় আলো দিচ্ছে। সে কখনো বলবে না, আমি কেন সব সময় আলো দেব? গাছ সব সময় আমাদের খাবার দিচ্ছে। পানিও আমাদের দিচ্ছে। তারা আমাদের কী সত্য দিচ্ছে? আসলে দিচ্ছে না। ফুল যেমন তার কাজ সুবাস ছড়ানো, তারা সেটাই করছে। এটাকে দেওয়া বলে না। ইংরেজিতে যাকে বলে Just in their way. মানুষের ভেতরে ঠিক তেমনি ভালোবাসা, শান্তি, সুখ বিদ্যমান জন্ম থেকে। যা শুধু ছড়ানোর জন্য। কিন্তু আমরা সেখান থেকে বদলি হয়ে নিজে ছড়ানোর পরিবর্তে বলছি, আমাকে শান্তি দাও। আমাকে ভালোবাসা দাও, আমাকে সুখ দাও।

নিজেকে বদলানোর কিছু উপায়
আমরা দেখি লোকজন গাড়ি চালাতে চালাতে অনেকে জরুরি মিটিং করে ফেলেন। ইন্টারভিউ পর্যন্ত দিয়ে দেন। ফোনে কথা বলেন। যাঁরাই এসব কাজ করেন, তাঁরা অবশ্যই ড্রাইভিংয়ে খুব দক্ষ। মনে কী প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তাহলে গাড়ি কে চালাচ্ছে? মন ব্রেনকে তথ্য দিচ্ছে দুই জায়গায়। কথা বলার কাজগুলো করা হচ্ছে সচেতনভাবে। গাড়ি চালানো হয় অবচেতনভাবে। গাড়ি থামা, ব্রেক করা বা মোড় নেওয়া সব তথ্য জমা থাকে Subconscious মাইন্ডে মানে অবচেতন মনে। সে মাইন্ড গাড়ি চালায়।
ঠিক তেমনি খারাপ-ভালো অভ্যাসগুলোও অবচেতন (Subconscious) মনে থাকে। কেউ না চাইলেও অনেক সময় কঠিন কথা, রাগ-গোস্বা বের হয়ে যায়। ভয়, ভীতি, চাপ, শূন্যতা মনে চলে আসে। এ জন্যই মনে নতুন রেকর্ডিং প্রয়োজন, যাতে নিয়ন্ত্রণহীন বের না হয়। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমার মন যথা সময়ে ব্রেক ধরতে পারবে। মন যদি সব সময় অশান্ত থাকে, তবে তাকে সব সময় বলুন, ‘আমি শান্তিপ্রিয় আত্মা’। দেখবেন আপনি নিজের অজান্তে নিজে বদলে গেছেন।
নতুন অবস্থায় ড্রাইভিং শিখতে হয় কনশাসলি বা কেউ যদি ম্যানুয়াল গাড়ি থেকে অটোমেটিক গাড়িতে যান, তাকে কিছুদিন ট্রায়াল দিতে হয়। ঠিক তেমনি মনকেও ভালো কোনো লাইফস্টাইলে ট্রায়াল দেওয়ার নাম মেডিটেশন। বড় জোর তিন মাস প্র্যাকটিস করবেন, তারপর অবচেতন মন তা ড্রাইভ করবে। জীবনে হারমনি থাকবে। আজকে শরীরের রোগের মূল কারণ টেনশন, মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ, আঘাত, অহংকার, রাগ—এগুলোই প্রধান হয়ে উঠছে।
আমি আমাকে শিফট না করে যদি ভাবি, সব শিফট হয়ে আমার কাছে আসবে। তাহলে সারা জীবন আমি আমার জায়গায় বসে থাকব। মনে কষ্ট পাব, দুঃখি হব আর বলব, পৃথিবীটাই নষ্ট হয়ে গেছে, কেউতো কথা শুনে না!
অন্য কারও ভুলের সাজা যখন আমরা নিজেরা নিজেদের দিই, তাকে রাগ বা গোস্বা বলে। অনেকে বলেন, তাঁদের জীবন শান্তির জীবন, সুখের জীবন অথচ সামান্য কথাবার্তায় পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে চেঁচামেচি করেন। চিল্লাচিল্লি করা মানে নিজেকে আঘাত করা। এখন এ সাজা থেকে মুক্ত থাকার জন্য হলেও মেডিটেশন করুন। নিজের জন্য না হোক, পরিবারের জন্য, সন্তানদের জন্য। কারণ রাগ সব ধ্বংস করে দেয়।
এ পৃথিবী নষ্ট কে করেছে? হিংসাত্মক কে করেছে? আমি! আমি যেহেতু শিফট হব না, অন্যের মত জিদ করে বসে থাকব, তখন বুঝতে হবে, এ পৃথিবী খারাপ বানানোতে আমার ভূমিকা আছে। পৃথিবী সব সময় শান্তিপূর্ণ রেডিমেড পাব? পাব না। তো কোনটা সহজ? নিজেকে শান্তিপূর্ণ, সব সময় খুশি রাখাটাই সহজ। এ জন্য নিজেকে শিফট করতে হবে। তখন পৃথিবী একদিন অটোমেটেড গাড়ির মত স্মুথ থাকবে।
এখনই সময় নিজেকে দেখার। সবার ভেতরে এক আয়না আছে। নিজেকে জানুন। এর চেয়ে ভালো সুযোগ হয়তো পাবেন না। একা ঘরে কি করবেন? কিছুই ভালো লাগে না! নিজেকে যখন ভালো লাগতে শুরু করবে, তখন একা ভালো লাগবে বেশি। প্রতিটি মানুষের ভেতরে একটা হিরা আছে। সেই হিরা দেখুন। সেই হিরা পদ, পজিশন, সামাজিক স্ট্যাটাস, টাকা–পয়সা নামক রেপিং পেপার দিয়ে মোড়া। খুলে দেখুন সবগুলোর চমক এক। নিজেকে ভালোবাসলে পৃথিবীর সবকিছু ভালোবাসা যায়। নতুবা এই সুখ–দুঃখের শ্রেণিবৈষম্য মনের দায়ভার বহন করে। কিছু পেলাম তো খুশি। কিছু পেলাম না তো দুঃখী। সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে যান। দেখবেন পানি খেয়ে থাকলেও ভালো লাগছে।
যেকোনো অবস্থায় আমাদের ভালোলাগা, ভালোবাসার মধ্যে থাকতে হবে। আর সেটি একমাত্র সম্ভব নিজেকে দিয়ে। নিজেকে ভালোবাসুন। তখন আশপাশের অনেক খারাপ কিছুও ভালো লাগতে শুরু করবে। সামনের মানুষ, সামনের পৃথিবী যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। আজ ভালোবাসলে কাল ভালো নাও বাসতে পারে। আজ খাবার আছে, কাল নাও থাকতে পারে। নির্ভর করতে হয়, একান্ত নিজের ওপর করুন। কিছু না পারেন চোখ বন্ধ করে শুধু আকাশ দেখুন। মন শান্ত রাখুন। পাঁচ মিনিট! দশ মিনিট! এক ঘণ্টা! তিন ঘণ্টা...নিজেকে দোয়া দেন। নিজের মনকে খুশি রাখুন। খুশির জন্য বাইরে পৃথিবীতে ভর করার অর্থ হচ্ছে অন্যের ওপর নির্ভর করা। মানে পরাধীনতা। আবেগীয় অনুভূতিগুলোকে স্বাধীন করে দিন। এটাই সুখ। এটাই আত্ম চেতনা।