Thank you for trying Sticky AMP!!

আপনাকে কেন নিয়োগ দেব?

চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষাতে এখনো পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে কমন প্রশ্ন—আপনাকে কেন নিয়োগ দেব?। এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন চাকরির আবেদনকারী বিভিন্ন প্রকারে দিয়ে থাকেন। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নকর্তার মনের মতো হয় না। প্রশ্নটার উত্তর চাইলেই আপনি সবার চেয়ে অনেক ভালো করে দিয়ে আপনার স্বপ্নের চাকরিটা নিশ্চিত করতে পারেন। প্রথমে, চলুন, দেখা যাক এ প্রশ্নের কিছু নমুনা।
‘আপনি কেন নিজেকে এই চাকরির জন্য উপযুক্ত মনে করেন?’ ‘আপনাকে কেন আমরা নিয়োগ করব?’ ‘আপনাকে কেন আমরা এই চাকরি দেব’ ইত্যাদি সমান প্রশ্ন। এ প্রশ্নের জবাবে সাধারণত চাকরির আবেদনকারীরা তাঁদের নিজ নিজ পারদর্শিতার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা মনে করেন তাঁরা খুবই উপযুক্ত এবং তাঁদের উত্তরও মনে হয় প্রশ্নকর্তার খুবই পছন্দ হয়েছে। বস্তুত তা নয়, বরং বেশির ভাগ প্রশ্নকর্তাই এ রকম উত্তর পছন্দ করেন না। কারণ সব আবেদনকারীই বলছেন তাঁরা পারদর্শী। তিনি কীভাবে সবাইকে বিশ্বাস করবেন? বা বিশ্বাস করলেও তো তিনি সবাইকে একটা চাকরি দিতে পারবেন না।
তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবেন? উত্তর জানার আগে একটু ভাবুন এই প্রশ্নে প্রশ্নকর্তা আসলে কী উত্তর খুঁজছেন? সেটা জানতে পারলে প্রশ্নটার উত্তর সবচেয়ে ভালো করে দেওয়া সম্ভব। সেটা পুরোপুরি আপনি না জানতে পারলেও একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রস্তুতি নিয়ে গেলে বুঝতে পারবেন প্রশ্নকর্তা আসলে কী চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সে কোম্পানির কাজ বা টিম/দলের কাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। তাঁদের ওয়েব পেজে সাধারণত তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানা যায়। সে কোম্পানির কোনো চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলে সেটাও একটা ভালো উপায়। বের করার চেষ্টা করুন তাঁরা বর্তমানে কী কী সমস্যায় ভুগছেন। আপনার প্রশ্নের উত্তরে আপনার সব পারদর্শিতার কথা বলার দরকার নাই। কীভাবে সেই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারা যায় সে সম্পর্কে কিছু বলেন, তবে আপনার উত্তর প্রশ্নকর্তার খুবই পছন্দ হবে এবং ধরে নিতে পারেন যে আপনার চাকরি নিশ্চিত। চলুন, দেখা যাক উদাহরণসহ:
ধরুন, আমি একটা পত্রিকার একজন নিয়মিত ও স্থায়ী কলাম লেখক পদে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। যেখানে আমাকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় তিনটা কলাম লিখতে হবে। আমাকে ভালো কলামিস্ট হতে হবে ইত্যাদি। আমি সেই ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে একটু ঘাঁটাঘাঁটি/খোঁজ-খবর নিয়ে দেখলাম সেই পত্রিকার কলাম লেখকেরা কলামগুলো হাতে লিখে পত্রিকাকে দেন। পত্রিকা সেই কলামগুলো টাইপ করতে প্রচুর শ্রম, সময় ও টাকা ব্যয় করছে। এরপরও সেগুলোর বানান ঠিক করা থেকে শুরু করে সুন্দর বাক্য গঠনে পত্রিকা অফিসের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই, এ চাকরির ইন্টারভিউতে যদি প্রশ্নকর্তা একপর্যায়ে আমাকে প্রশ্ন করেন ‘কেন আপনি এই চাকরির জন্য উপযুক্ত’, তবে চিন্তা করুন এ রকম একটা উত্তর দিলে কেমন হবে।
“আমি নিশ্চিত যে আপনারা যাচাই বাচাই করে সবচেয়ে ভালো কলামিস্ট নিয়োগ দেবেন। আর আমি কেমন কলামিস্ট তা আপনারা ইতিমধ্যে জানেন। তাই, আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না। তবে, আমাকে নিয়োগ দিলে আমি কলামগুলো হাতে লিখে পত্রিকা অফিসে দেব না। পত্রিকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য কলামগুলো শুদ্ধ বানানে, সঠিক বাক্যে টাইপ করে সম্পাদকের চূড়ান্ত রিভিউর জন্য প্রস্তুত রাখব। এতে পত্রিকার অনেক শ্রম, সময় ও টাকা সঞ্চয় হবে। শুধু তাই নয়, আমার কাজ শেষ করে অতিরিক্ত সময় থাকলে আমি অন্যান্য কলামিস্টদের লেখাগুলোও শুদ্ধ বানানে এবং সঠিক বাক্যে টাইপ করে প্রস্তুত রাখব। এতে আমার তাঁদের কলামগুলো পড়াও হয়ে যাবে আর পত্রিকাও উন্নয়নে অনেক এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া পত্রিকার সার্বিক উন্নয়নে শুধু কলাম লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী পত্রিকা অফিসের অন্যান্য কাজও করার চেষ্টা করব স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।”
লক্ষ করুন, এ প্রশ্নের উত্তরে আমি কলামিস্ট হিসেবে কোনো পারদর্শিতার কথা না বলে পত্রিকা অফিস কলামিস্টদের নিয়ে যেসব সমস্যা ভোগ করছে, তার সমাধানের কথা বলেছি। নিশ্চয়ই প্রশ্নকর্তার এ উত্তর খুবই পছন্দ হবে। কারণ এটা যে শুধু তাঁদের অনেক সমস্যার সমাধান দিচ্ছে তা নয়, বরং এ রকম উত্তর নিশ্চয়ই তাঁরা আর কারও কাছে পাননি। বস্তুত তাঁরা এই উত্তরে নিশ্চিত যে আপনি একজন দায়িত্ববান মানুষ। আর দায়িত্ববান মানুষের কদর শুধু পত্রিকায় কেন? সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। কারণ: মনে রাখবেন, দায়িত্ববান মানুষের সংখ্যা এ পৃথিবীতে খুবই বিরল।