Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগানিস্তান থেকে এক মার্কিন সেনার অন্য রকম বাড়ি ফেরা

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের লরেন্স শহরে জোহানি রোজারিওর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়

দেশে ফিরেও দেশের মাটির ঘ্রাণ নিতে পারলেন না জোহানি রোজারিও। আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের মার্কিন অভিযান শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেনাদের। ফিরেছেন রোজারিও–ও, তবে কফিনে। আফগানিস্তানে শেষ যে কয়জন মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের তালিকায় নাম রয়েছে রোজারিওর। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দেশটির ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের লরেন্স শহরে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ২৫ বছর বয়সী জোহানি রোজারিও মার্কিন মেরিন সেনার একজন নারী সদস্য ছিলেন। গত মাসে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শেষ যে কয়জন মার্কিন সেনাসদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তিনিও। সে সময় সেনা প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে এসে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল লোকজনকে। এর মধ্যেই বিমানবন্দরের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। হামলায় যে ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রোজারিও।

গতকাল জোহানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শত শত মানুষ, ছিলেন মেরিন সেনাসদস্যরাও। শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ছিলেন বেথ চোসে। সঙ্গে তাঁর ১২ বছরের ছোট ছেলে গাভিন। তাঁর বড় ছেলে রয়েছেন মার্কিন মেরিন সেনায়। বেথ চোসে বলেন, ‘আমরা এসেছি, কারণ, জোহানি আমাদের কাছে একজন বীর। তাঁর সাহস ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণ করা হবে।’

শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন শেলা অ্যারিয়াস। ৪১ বছর বয়সী শেলা মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। ২০ বছর আগে ৯/১১–এর হামলার ভয়াবহতার স্মৃতি এখনো তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ২০০১ সালের ওই দিনে নিজ শহর লরেন্স থেকেই দেখেছিলেন নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ঘটনা। সে সময় লরেন্সেই একটি সরকারি চাকরি করতেন শেলা। এর পরপরই চাকরি ছেড়ে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমি চেয়েছিলাম শুধুই দেশের জন্য কাজ করতে। আমি নিশ্চিত, জোহানির মনেও এটাই চলছিল।’

রোজারিওকে ভোলার নয়

৯/১১–এর হামলার সময় জোহানি রোজারিও ছিলেন শিশু। বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। এরপর আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। কেটে যায় অনেকগুলো বছর। ২০১৪ সালে হাইস্কুল পাস করে একজন নারী সদস্য হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে নাম লেখান রোজারিও। এর পরপরই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নেমে পড়েন আফগানিস্তানের যুদ্ধের ময়দানে। সেখানেও নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। এ জন্য স্বীকৃতিও মিলেছিল তাঁর। মৃত্যুর তিন মাস আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয় রোজারিওকে।
রোজারিওর স্মৃতি গেঁথে আছে তাঁর হাইস্কুলের বন্ধুদের মনেও। গতকালের শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসেছিলেন তাঁরা। তাঁদের এই দলে ছিলেন এক নারী। হাতে রোজারিওর একটি বাঁধানো ছবি। তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারছি না। আমার কান্না পাচ্ছে।’
রোজারিওকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেনি ৯ বছর বয়সী শিশু কায়লাও। তার পরনে রোজারিওর নাম লেখা টি–শার্ট। পরিবারের সঙ্গে বেশ দূর থেকে এসেছিল সে। কায়লা বলে, ‘রোজারিও একজন বীর। তিনি চলে গেলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। তবে তাঁর নাম সারা জীবন মনে থাকবে আমার। তিনি আমাদের দেশের জন্য যা করেছেন, মনে থাকবে তা-ও।’