আমেরিকায় করোনা বিস্তারে সমস্যা নেতৃত্বে
>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে সবার জীবনের বাস্তবতা। আমরা এখানে শুনছি পাঠকের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কথা। তাঁরা লিখছেন পরিবারের আনন্দ–বেদনাভরা গল্প। শোনাচ্ছেন এ সময়ের কোনো মানবিক সাফল্যের কাহিনি। প্রথম আলো মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে পাঠকের গল্প। দেশ বা প্রবাস থেকে আপনিও লিখুন আপনার অভিজ্ঞতার কথা। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com
আমেরিকাতে করোনাভাইরাস কেন এত বেশি ছড়াল এই প্রশ্নটি বেশ কয়েকবার শুনতে হল দেশের পরিচিত কিছু মানুষদের কাছে। মোটা দাগে যদি বলি, প্রশাসন এ ব্যাপারটাকে প্রথমে ততটা গুরুত্ব দিতে চায়নি, যখন যেটা করার কথার ছিল সেটা করেনি।
আমেরিকাতে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে ২১ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে। এই ঘটনার প্রায় ছয় সপ্তাহ পর এদেশে সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিনের মতো জরুরি কাজগুলো করা শুরু হল, আমরা গৃহবন্দি হলাম।
মাঝখানের এই যে ছয় সপ্তাহের একটা গ্যাপ, এই সময়ে যেসব স্টেপ নেওয়ার দরকার ছিল, সরকারের যেই নেতৃত্ব দেখানোর দরকার ছিল সেটা আমরা দেখতে পাইনি। নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, এক্সপার্টরা আগে থেকেই সতর্ক করছিলেন এই ভাইরাস আমেরিকাতে ছড়ানো শুরু করলে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক বিপর্যয় হতে পারে, মারা যেতে পারে হাজারো মানুষ-এই সতর্কবানি যখন সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু হল ততদিনে পার হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সপ্তাহ। তার আগ পর্যন্ত করোনাকে ডিল করা হয়েছে একটা হোক্স হিসেবে, দেখা হয়েছে “বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র” হিসেবে।
আমেরিকার ইকোনমির সূচক গত কয়েকবছরে উর্ধমুখী ছিল, বেকারের হার ছিল কমতির দিকে - এই সাকসেসগুলো প্রেসিডেন্টের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য এক একটা মোক্ষম অস্ত্র। হঠাত করে এই ইকোনমির Pause বাটনটিতে হিট করা প্রেসিডেন্টের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ, এই মহমারী মধ্যেও আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নিতে তিনি দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিলম্ব হলেও করোনা বিলম্ব করল না, সে চলল তার আপন গতিতে। ফলাফল আমরা দেখছি এখন পর্যন্ত আমেরিকাতে কোভিড-১৯ রোগীর অফিশিয়াল নম্বর ৭ লাখের বেশি, আর মারা গেছেন ৩৫ হাজারের বেশি।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত যাবতীয় প্যারামিটারে নিউইয়র্ক এখন মোটামুটি শীর্ষে। একটা প্রচলিত ধারনা হল যেসব এলাকায় এশিয়া বিশেষ করে চীনের সাথে যাতায়াত বেশি হয়েছে, সেসব জায়গায় করোনার প্রভাব বেশি। চীনের উপর ট্রাভেল ব্যান দেওয়া হল জানুয়ারির শেষের দিকে। তাহলে মার্চ মাসে এসে কি এমন হল নিউইয়র্কে যে সে সবাইকে ছাড়ায়ে গেল। বিশেষজ্ঞরা জেনম সেকোয়েন্স করে দেখিয়েছেন, নিউইয়র্কের বেশিরভাগ করোনার কেসগুলোর পেছনে এশিয়া নয় বরং ইউরোপের ভূমিকাটা বেশি। মলিকুলার বায়োলজিস্টরা জেনম সেকোয়েন্স নিয়ে ভাল জানেন। কিছুটা পড়াশোনা করে যা বুঝলাম সহজ ভাষায় তা হল জেনম সেকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে একটা ভাইরাসের অরিজিন কোথায়, অর্থাৎ একই প্যাটার্নের করোনা ভাইরাস অন্য কোথাও পাওয়া গেছে কি না সেটা বের করা সম্ভব। নিউইয়র্কের প্রথম দিককার বেশ কয়েকজন রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে সায়েন্টিস্টরা দেখলেন ইউরোপেও একই প্যাটার্নের করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। চীনের জন্য আগেভাগে ট্রাভেল রেস্ট্রিকশন দেওয়া হলেও ইউরোপের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে মার্চের শুরু দিকে। এই সময়টার মধ্যে মানুষ ইচ্ছেমতো যাতায়াত করেছে, তাদের মধ্যে সচেতনতাও ছিল কম।
ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে শুরু দিকে টেস্ট কিটের স্বল্পতাকেও। জানুয়ারির শেষ থেকে প্রায় এক মাসের মতো সময়ে টেকনিক্যাল ইস্যু, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব- এসব কারণে অনেক রোগীকে পরীক্ষা করা হয়নি। জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং এশিয়া বা ইউরোপে ভ্রমণকারী বা করোনা রোগীর সাহচর্যে এসেছেন - এমন রোগী ছাড়া বাকিরা থেকেছে পরীক্ষার বাইরে। মার্চের শুরু দিকে যখন এসব জটিলতা দুর হল, আমরা দেখলাম টেস্ট বেড়ে গেল ব্যাপক হারে, আর তার সাথে রোগীর আনুষ্ঠানিক সংখ্যাটাও বেড়েছে একই গতিতে। এর মাঝে যে একটি মাস হারিয়ে হয়ে গেল, করোনা তো এর মধ্যে থেমে নেই, এক স্টেট থেকে আরেক স্টেটে, এক সিটি থেকে আরেক সিটিতে বিচরণ করেছে বাধাহীনভাবে, করা সম্ভব হয়নি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়রে মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো।
নেতৃত্ব এমন একটা স্কিল, এইটা কেউ উপরের পজিশনে থাকলেই আপনা আপনি চলে আসে না। আপনার হাতে বিশ্বের সব সেরা বিজ্ঞানী থাকতে পারে, ডাক্তার থাকতে পারে, ইঞ্জিনিয়ার থাকতে পারে। তার সাথে থাকতে হবে এসব রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো নেতা। আমেরিকার পত্রপত্রিকায় এখন সমালোচনা হচ্ছে এই নেতৃত্ব নিয়েই।
আরও পড়ুন
-
আইসিইউর এসি নষ্ট, অস্ত্রোপচারও বন্ধ, কষ্টে রোগীরা
-
দিনাজপুরে ভোট গণনার পর দুই প্রার্থীর সমর্থকদের উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে নিহত ১
-
ঢাকাসহ ৫ জেলা: মাধ্যমিক কাল বন্ধ হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলাই থাকছে
-
এবার ‘কিপটে’ মোস্তাফিজের ২ উইকেট, বড় জয়ে শীর্ষ তিনে ফিরল চেন্নাই
-
রাত ১১টার পর রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বন্ধ করে দিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার