Thank you for trying Sticky AMP!!

আ.লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। সম্মেলনের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী নেমে পড়েছেন রাজপথে। নিউইয়র্কে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত ও সাত বছরের পুরোনো কমিটি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।
দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অন্যতম সম্পাদক কাজী কয়েছ বলেছেন, চাটুকার, মতলববাজ আর দলীয় পরিচয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা গ্রহণকারীদের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। তিনি সিদ্দিকুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, সিদ্দিকুর রহমান নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করছেন। নির্বাহী কমিটির কাউকে কোনো আলোচনা ছাড়াই তিনি একের পর এক স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন। দলের মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে আসার জন্য তাঁরা সমাবেশ করেছেন জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায়। 

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভিন বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা সম্মেলন দাবি করছেন। এ দাবির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নেত্রীর নির্দেশে সবকিছু হবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে সমাবেশ করা হয়েছে। এদিকে বিএনপিসহ সমমনারা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জামায়াত তাদের পরিচয় গোপন রেখে প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বড় ধরনের মহড়া করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের নামে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বলা হয়, একটি কুচক্রী মহল দলীয় নেত্রীর সরাসরি নির্দেশ উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। ২০১১ সালের পর থেকে দলের কোনো কমিটি নেই। ব্যক্তির নির্দেশে আর সুবিধায় দল চলছে। হতাশ ও ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মনে করেন, সামনের নির্বাচনে আমেরিকা প্রবাসীরা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর নির্বিঘ্ন করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সব অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার জন্য তাঁরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেত্রী উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, নেত্রীকে বিভ্রান্ত করে নানা সময় যারা ফায়দা হাসিল করে আসছে; তাদের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে।
সভায় বেশ কিছু নেতা-কর্মী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আবদুস শহীদ দুদু সভাপতিত্ব করেন। কাজী কয়েছ আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রদীপ কর, তোফায়েল চৌধুরী, হাকিকুল ইসলাম, আবদুর রহিম বাদশাহ, চন্দন দত্ত, শাহ বখতিয়ার, সাজু আহমেদ, কায়কোবাদ খান, শরীফ কামরুল হীরা, গোলাম রব্বানী, আসুক মাশুক, ইলিয়াস রহমান, রেজাউল করিম, জেসমিন বোখারি , রুমানা আক্তার, দুরুদ মিয়া রুনেল, নাসিফ তোরন প্রমুখ।
সপ্তাহান্তে ডাইভার্সিটি প্লাজায় সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষের আগমন বেড়ে যায়। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এশীয়দের টাইমস স্কোয়ার নামে পরিচিত ডাইভার্সিটি প্লাজা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। ফলে গ্রীষ্মের বিকেলে সাধারণ যাঁরা এখানে বসেছিলেন, তাঁদের স্থান ত্যাগ করতে হয় দ্রুতই। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তে তাঁরা এভাবে সমাবেশ করবেন। কমিটির দাবিতে ও নেত্রীকে স্বাগত জানাতে তাঁরা রাজপথেই সোচ্চার থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, দলীয় কোন্দল বলতে কিছু নেই। নেত্রীর নির্দেশেই সব কিছু হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এ অধিবেশনে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে গণসংবর্ধনা। ম্যানহাটনের সিক্সথ অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত হিলটন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজন করা হচ্ছে এই সংবর্ধনার। সংবর্ধনায় অংশ নিতে হাজারো প্রবাসী আসবেন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কানাডা থেকে। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে তিনি নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন। এর আগে জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন।
এবারের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক। পর্যবেক্ষক মহল এই বৈঠককে তাৎপর্যময় বলে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আরও অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, ‘২৩ সেপ্টেম্বরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর “ভিশন”তুলে ধরবেন। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ধাপে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাসে তিনি হচ্ছেন মূল কান্ডারি ও স্বপ্নদ্রষ্টা। একমাত্র জাতির জনকের কন্যা বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে তিনি আগামীর বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান আমরা সেটা তাঁর কণ্ঠেই শুনতে চাই। এ জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন প্রবাসীরা।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এক সমাবেশে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্কে পদার্পণের দিন থেকেই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হবে। দলটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে তা বিশ্ববাসী জানবে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে। আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থকে প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী সমাবেশে যোগ দেবেন বলে তিনি জানান।