Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসরায়েলের সুবিধাভোগী মধ্যস্থতাকারী কুশনার!

ট্রাম্প-জামাতা কুশনার

বর্তমান মার্কিন প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ও এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়েজামাই জেরাড কুশনার। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিবদমান পক্ষগুলোর অন্যতম ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। ইসরায়েলের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ গ্রহণ করছেন তিনি। এই পরস্পরবিরোধী তৎপরতা তাঁর শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
৬ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরের মে মাসে শ্বশুর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল সফরে যান কুশনার। এর কিছুদিন আগেই তাঁর আবাসন কোম্পানি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেনোরা মিভটাচিমের কাছ থেকে তিন কোটি ডলারের বিনিয়োগ গ্রহণ করে। সম্প্রতি মেনোরার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই বিনিয়োগের একটি বড় অংশই যুক্ত হয়েছে কুশনারের মালিকানাধীন মেরিল্যান্ডের ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বিনিয়োগে। গত বছর হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগেই কুশনার তাঁর ব্যবসার একটি অংশ বিক্রি করে দিলেও এখনো বাল্টিমোর ও এর আশপাশের অঞ্চলের আবাসন ব্যবসার সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত। আর এ কারণেই ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগের বিষয়টি গোপন করা হয়েছিল বলে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মেনোরার সঙ্গে এই লেনদেনের আগেও ইসরায়েলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক ছিল কুশনার পরিবারের। এর মধ্যে ইসরায়েলের অন্যতম একটি ধনী পরিবার এবং একটি ব্যাংকও রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আমেরিকায় ফৌজদারি তদন্ত চলছে।
ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কুশনারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এই আর্থিক চুক্তি আমেরিকার কোনো ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করেনি। এমনকি এই চুক্তির সঙ্গে কুশনার সরাসরি যুক্ত ছিলেন কি না, তা-ও অজ্ঞাত। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য বিশেষভাবে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিবদমান একটি পক্ষের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তিতে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এই চুক্তিই জানান দিচ্ছে, কুশনারের ব্যবসায় ইসরায়েলি সংযোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কতটা দৃঢ় হচ্ছে।
জেরাড কুশনার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এর সঙ্গে গত মাসে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে ট্রাম্পের স্বীকৃতির বিষয়টি তো রয়েছেই। আর প্রশ্নটিকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান ক্যাপলিন অ্যান্ড ড্রাইসডেলের আইনজীবী ম্যাথিউ টি স্যান্ডারসন। সরকারের নৈতিকতাসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ এ আইনজীবী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী সিনেটর র‍্যান্ড পলের পরামর্শকও ছিলেন। তাঁর মতে, মানুষ প্রশ্ন করতেই পারে, তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁর ভূমিকায় কোনো প্রভাব ফেলছে কি না।
তবে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সচিব রাজ শাহ বলেন, শান্তি স্থাপনে জেরাড কুশনার যে কাজ করছেন, তাতে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক অবস্থান থেকেই কাজটি করছেন। তিনি নিজে বা প্রশাসন এ বিষয়ে কখনো আত্মসমর্পণ করবে না।
আর কুশনারের কোম্পানির মুখপাত্র ক্রিস্টিন টেইলর বলছেন, ‘সারা বিশ্বেই আমাদের অংশীদার ছড়িয়ে আছে। বিদেশের কোনো সরকারের সঙ্গে আমরা ব্যবসা করি না। আর কুশনার এখন সরকারের অংশ, শুধু এই কারণে বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে আমরা ব্যবসা থেকে বিরত থাকব না।’
এদিকে মেনোরার আবাসন খাতের প্রধান র‍্যান মার্কম্যান বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশের আবাসন খাতেই আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকায় বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কুশনারের কখনো দেখা হয়নি। চুক্তির জন্য আমার সঙ্গে তাঁর কোম্পানি প্রেসিডেন্ট লরেন্ট মোরালির আলোচনা হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জেরাড কুশনারের তথাকথিত কোনো সংযোগের কারণে এই চুক্তি হয়নি।’
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে যোগদানের পর কুশনার কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে এখনো তিনি সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সুবিধা নেন, যার অধীনে রয়েছে কুশনারের বিভিন্ন সম্পত্তি ও বিনিয়োগ। মিলিতভাবে এই সম্পত্তির পরিমাণ ৭৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। রয়েছে বিরাট অঙ্কের ঋণও। গত কয়েক দশকে তাঁর প্রতিষ্ঠান অন্তত ৭০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
কুশনারের আইনজীবী আবে ডি লওয়েল বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের অভিষেকের আগে থেকেই নিজের প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকাণ্ডে আর যুক্ত নন জেরাড কুশনার। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের সঙ্গে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডকে মিলিয়ে কোনো গল্প ফাঁদাটা একেবারে অবান্তর।
তবে কুশনারের আইনজীবীর এই বক্তব্য মানতে নারাজ ম্যাথিউ টি স্যান্ডারসন। তাঁর মতে, ‘এ ধরনের অবস্থান খুবই হাস্যকর। এর অর্থ হচ্ছে আমরা বললেই বিষয়টি বিরোধপূর্ণ, না বললে নয়।’
সংশয় আরও গাঢ় হয় যখন জানা যায়, ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে কুশনারের কোম্পানির এর আগেও বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনেই জানানো হয়েছিল, ম্যানহাটনে অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণে কুশনার কোম্পানির অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলের শীর্ষ ধনী স্টেইমেটজ পরিবার। ওই পরিবারের বেনি স্টেইমেটজ ঘুষসংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকার বিচার বিভাগের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হ্যাপোয়ালিমের কাছ থেকে কুশনারের কোম্পানি অন্তত চারটি বড় অঙ্কের ঋণও নিয়েছে। এই ব্যাংকটির বিরুদ্ধেও ধনাঢ্য মার্কিনদের কর ফাঁকিতে সহায়তার অভিযোগে বিচার বিভাগের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া কুশনারের পারিবারিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুয়েলারের তদন্তেও কুশনারের সঙ্গে ইসরায়েলে দৃঢ় সংযোগের বিষয়টি উঠে এসেছে।