Thank you for trying Sticky AMP!!

এবারের ঈদে আনন্দ নয়: ডা. ফেরদৌস

>
ডা. ফেরদৌস
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এই সময়ে সামনে থেকে লড়াই করছেন নিউইয়র্কের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকার। কেবল নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি নয়, তিনি দাঁড়িয়েছেন ভারত, নেপাল ও দক্ষিণ আমেরিকার মানুষের পাশেও। একই সঙ্গে বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষা সামগ্রী, খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা নিয়ে তিনি দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সম্মুখ যোদ্ধাদের জন্য শত শত মাস্ক, গ্লাভস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাঠিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এবার তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল হক

প্রশ্ন: করোনা মহামারির শুরু থেকেই আপনাকে মাঠে দেখছি। কোথা থেকে এমন অনুপ্রেরণা পেলেন?

ডা. ফেরদৌস: দেখুন, ছোটবেলা থেকেই আমি সাহসী মানুষ। তার ওপর পেশায় একজন চিকিৎসক। শপথ নেওয়ার সময় মানুষের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। করোনার মতো দুর্যোগ পৃথিবীর মানুষ দেখেনি। এমন স্বাস্থ্য মহামারির সময়ে মানুষের পাশে থাকার তাগিদ নিজের ভেতরে অনুভব করেছি। ভেবেছি নিজের জীবন থাকতে মাঠ ছেড়ে যাব না। আমি কেবল নিজের কথা রাখার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: শুধু চিকিৎসার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে আপনি স্যানিটাইজার বিতরণ, খাদ্য বিতরণ, নগদ অর্থ দেওয়া—এত কাজ করতে কেন গেলেন?

ডা. ফেরদৌস: করোনা মহামারির সময়টা যখন হঠাৎ করে এল, গোটা পৃথিবীরই কোনো প্রস্তুতি নেই। ভেবে দেখুন, কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা গেছি। এখনো যাচ্ছি। এই সময়টায় মানুষ বড় অসহায় হয়ে পড়েছিল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে। চাইলেও অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই নিজের সর্বস্ব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া আগে থেকেই আমি নিউইয়র্কে দ্য অপটিমিস্ট, অঙ্কুর এবং বাংলাদেশের কুমিল্লার দেবীদ্বার ফয়জুননেসা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছিলাম। ফলে এবার একটু কাজের পরিধি বেড়েছে বলতে পারেন। আমি কেবল নিজের দায়িত্ব পালন করছি।

প্রশ্ন: দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর আপনি নিউইয়র্কে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো এতটা টান অনুভব করেন। কেন?

ডা. ফেরদৌস: ১৯৭১ সালে আমার জন্ম। সেই অর্থে মুক্তিযুদ্ধ দেখা হয়নি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আমার সমগ্র চেতনায়, ভালোবাসায়। আমার অস্তিত্বে। যুদ্ধের বছরে জন্ম হয়েছিল বলেই কিনা, মনের সাহসটা একটু বেশি। তাই অনেক কিছু করতে পারি কিংবা না পারি, চেষ্টার কোনো ত্রুটি করি না। বাংলাদেশের জন্য কিছু করব বলে প্রায়ই ছুটে যাই। বছরে অন্তত কয়েকবার। এই ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ ভ্রমণের তোয়াক্কা করি না। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রিয় মাতৃভূমির পাশে আছি আমি।

প্রশ্ন: এই করোনা পরিস্থিতির শেষ কোথায়?

ডা. ফেরদৌস: দেখুন, এই পরিস্থিতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিজ্ঞানও অসহায় হয়ে পড়েছে। তবুও আমি আশাবাদী। নিউইয়র্কে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দিকে। অনেকে হার্ড ইমিউমিনিটি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও অবস্থা উন্নতি হবে, এটা আমার প্রার্থনা। ওষুধ ও প্রতিষেধক নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। যত দ্রুত প্রতিষেধক বাজারে আসবে, ততই ভালো। কারণ, এ ছাড়া মানবজাতির জন্য সংশয় থেকেই যাবে। আমি আশা করতে চাই।

প্রশ্ন: আমরা আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব? পয়লা বৈশাখ গেল, ঈদ আসছে। কী হবে?

ডা. ফেরদৌস: বিষয়টা তো দুঃখজক বটেই। কিন্তু এটাই এখন বাস্তবতা। অনেক দিন লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে। কিন্তু করোনা মহামারির এই সময়টায় আগের মতো আনন্দ নিয়ে উৎসব হবে না। প্রিয় মাতৃভূমিতে করোনা খারাপ দিকে যাচ্ছে। নিউইয়র্কে উন্নতি হলেও পুরোপুরি নয়; এমন অবস্থায় আমি অন্তত ঈদের উৎসব করব না। সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, নিয়ন্ত্রণে আসলেও ভুল করলে আবারও খেসারত দিতে হবে। দেখুন, অবশ্যই আমাদের উৎসব ফিরবে, কিন্তু এটা সেই সময় নয়। সবাইকে মনে রাখতে হবে।

প্রশ্ন: তাহলে এবারের ঈদ আপনি কীভাবে কাটাবেন?

ডা. ফেরদৌস: আমি ও আমার পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার ঈদে কোনো শপিং করব না। বাড়তি কোনো খাবারও বাড়িতে রান্না হবে না। এবার সামাজিক দূরত্ব রেখে বাসাতেই থাকব। খোঁজ নেব নিউইয়র্ক ও বাংলাদেশের মানুষের। অনলাইনে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব। সেই সঙ্গে একটা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আমার বাসায় কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এখানে খুব কষ্টে আছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী পরেই তাদের সঙ্গে ঈদের দিনটায় আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।

প্রশ্ন: আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. ফেরদৌস: আপনাকেও ধন্যবাদ। সবার সুস্থতা ও নিরাপদ জীবন কামনা করছি। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।