Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন

অভিবাসীদের প্রতি আরও কঠোর হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। অবৈধ অভিবাসী বা বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের ওপর তাঁর প্রশাসন শুরু থেকেই খড়গহস্ত। অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিতাড়নে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইস পুলিশকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বৈধ অভিবাসীদেরও কোনো খুঁত পেলে পেছনে লাগছে আইস পুলিশ। এবার অভিবাসী নাগরিকদের দিকে শ্যেন দৃষ্টি ট্রাম্প প্রশাসনের। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নতুন উদ্যোগে মহাচিন্তায় পড়েছেন আমেরিকায় অভিবাসী নাগরিকেরা। কারণ, তিন ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেলে যেকোনো অভিবাসী নাগরিকের নাগরিকত্ব পর্যন্ত বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নতুন উদ্যোগে।

আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর গত জুনে নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সার্ভিসেসের (ইউএসসিআইএস) অধীন ডিন্যাচারালাইজেশন টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্স আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের মামলাগুলোর তদন্ত করবে এবং তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সুপারিশ করবে।
বর্তমানে ২ কোটি অভিবাসী আমেরিকার নাগরিক। তাদের ঠিক কতজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
ডিন্যাচারালাইজেশন টাস্ক ফোর্স গঠনের মাধ্যমে ইউএসসিআইএস সরাসরি অভিবাসন আইন প্রয়োগে সম্পৃক্ত হলো। আগে থেকেই এই কাজ করছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইস পুলিশ।
আমেরিকার অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ৩৪০ ধারায় নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিষয়টি আছে। সরকার কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের মাধ্যমে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অতীতে এ ধরনের উদ্যোগ খুব কমই নেওয়া হয়েছে। এক সময় নাৎসি বাহিনীর সদস্যদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কারণ তারা অতীত গোপন করে অবৈধভাবে নাগরিক হয়েছিল।
ইনকোয়ারার ডট নেটের এক নিবন্ধে বলা হয়, আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর (ডিএইচএস) ২০০৮ সালে অপারেশন জনুস চালু করে। তখন ৮৫৪ জনকে শনাক্ত করা হয়; যাঁদের আগে অপসারণের নির্দেশ ছিল বা তারা ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু তারা নাগরিক হতে সক্ষম হয়। এসব মানুষের আঙুলের ছাপের রেকর্ড ডিএইচএসের ডেটাবেইস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রশাসন নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য আরও ১৬ হাজার মামলা বিচার বিভাগে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
বর্তমান প্রশাসনের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার এই উদ্যোগে যাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি তাঁদের তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো—
১) ফৌজদারি মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ার তথ্য গোপন: নাগরিকত্বের আবেদনে যাঁরা ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তথ্য গোপন করেছেন এবং যাঁদের মামলা প্রত্যাহারের পর্যায়ে রয়েছে। জেনে রাখা ভালো, এসব ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ও দোষী প্রমাণিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় বা তাঁর আগের হতে হবে।
২) আগের বিতাড়ন আদেশ ও পরিচয় গোপন: ১০ বছর আগে আমেরিকা সরকার শত শত লোকের তথ্য পেল; যাঁদের আগে বিতাড়নের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এবং তাঁরা ভিন্ন নাম ব্যবহার করে নাগরিকত্বের আবেদন করে ও গ্রিন কার্ড নেয়। এখন এসব মামলার তদন্ত হচ্ছে এবং তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
৩) মিথ্যা ও প্রতারণা: গ্রিন কার্ড পেতে কেউ কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল এবং মিথ্যা বলেছিল। গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্ব পেতে মিথ্যা বলা নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ভিত্তি হতে পারে।
ইউএসসিআইএস নাগরিকত্ব বাতিলের লক্ষ্যে কোনো অভিবাসীকে চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করলে বিষয়টি যাবে অভিবাসন মামলা ও সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নির কার্যালয়ে। তারপর মামলা হবে ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। এরপর নাগরিকত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আদালতে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন।
এটি আইনি প্রক্রিয়া এবং একমাত্র ফেডারেল বিচারকই নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবেন। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি এগোবে। কারও নাগরিকত্ব বাতিল হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁকে অপসারণ করা হয়। এ দায় থেকে মাফ বা রেহাই না পেলে অবিলম্বে তাকে বিতাড়ন করা হবে।
কেউ ওই তিন শ্রেণিতে পড়লে এবং নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা থাকলে সবচেয়ে ভালো হবে নাগরিকত্বের আবেদন পুনরায় যাচাই করা এবং একজন দক্ষ আইনজীবীর সহযোগিতা নেওয়া। নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ফেডারেল কোর্টে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি অপসারণ এড়ানোর কৌশল খুঁজতে হবে।