Thank you for trying Sticky AMP!!

কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ৪৯ বছর পূর্তি উদ্যাপন

ঐতিহাসিক ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ৪৯ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখা ব্যক্তিদের অবদানের স্মারক সংগ্রহ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার আহ্বান জানান বক্তারা।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। করোনা মহামারির কারণে এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি।

গত বছর কনসার্ট ফর বাংলাদেশের বর্ষপূর্তিতে নিউইয়র্কে জমজমাট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এবারও তেমনই পরিকল্পনা থাকলে, শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ১ আগস্ট রাত ১০টায় অনুষ্ঠানটি ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম, এফবি টিভিসহ কয়েকটি ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের প্রধান সমন্বয়কারী শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় এবারের আয়োজনে অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অধ্যাপক হায়দার এ খান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর, বিশিষ্ট অভিনেত্রী লুৎফুন নাহার লতা এবং কনসার্ট ফর বাংলাদেশে সরোদ বাজানো ওস্তাদ আলী আকবর খানের নাতি মোর্শেদ খান অপু।

উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের সহায়তায় নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল, তা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট জগৎ সেরা বিটলস ব্যান্ড খ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন ও সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শংকরের উদ্যোগে সেই কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে বব ডিলনসহ পৃথিবী সেরা শিল্পীরা অংশ নেন। দুটি বেনিফিট কনসার্টে দর্শক হয়েছিল ৪০ হাজারেরও বেশি। সেখান থেকে পাওয়া অর্থ ইউনিসেফের মাধ্যমে খরচ করা হয় বাংলাদেশের উদ্বাস্তু মানুষের জন্য।

কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ৪৯ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন রথীন্দ্রনাথ রায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারতও সেই`সময় যে সহায়তা দিয়েছিল, তার তুলনা হয় না।’ একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমি মনে করি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রও আসলে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টর। আনুষ্ঠানিকভাবে যদি সেই স্বীকৃতি আসে খুব ভালো লাগবে আমার।’

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজনের সময়টায় একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন অধ্যাপক হায়দার এ খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে সেই সময়কার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তখন পৃথিবীর তাবৎ শ্রেষ্ঠ সংগীত তারকারা এক ছাদের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশের ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য এই কনসার্টটি বিপুল একটা ভূমিকা রেখেছিল। এর মাধ্যমে বিশেষ করে বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের নামটি আরও ভালো করে জানল। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই কনসার্টের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।’

ফাহিম রেজা নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রখ্যাত আমেরিকান কবি অ্যালান গিন্সবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতার বাংলা অনুবাদ পাঠ করে শোনান লুৎফুন নাহার লতা। বাংলা ধুনের আদলে সেতার বাজান মোর্শেদ খান অপু। এ ছাড়া কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানের ভাবানুবাদ করেছেন ধীমান নাথ। সেটি পাঠ করেছেন বাচিক শিল্পী অভ্র ভট্টাচার্য। ধারণকৃত সেই পাঠ দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গানটি গেয়েছে ১২ বছরের শিল্পী অপর্ণা আমিন। পরিবেশন করা হয় সেই গানটিও।

ঐতিহাসিক সেই কনসার্টের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছেন লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন। ‘একটি দেশের জন্য গান’ বা ‘সঙস ফর আ কান্ট্রি’ শিরোনামের সেই প্রামাণ্যচিত্রটি ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তিতে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান নির্মাতা।