Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা কি ল্যাব থেকে, তা নিয়ে আবার উত্তেজনা

জো বাইডেন

করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বুধবার তাঁর দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে চীনে করোনার উৎস নিয়ে সম্ভাব্য সব তত্ত্ব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে যে কথা উঠেছিল, সে বিষয়টিও অনুসন্ধানের আওতায় রাখতে বলেন তিনি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল করোনা নিয়ে একটি মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, উহানের একটি ল্যাবে কর্মরত তিনজন গবেষক অসুস্থতা নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে জানানো হয়েছিল ওই বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর উহানের ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে যে সন্দেহ ছিল, তা নতুন মাত্রা পায়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোভিড-১৯-এর উৎস নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গবেষণা শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে। উহানের ল্যাব থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে, এ সন্দেহের ভিত্তিতে চীনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের আরও বেশি জায়গায় গিয়ে অনুসন্ধান চালানোর অনুমতি দিতে এক ধরনের চাপে রয়েছে চীন।

করোনার উৎপত্তি নিয়ে এখনো তেমন কিছু জানা যায়নি। কখনো বলা হয়েছে, বাদুড় থেকে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রথম সংক্রমিত হয়েছে। আবার উহানের ল্যাব থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলেও প্রচার-প্রচারণা আছে। তবে এ ভাইরাস ঠিক কীভাবে ছড়িয়েছে, সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত তা প্রমাণ করা যায়নি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চায়না ভাইরাস’ বলেছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি বলেছিলেন, করোনার সংক্রমণের জন্য চীনই দায়ী। তাই চীনকে এ মহামারির দায় নিতে হবে।

এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে প্রসঙ্গটি আবার সামনে আনলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিবৃতিতে বলেছেন, চলতি মাসের শুরুতে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বাড়তি প্রয়াস চালিয়ে এ ভাইরাস কীভাবে প্রথম মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে, সে বিষয়ে একটি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নিবিড় তদন্তের আওতায় চীনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করার বিষয়টিকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন তিনি।

উহানের ল্যাব পর্যন্ত তদন্ত বিস্তৃত করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সব প্রয়াসকে সমন্বিত করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাইডেনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমেরিকা বিশ্বের সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে চীনের ওপর এ বিষয়ে চাপ প্রদান করবে। একটি স্বচ্ছ, প্রমাণভিত্তিক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তদন্ত পরিচালনার প্রয়াসের কথা বলেছেন বাইডেন।

করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানের জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা চীন গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের চীন পূর্ণ সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা করোনার উৎস সম্পর্কে কোনো পূর্ণ সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

রয়টার্স জানায়, বাইডেনকে দেওয়া প্রতিবেদনে তাদের সিদ্ধান্তগুলো বিশদভাবে জানানো হয়েছিল। গত মার্চে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার বাইডেন বলেন, কোভিড-১৯ কোনো প্রাণীর শরীর থেকে মানুষে নাকি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা থেকে ছড়িয়েছে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জো বাইডেন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশও দিয়েছেন। বিস্তারিত তদন্তে সহযোগিতার জন্য চীনের ওপর চাপ দেওয়ার কথাও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এরপর যুক্তারাষ্ট্রে চীনের দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং দোষারোপের খেলা খেলতে কিছু রাজনৈতিক শক্তি জোট বেঁধেছে।’

চীনের গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েড তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ল্যাব ফাঁস-তত্ত্ব যদি আরও তদন্ত করা হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকেও তদন্তকারীদের তাদের ফোর্ট ডেট্রিকের ল্যাব তদন্ত করার অনুমতি দিতে হবে।

গ্লোবাল টাইমস আরও বলেছে, ‘এটা স্পষ্ট যে তারা যে জটে পড়েছে, তা থেকে উদ্ধারে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা করছে।’

২০১৯ সালের শেষ দিকে কোভিড–১৯–এর প্রথম সংক্রমণ ঘটে চীনের উহানে। এরপর সংক্রমণ বিস্তৃত হয় সারা বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, করোনায় এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮২ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ। করোনায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
চীনের বিরুদ্ধে কেউ কেউ অভিযোগ করে থাকেন যে দেশটি যথাযথ পদক্ষেপ নিলে করোনার সংক্রমণ শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল। এমন সব তত্ত্ব ও অভিযোগের বিষয়ে চীন সব সময় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে।