Thank you for trying Sticky AMP!!

কেন আজ দেশ জুড়ে সহিংস বিক্ষোভ

জর্জ ফ্লয়েড

মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, ‘আ রায়ট ইজ দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য আনহার্ড’। অথ্যাৎ ‘অবহেলিতের ভাষাই হলো সংঘাত।’ কোনো রাষ্ট্র, সমাজ যখন কোনো দরিদ্র জাতির দুর্দশার কথা শুনতে ব্যর্থ হয়, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়, তখনই দাঙ্গার সূচনা হয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও অগ্রগতিই হলো দাঙ্গা প্রতিরোধের চূড়ান্ত পন্থা। এই বাক্য দ্বারা তিনি দাঙ্গার সূচনা করেননি, বরং দাঙ্গার কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। কেননা তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের সৃজনশীল প্রতিবাদকে শারীরিক সহিংসতার পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারি না।’ এই ভাষণটি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি সৃজনশীল  প্রতিবাদকে সমর্থন করেছিলেন, শারীরিক সহিংসতাকে নয়।

দাঙ্গা এমন এক নাগরিক ব্যাধি যা কর্তৃপক্ষ, সম্পত্তি ইত্যাদির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে। সব দাঙ্গায় সাধারণত সম্পত্তি, সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়। পুরো আমেরিকায় আজ কোভিড-১৯ মহামারিকে পেছনে ছুড়ে ফেলে মিনিয়াপোলিসের পুলিশের হাতে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে চলছে বিক্ষোভ। শুরু হয়েছে দাঙ্গা।

এমন গলা চেপে হত্যা পৃথিবীজুড়েই হচ্ছে। তবে আজ কেন হঠাৎ একটি হত্যায় আমেরিকার ৪৫টির বেশি শহরে বিক্ষুব্ধ হয়ে পথে নামা উত্তাল জনতাকে সামাল দিতে ৭৭ বছর পর কারফিউ জারি করতে হলো? কারণ সহজ। এ বছর জর্জ ফ্লয়েডই একমাত্র ভিকটিম নন। এ বছর এমন নির্মম মৃত্যু ঘটেছে একাধিক। হত্যাকারীরা ছিল একই বর্ণের এবং ভিকটিমদের সবাই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ।

এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আহমদ আরবেরি নামের ২৫ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে কয়েক মিনিট দূরে জর্জিয়ার ব্রান্সউইকে জগিং করা অবস্থায় স্থানীয় দুই শ্বেতাঙ্গ গ্রেগরি ও তাঁর ছেলে ট্র্যাভিস ম্যাকমাইকেল গুলি করে হত্যা করে। এ বছরের ১৩  মার্চ ক্যানটাকির এক অ্যাপার্টমেন্টে মাদকের তদন্তে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে আসা পুলিশ সন্দেহবশত ব্রেয়োনা টেলর নামের ২৬ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে কমপক্ষে আটবার গুলি করে হত্যা করে। অথচ পুলিশ যাকে খুঁজছিল, সে ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতেই ছিল। এ ধারায় ২৫ মে মিনেসোটাতে পুলিশের সহিংসতার কারণে মারা যাওয়া তৃতীয় ব্যক্তি হলেন জর্জ ফ্লয়েড, যা দাঙ্গার জন্য অনুঘটক হিসেবে পরিস্থিতিকে আগ্নেয়গিরিতে পরিণত করে। জর্জ ফ্লয়েডের এই মৃত্যু কেবল আফ্রিকান আমেরিকান সম্প্রদায়েরই নয়, পুরো জাতিকে হতাশায় ফেলেছে। 

যখন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাউকে নির্মমভাবে হত্যার পর সেই আসামি ক্ষমতার বলে ছাড়া পেয়ে যায় কিংবা থার্ড ডিগ্রি মার্ডার কেসে শাস্তি কমিয়ে আনা হয়, তখন সেই জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যখন গায়ের চামড়ার রঙে কোনো জনগোষ্ঠীর পরিচয় নির্ণয় করা হয়, তখন তারা বর্ণবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়। যখন তাদের পরিচয়ে বিশেষ কোনো শব্দ যোগ করা হয়, যেমন—কালো/নিগ্রো/উগ্র, যখন রাস্তাঘাটে তাদের দেখে হাতের মানিব্যাগটি শক্ত করে ধরে রাখা হয়, যখন সেসব জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় বাস করতে কেউ দ্বিমত পোষণ করে, তখন তারা বৈষম্যের শিকার হয়। এগুলো সেই নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে মর্মাহত করে, ক্ষুব্ধ করে।

তবে একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা কখনই হিংস্র প্রতিবাদ সমর্থন করতে পারি না। প্রতিবাদ হবে শক্তিশালী এবং মজবুত; কিন্তু হিংসাত্মক আক্রমণাত্মক বা লুটপাটের নয়। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সর্বাধিক দৃশ্যমান মুখপাত্র এবং নেতা মার্টিন লুথার কিং খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত অহিংস কার্যকলাপের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারের পক্ষে লড়েছেন।

আজ এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, বর্ণবাদী বৈষম্য দূর করতে ১৯৫৫-’৬৮ সাল পর্যন্ত মার্টিন লুথার কিং যে ভূমিকা রেখেছেন, আজকের সঙ্গে তার পার্থক্য রয়েছে। আজ আমরা একটি মারাত্মক মহামারি নিয়ে বসবাস করছি, যা ১ লাখের বেশি লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছে। চার কোটির বেশি মানুষকে বেকারত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। দেশের বেশির ভাগ অংশ লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, সামনে কী হবে সেই আতঙ্ক, জীবনের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে আমেরিকার প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত। অনেকটা ১৯২৯-৩৩ সালের সময়ের মহামন্দার সময়কালের মতো। এই পৃথক্‌করণ, বিচ্ছিন্নতা ও উদ্বেগের প্রভাবগুলো অবশ্যই নাগরিকদের বর্তমান সহিংসতার ওপর প্রভাব ফেলছে।

এখানে অন্য আরেকটি মূল পার্থক্য রয়েছে এবং সম্ভবত এটিই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভয়ের বিষয়। তা হলো, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যখন আমাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভর্নর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ‘ইউ হ্যাভ টু ডমিনেট’, তখন শুধু সাধারণ মানুষই নয়, পুলিশ প্রশাসনের কাছেও তিনি নিজের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। হিউস্টনের পুলিশ প্রধান আর্ট আচেভেদো তো বলেই দিয়েছেন, ‘বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে যদি ট্রাম্প গঠনমূলক কিছু বলতে না পারেন, তবে তাঁর চুপ থাকা উচিত।’

শুধু আজই আমেরিকা এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির কবলে পড়েনি। অতীতেও পড়েছে। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে শহুরে অস্থিরতা, আজ আমরা যা দেখছি তার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক ছিল। ১৯৬৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়াটসের দরিদ্র, কৃষ্ণাঙ্গ পাড়াটি সহিংসতায় বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং এতে ৩৪ জন নিহতসহ শত শত ভবন ক্ষতিগ্রস্ত, লুটপাট ও ধ্বংস হয়। এর দুবছর পর ১৯৬৭ সালে ১৫৯টি শহরে মারাত্মক অশান্তি হয়েছিল এবং নিউইয়র্ক ও ডেট্রয়েটে দাঙ্গা হয়েছিল। ডেট্রয়েটের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, রাষ্ট্রপতি জনসন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ১০১তম এবং ৮২তম এয়ারবর্নে ফোন করতে বাধ্য হন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যার পর হোয়াইট হাউসকে কেন্দ্র করে ধোঁয়া ওঠার কারণে সারা দেশে দাঙ্গা এবং লুটপাট শুরু হয়েছিল এবং গৃহযুদ্ধের পর আমেরিকা সবচেয়ে বড় সহিংসতার দেখেছিল তখন। সে তুলনায়, জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এখন পর্যন্ত যা কিছু দেখছি আমরা, তা অতীতের সেই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তুলনীয় নয়।

তবে কারণ যাই হোক, আমরা কেউই সহিংসতাকে স্বাগত জানাতে পারি না। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের চাই, যাদের বর্বরতা ও বর্ণবাদ সম্পর্কে প্রকৃত উদ্বেগ ও জ্ঞান রয়েছে। এই মুহূর্তে, প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন জানাতে তাদের সিটি হলে যেতে দেওয়া দরকার এবং প্রেসিডেন্টের উচিত তাদের কথা শোনা। আমরা সবাই চাই একটি সুন্দর ও শান্ত পরিবেশে একটি নিরাপদ বাসস্থান ও সহায়তাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র। বর্তমানে বৈষম্য হ্রাসে আফ্রিকান আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার উন্নয়নে প্রেসিডেন্টের একটি ইতিবাচক ভাষণ বা পদক্ষেপ বর্তমান পরিস্থিতিকে শিথিল ও শান্ত করতে সহায়ক হবে।