Thank you for trying Sticky AMP!!

কোমায় সন্তান জন্ম দিলেন তিনি

সন্তান কোলে অ্যালিসিয়া ক্যাপারস। ছবি: সংগৃহীত

অ্যালিসিয়া ক্যাপারসের মনে নেই তাঁর সদ্যজাত সন্তান কীভাবে কতটা উচ্চস্বরে কেঁদেছিল। এমনকি তাঁর গর্ভযন্ত্রণার কথাও মনে নেই। সন্তানের বদলে তিনি শুধু তাঁর শরীর থেকে তার বিচ্ছেদের চিহ্নটিকেই দেখেছেন। অন্তত পাঁচ সপ্তাহ। পাঁচটি সপ্তাহ অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট দাগটিই শুধু তাঁর কাছে নিজ সন্তানের একমাত্র চিহ্ন হিসেবে উপস্থিত ছিল। কারণ, কোভিড–১৯ এর লক্ষণ নিয়ে ৩১ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্বা অ্যালিসিয়া ক্যাপারস কোমাতে থাকতেই সন্তানেই জন্ম দিয়েছিলেন।

আজ রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড–১৯ এর উপসর্গ দেখা দেওয়ায় মার্চের শেষ দিকে অ্যালীয়া ক্যপারসের বর যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখন তিনি ছিলেন ৩১ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্বা। সে সময় তাঁর তীব্র জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। ৪০ বছর বয়সী অ্যালিসিয়া সে সময়ই প্রায় কোমাতে চলে গিয়েছিলেন।

অ্যালিসিয়ার বর জিয়াদ রাজ্জাক সিএনএনকে বলেন, 'পুরো সময়টাই অত্যন্ত বাজে যাচ্ছে। আমাদের তিন বছর বয়সী সন্তান প্রথম অসুস্থ হলো। তখনো আমরা ভাবতে পারিনি যে, সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। পরে আমারও তীব্র মাথা ব্যথা ও কাশি দেখা দিল। এক সময় মুখের স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেললাম। আমাদের পুরো পরিবারকে ঘিরেই যেন ভাইরাসটি ঘুরপাক খেয়েছে।'

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিন্নাতি শহরের একটি মানব উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যালিসিয়া ক্যাপারস। বর জিয়াদ রাজ্জাক অসুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় তিনিও অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মধ্যে কোভিড–১৯ আক্রান্ত হয়েছেন বলে ভয় ঢুকে যায়। পরে গত ২৪ মার্চ রাজ্জাক তাঁকে ট্রাইহেলথ গুড সামারিটান হসপিটালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অ্যালিসিয়াকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।

সে সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ৩৭ বছর বয়সী রাজ্জাক বলেন, 'ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। এই অবস্থা থেকে সে ফিরে আসবে কিনা, তা নিয়ে ছিল ভীষণ শঙ্কা কাজ করছিল। চিকিৎসকদের সঙ্গে গর্ভে থাকা বাচ্চা ডেলিভারি নিয়েও আলাপ হচ্ছিল।'

ওই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা অ্যালিসিয়ার ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভির প্রয়োগ করেন। একই সঙ্গে অ্যালিসিয়ার শ্বাসপ্রশ্বাসকে যতটা সম্ভব সহজ করতে নানা ব্যবস্থা নেন। এই পুরো সময়ে প্রতি দিন ভোর ৬টায় হাসপাতাল থেকে নার্সরা রাজ্জাককে ফোন দিতেন। তাঁরা ফোনের অন্য প্রান্ত তখন অ্যালিসিয়ার কানের কাছে নিয়ে রাখতেন। আর রাজ্জাক তাঁদের জীবনের নানা মজার মজার স্মৃতি আউড়ে যেতেন। ছোট ছেলেটার দুষ্টুমির কথা বলতেন, যতে অ্যালিসিয়ার জীবনস্পৃহা টিকে থাকে। এই অবস্থার মধ্যেই নির্ধারিত তারিখের দু মাস আগেই অ্যালিসিয়ার খিঁচুনি শুরু হয়ে যায়। তখন চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও সে সময় অ্যালিসিয়া ছিলেন কোমায়। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তাঁকে মেডিক্যালি ইনডিউসড কোমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

রাজ্জাক বলেন, 'এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের সন্তান জন্ম নেবে, আর আমরা দুজনের কেউই তাকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখতে পারব না, তা তো কখনো ভাবতেই পারিনি।'

রাজ্জাক ও অ্যালিসিয়ার সন্তান লেইথের জন্ম হলো। কিন্তু তাকে তার মা কিংবা বাবা কেউই দেখলেন না। তার মা তখন কোমাতে। আর বাবা তখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পিরিয়ডের মধ্যবর্তী অবস্থায়। সে থাকল চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অ্যালিসিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে, তবে খুব ধীর গতিতে। কয়েক সপ্তাহ তাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হয়। অ্যালিসিয়ার পুরোপুরি চেতন ফিরতে এবং তার সন্তানের জন্ম হয়ে গেছে—এই কথাটি জানতে কয়েক সপ্তাহ লেগে গেল।

অ্যালিসিয়া বলছেন, 'শুধু মনে আছে যে, আমি বাথরুমে গেলাম এবং নিচে তাকিয়ে দেখলাম যে, সেখানে আমার একটি ক্ষত আছে, যা আগে কখনোই ছিল না। হ্যাঁ সেই ক্ষতটা ছিল সি–সেকশনের কারণে।'

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সদ্যজাত লেইথের বাবা রাজ্জাক সন্তানটিকে যখন দেখলেন, তখন তাঁর মুখে মাস্ক, পরণে সুরক্ষা পোশাক। রাজ্জাক তাঁর সন্তানকে কোলে নিলেন ঠিক, কিন্তু তার ত্বক তখনো তাঁর অধরাই থেকে গেল। তারপরও ওই মুহূর্তটি তাঁর কাছে ছিল বিরাট কিছু।

আর অ্যালিসিয়া যখন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে করে বের হলেন, তখন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে সেখানে জড়ো হয়েছিল হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই। অ্যালিসিয়া এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। নিজের ঘরেই আছেন। তবে চলাফেরা হুইলচেয়ারেই করতে হচ্ছে, নিতে হচ্ছে অক্সিজেন। মা হিসেবে সন্তানের যথেষ্ট যত্ন নিতে পারছেন না বলে তাঁর আক্ষেপের শেষ নেই।