Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রান্তিকালের নাটক 'অর্ধনারীশ্বর'

থিয়েটার থিয়েটারের প্রযোজনায় ও অনলাইন ডায়ালগের পরিবেশনায় গত ২৭ জুন দুপুরে ‘অর্ধনারীশ্বর’ নাটকের প্রথম লাইভ প্রদর্শনী হয়ে গেল। বিশিষ্ট নাট্যকার, অভিনেতা, আবৃত্তিশিল্পী মিথুন আহমেদের রচনা এবং নন্দিত নির্দেশক, অভিনেতা শামসুল আলমের (বকুল) নির্দেশনায় এ মঞ্চায়ন নিঃসন্দেহে সময়ের প্রশংসিত মঞ্চায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে।

হাজার হাজার বছর আগেকার পুরাণের কাহিনি স্মরণে, সমকালীন প্রেক্ষাপটে উপমহাদেশের একজন নারীর যাপিত জীবনের পদে পদে নির্যাতন, উপেক্ষা এবং কঠিন সত্যকে ধারণ করে সাহসী জীবনজয়ী হয়ে ওঠার আখ্যানশৈলীর বিন্যাসে নাট্যকারকে সার্থক মনে হয়েছে। নির্দেশক সময়ের নানা প্রতিকূলতাকে বিবেচনায় রেখে, লাইভ পারফরম্যান্সের নতুনধারাকে উপযোগী করে তোলার মননশীলতায় নিবেদিত ছিলেন বললে বেশি বলা হবে না।

নাট্যবোদ্ধারা হয়তো নির্দেশনার ব্যবচ্ছেদে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করতে পারেন; কিন্তু একজন দর্শক বা নাট্যকর্মী হিসেবে বলব, করোনাকালে নাট্যকর্মীদের নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া এবং দর্শকদের নাটক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিয়ে কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে নাট্যজনেরা যখন মতামত ব্যক্ত করছিলেন, এমনি এক সময়ে নিরীক্ষাধর্মী নাটক ‘অর্ধনারীশ্বর’–এর মঞ্চায়ন যেন আশাজাগানিয়া স্বপ্নবান থিয়েটারওয়ালাদের প্রায়োগিক বাস্তবতা! নাটকের একমাত্র অভিনয়শিল্পী তাহমিনা মোস্তাফার অনবদ্য অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়ালেও কখনো বা কম্পোজিশনের সঙ্গে সংলাপ প্রক্ষেপণে কিঞ্চিৎ বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা থেকে নিয়মিত রিহার্সেলেই উতরানো সম্ভব। লাইভ মঞ্চায়নে শব্দ নিয়ন্ত্রণের কিছু ঝামেলা বোধ হয় কখনোই এড়ানো সম্ভব হবে না। তবে আগামী প্রদর্শনীগুলোতে দর্শক এ বিষয়ে উন্নতিই আশা করবে। আলো নিয়েও ভাবনার অবকাশ রয়েছে, যদিও তা সময় সাপেক্ষ। কারণ, লকডাউনের বিষয়টি বোধ করি নির্দেশক এড়াতে পারবেন না।

মে মাসের শেষের সপ্তাহ থেকে নিউইয়র্কের নিয়মিত নাট্যচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সুপরিচিত অভিনেতা সীতেশ ধর, অভিনেতা রনি সৈয়দ জাকির আহমদ এবং নির্দেশক শামসুল আলম—তিনজনের উদ্যোগে ‘ক্রান্তিকালে অভিনয়’ শীর্ষক ধারাবাহিক লাইভ অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় নাট্যজন জামাল উদ্দিন হোসেন, আফরোজাবানু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গোলাম সারওয়ার হারুন, গার্গী মুখার্জি, রহমত আলীসহ অনেক প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পীরাই তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। দর্শক–শ্রোতা এবং নাট্যকর্মীরা দেখেছেন শুনেছেন, কিন্তু কোথা থেকে শুরু হবে, কীভাবে শুরু হবে, তার কোনো স্পষ্ট রূপরেখা নিরূপণ করার বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছিল না।

বেশ কয়েকটি লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠান প্রচারের পর করোনাকালীন থিয়েটারের কোনো প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য নির্ধারিত না হওয়ায় অনেকেই যখন কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন, তখন অনুষ্ঠান সঞ্চালক শামসুল আলম নির্দেশিত নিরীক্ষাধর্মী নাটকটি নিঃসন্দেহে কিছুটা হলেও থিয়েটারের পথকে আলোকিত করেছে। ভাবনার জায়গাটা এখন প্রসারিত হবে, সংযোজন, বিয়োজন হবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, সরাসরি দর্শকের চোখের সঙ্গে মনের গহিনে নাড়া দেওয়ার যে থিয়েটার, সেটি হবে না। মানুষ থেমে থাকে না, প্রাপ্তির যথার্থতা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও নাটক হয়তো থেমে থাকবে না। নাট্যকার মিথুন আহমেদ ও নির্দেশক শামসুল আলমের দেখানো পথে এগোলে অন্তত বিষাদের সময়ে ঘরবন্দী মানুষের সঙ্গে নাটক থাকবে, নাট্যকর্মীরা সীমিত আকারে হলেও চর্চায় থাকবে নাট্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। ‘অর্ধনারীশ্বর’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। জয় হোক নাটকের।