Thank you for trying Sticky AMP!!

খেয়াল রাখুন আপনার হজমের দিকে

হজমজনিত নানা সমস্যা ‘কোভিড -১৯’ সংক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটি দেখা গেছে। চীনের গবেষকেরা দেখেছেন যে করোনাভাইরাসের অর্ধেক রোগী অসুস্থতা শুরুর সময়ে হজম সমস্যার নানা উপসর্গের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উহান মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এক্সপার্ট গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা ১৮ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২০৪ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেন। গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ সাময়িকীতে। ওই তথ্য অনুযায়ী, অনেক রোগী করোনাভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে হজমের সমস্যাগুলো লক্ষ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, বমি ও পেটব্যথা।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, হজমজনিত সমস্যাযুক্ত রোগীরা করোনা রোগীদের মতো লক্ষণগুলো সহজে বোঝেন না বলে দ্রুত চিকিত্সা নেন না। এ সময় শ্বাসকষ্টের লক্ষণ স্পষ্ট থাকে না বলে তাঁরা করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে মনে করেন না।

গবেষকেরা বলেছেন, চিকিৎসকেদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়া কোভিড-১৯–এর বৈশিষ্ট্য হতে পারে। এই লক্ষণ দেখলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার জন্য অপেক্ষা না করে আগেভাগেই সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার কথা বলেছেন তাঁরা।

বিজনেস ইনসাইডার জানিয়েছে, ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত আরেক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, হজমে সমস্যা করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে আরেক উপসর্গ হতে পারে। উহানের একটি হাসপাতালে ১৩৮ জন রোগীকে নিয়ে চালানো ওই গবেষণায় দেখা গেছে ১৪ রোগীর ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব ছিল। জ্বর আসার দুই দিন আগে তাদের এ উপসর্গ দেখা দেয়।

টাফটস মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রবার্টো ভিয়াও কলিনড্রেস হাফিংটন পোস্টকে বলেছেন, এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ক্লিনিক্যাল সুপারিশ করা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। তবে একে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। ভবিষ্যতে এটা হয়তো পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মনে রাখতে হবে, এটা কোভিড-১৯–এর প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

কলিনড্রেস বলেন, কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে যেসব তথ্য জানা গেছে, এ গবেষণা তা সমর্থন করে। এর অর্থ মলে এ ভাইরাসে অস্তিত্ব থাকতে পারে। হাত ধোয়ার অনুশীলন করার জন্য এটি অন্য একটি কারণ।

ফিজিশিয়ান ফর পেশেন্ট প্রোটেকশনের সদস্য পূরবী পারিখ কোভিড-১৯ কে অবিরত গতিশীল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, আমরা এর চিকিৎসা করতে গিয়ে নতুন কিছু শিখছি। আমরা যখন আরও নতুন ঘটনা দেখব, তখন আরও বেশি জানতে পারব। তবে একটা বিষয় বোঝা গেছে যে সবার ক্ষেত্রে ভাইরাসটি একই রকম উপসর্গ দেখায় না।’

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসক এমিলি হেইল বলেন, কেবল করোনাভাইরাস নয়, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণ অনেক অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। এটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে হজমে সমস্যা মানেই কোভিড-১৯-এ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কারও যদি সন্দেহ হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই মুহূর্তে লক্ষণ থাক বা না থাক, সবারই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুশীলন জরুরি।

বিশেষজ্ঞ পারিখও বলেছেন, যেকোনো মৃদু হজমে সমস্যার উপসর্গে শরীরে আর্দ্রতা ঠিক রাখা ও বাড়িতে থাকতে হবে। যদি শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয় বা মাথা হালকা হতে শুরু করে, তবে আরও পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে। এ সময় যাতে অন্য কোনো রোগীর সংস্পর্শে না আসেন, তা খেয়াল রাখতে হবে। কারও যদি কাশি, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা জরুরি সেবা নিতে হবে। যদি ডায়রিয়া মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়, মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে বা খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তবে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হজমের সমস্যা দেখা দিলে শান্ত থাকতে হবে, ভয় পেলে চলবে না। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ বা সমস্যার ক্ষেত্রে হজমে গড়বড় সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। সাধারণ সব সমস্যার সঙ্গে কোভিড-১৯–এ জড়িয়ে ফেলা উচিত হবে না।

এ সময় মানসিক উদ্বেগ দূর করতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম কাজে লাগতে পারে। এ সময় দুশ্চিন্তা বাড়ায় এমন খবর পড়া থেকেও নিজেকে বিরত রাখা যেতে পারে। এ সময় নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সে বিবেচনা জরুরি।

কলিনড্রেস বলেন, অনেক সময় মৃদু উপসর্গ থাকতে পারে, যা সাধারণ অ্যালার্জির সঙ্গে পার্থক্য করা কঠিন। তাই এ সময় যাতে অন্যদের ক্ষেত্রে এটি না ছড়ায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় ভয় ও উদ্বেগ যতটা এড়ানো যায়, ততই ভালো। এর চেয়ে পেশাদার চিকিৎসকের কথা শুনে বাড়িতে থাকুন।