Thank you for trying Sticky AMP!!

জানুয়ারিতেই বসন্তের আবহ

আচ্ছা, হঠাৎ যদি শুনতে পান বাংলাদেশে তুষারপাত হচ্ছে, চমকে উঠবেন না? আজ নিউইয়র্কের আবহাওয়া দেখে আমার মাথায় এমন আজগুবি ভাবনাই ঘুরছিল। প্রতিদিন ফোনে ওয়েদার রিপোর্ট দেখে ঘর থেকে বের হই। বছরের এই সময়ে প্রায় প্রতি দিনই বৃষ্টি বা তুষারপাত থাকে বলেই এ পূর্বসতর্কতা। কিন্তু আজ ভুলবশত পূর্বাভাস না দেখেই ভারী জ্যাকেট পরে ঘর থেকে বের হয়ে রীতিমতো চমকে গেলাম।

বাইরে গিয়ে দেখি মানুষজন হাফহাতা গেঞ্জি, শার্ট পরে হাঁটা-চলা করছে। তাজ্জব হয়ে গেলাম। কী হলো আজ? আমি যদি ভুল না করে থাকি, জানুয়ারির মাসের ১২ তারিখ আজ। প্রতি বছর এই সময়ে রাস্তার পাশে বরফের এমন স্তূপ থাকে যে, হাঁটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। মানুষজন এমনভাবে নাক-মুখ ঢেকে বের হয় যে, পরিচিত কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও চেনার উপায় থাকে না।

ভাবলাম নিশ্চয়ই আমার কোথাও ভুল হচ্ছে। ফোন খুলে দেখি ইন্টারনেট কাজ করছে না। তাই ওয়েদার রিপোর্ট দেখতে পারলাম না। ভীষণ গরম লাগছিল বলে জ্যাকেটটা খুলে হাতে নিলাম। আমার মতো অনেককেই দেখলাম জ্যাকেট হাতে নিয়ে ঘুরছে। দারুণ আবহাওয়া। রোদ ঝলমলে আকাশ, সঙ্গে মৃদু বাতাসও বইছে। রীতিমতো গ্রীষ্মকাল মনে হচ্ছিল। যদিও এখানকার রোদ শীতকালে শুধু আলো দেয়, তাপ দেয় না। বাংলাদেশ থেকে আসার পর প্রথম দিকে এই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারতাম না। বাইরে রোদ দেখে মনে হতো রোদ পোহানো যাবে। কিন্তু এই নিরুত্তাপ রোদ আমাকে নিরাশ করেছে বহুবার। যা-ই হোক, আজ আবার উল্টো ধোঁকা খেলাম!

শীতের দিন নদীর তীরে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। অনেক দিন ইস্ট রিভারের তীরে যাওয়া হয় না। সে জন্য ভাবলাম ছুটির দিনে মেয়েকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি প্রিয় জায়গাটা থেকে। শীতকালে এমন সুন্দর দিন আর আসেবে না হয়তো কোনদিন। ইস্ট রিভারের তীরে হান্টারস পয়েন্টসে গিয়ে আমি তো আরও বিস্মিত হলাম। পুরো উদ্যান লোকে লোকারণ্য। তিল পরিমাণ জায়গা নেই সেখানে। সাধারণত সামারে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভিড় দেখে কে বলবে আজ ১২ জানুয়ারি! শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি। অনেকেই সঙ্গে করে পোষা কুকুর-বেড়াল নিয়ে এসেছেন। একদল নদীর তীরের মাঠে ফুটবল খেলছে, কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, কেউ করছে সাইক্লিং। অনেকে আবার খাবার নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে; একদম পিকনিকের আমেজ। পাশেই শিশুদের প্লেগ্রাউন্ড। সেখানে শিশুদের আনন্দের ফোয়ারা বইছে। এক তো ছুটির দিন, তার ওপর চমৎকার আবহাওয়া—এই শীতের দেশে এ তো উৎসবের আহ্বান। অনেককেই দেখা গেল সেলফোনে ছবি তুলে ভিডিও করে স্মরণীয় দিনটি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। উষ্ণ এ দিন সত্যিই উপভোগ্য। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে জানলাম, আনুমানিক ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ছিল সেদিন। বছরের এই সময়ে এমন তাপমাত্রা সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল ১৯৩৬ সালে।