Thank you for trying Sticky AMP!!

জুলিয়ানির ফি দিচ্ছেন না ট্রাম্প

আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির ফি দিচ্ছেন না। এমনকি জুলিয়ানির ফোনকলও ধরা হচ্ছে না।

নিজ অপকর্মের ফল হিসেবে হোয়াইট হাউসে অনেকটাই নিঃসঙ্গ অবস্থায় ক্ষমতার শেষ সপ্তাহ কাটাচ্ছেন ট্রাম্প।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, হোয়াইট হাউসের অবশিষ্ট কর্মকর্তারা এখন ওভাল অফিস এড়িয়ে চলছেন। শেষ মুহূর্তে পাশে কেউ না থাকায় রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছেন ট্রাম্প।

নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র জুলিয়ানি গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর ট্রাম্পের মুখ্য আইনজীবী হিসেবে আবির্ভূত হন। নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগে যত ভুয়া মামলা হয়—তার সবকিছুর মূল কারিগর হয়ে ওঠেন জুলিয়ানি।

আদালতে একের পর এক ভুয়া মামলার আরজি ও তার শুনানির জন্য জুলিয়ানি ছুটে যান পেনসিলভানিয়া থেকে মিশিগানে। জর্জিয়া থেকে উইসকনসিনে। ছোটাছুটির একপর্যায়ে জুলিয়ানি নিজে ও তাঁর ছেলে করোনায় সংক্রমিত হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের সভায় উসকানিমূলক বক্তৃতা দেন জুলিয়ানি। সেদিনের সেই হামলায় পাঁচজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ, অপরাধ পরিকল্পনার এই ঘটনা তদন্ত করছে এফবিআই। ইন্ধনদাতা হিসেবে ট্রাম্প ও জুলিয়ানির নাম আসতে পারে। তেমনটা হলে তাঁদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

৬ জানুয়ারির পর ট্রাম্পের সব আশা ধুলায় মিশে যায়। এরপর ট্রাম্পও তাঁর আইনজীবী জুলিয়ানির সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

হোয়াইট হাউসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জুলিয়ানির কোনো ফি যাতে দেওয়া না হয়। একই সঙ্গে হোয়াইট হাউসে জুলিয়ানির কোনো ফোন না ধরার জন্যও বলে দেওয়া হয়েছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রাম্প যখনই জানত পেরেছেন যে আইনগত সেবার জন্য জুলিয়ানি দিনে ২০ হাজার ডলার ফি হাঁকছেন, তখনই তিনি খেপে গেছেন। অথচ এমন আইনগত ফি প্রদানের কথা নাকি লিখিত চুক্তিতে আছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ট্রাম্পের শেষ দিকের সব বেপরোয়া আচরণের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন জুলিয়ানি। ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের সঙ্গে একেবারে আঠার মতো লেগে ছিলেন তিনি। তারপরই দুজনের সম্পর্কে শীতলতা নেমে আসে।

ইতিমধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখন তাঁর পক্ষে কোথাও কেউ নেই। নেই সেই খাস লোক জুলিয়ানিও।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি

একসময় দাপটের সঙ্গে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জুলিয়ানি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ভালোবেসে মানুষ তাঁকে আমেরিকার মেয়র হিসেবে উপাধি প্রদান করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাহচর্যে এসে জুলিয়ানি সমালোচনা কুড়ান। পুরোনো বন্ধু ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ান তিনি। তাঁকে নানা আইনি সহায়তা দেন।

নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে অপরাধের খোঁজ করাসহ ট্রাম্পের হয়ে নানা চতুর চালের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন জুলিয়ানি। এসব কারণে তাঁর পেশাগত অসততা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে বারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।

নির্বাচনের পর ফল উল্টে দিতে ট্রাম্পকে বারবার মদদ দিয়েছেন জুলিয়ানি। মার্কিন সংবিধানের নানা ব্যাখ্যা তিনি হাজির করে বলেছেন, ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে তিনি ট্রাম্পকে আরও চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে রাখবেন।

নির্বাচন-সংক্রান্ত যত ভুয়া মামলা হয়, তার অধিকাংশই আসে জুলিয়ানির হাত ধরে। তবে তিনি কোথাও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। কোনো আদালতই তাঁর মামলা আমলে নেননি। অথচ তিনি এ ব্যাপারে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের বিভ্রান্ত করেছেন। একের পর এক আশা দিয়েছেন।

ক্ষমতার শেষ সপ্তাহে হলেও ট্রাম্প তাঁর বিশ্বস্ত আইনজীবী জুলিয়ানিকে প্রেসিডেন্টের আগাম সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্পের মন ঘুরে গেছে। তিনি তাঁর আইনজীবীকে ফি দিতেই নারাজ। এ অবস্থায় জুলিয়ানির প্রতি ট্রাম্পের আচরণ কী হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।

এখন ট্রাম্পকে আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা নয়, বরং তাঁর কাছ থেকে ফি আদায়ের লড়াইয়ে নামতে হবে জুলিয়ানিকে। ট্রাম্পকে ভালো করে জানেন—এমন লোকজন জুলিয়ানির উদ্দেশে এখন বলছেন, ‘গুড লাক মি. জুলিয়ানি!’