Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্রাম্প কি লাইফ অ্যাক্টের ২৪৫(১) ধারা পুনর্বহাল করবেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল লিগ্যাল ইমিগ্রেশন ফ্যামিলি ইকুইটি অ্যাক্ট (লাইফ অ্যাক্ট)-এর ২৪৫(১) ধারা বাতিল হয়। এর আগে এমপ্লয়মেন্ট পিটিশন অথবা ফ্যামিলি পিটিশন করা ব্যক্তিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রায়োরিটি ডেট অনুযায়ী ভিসা নম্বর থাকলে তারা আমেরিকায় এসে মেয়াদ পেরিয়ে গেলে কিংবা স্ট্যাটাস বহির্ভূত হয়ে পড়লে মাত্র এক হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে স্ট্যাটাস সমন্বয় করে গ্রিনকার্ড পেতে পারতেন। কিন্তু আইনটি বাতিল হওয়ায় বর্তমানে এ ধরনের অনেকেই তাদের স্ট্যাটাস সমন্বয় করতে পারছেন না। এর পরিবর্তে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে কনস্যুলার প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে তাদের ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হচ্ছে নতুন করে।
বর্তমান আইনে মার্কিন নাগরিকের ২১ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত সন্তান (এফ-১), বিবাহিত সন্তান (এফ-৩), ভাই-বোন (এফ-৪) ও গ্রিনকার্ডধারীর ২১ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত সন্তানের (এফ-২বি) জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আমেরিকায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী হতে পারবেন না মর্মে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অর্থাৎ আবেদন অনুমোদনের আগ পর্যন্ত তাকে হয় আমেরিকার বাইরে, নয়তো ভেতরে বৈধভাবে থাকতে হবে।
অন্যদিকে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় প্রবেশের সময় কোনো রকম তল্লাশির মুখোমুখি না হলে মার্কিন নাগরিকের স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, সন্তান বা ভাইবোন হিসেবে করা গ্রিনকার্ডের আবেদন ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট অব স্ট্যাটাস’ প্রক্রিয়ার জন্য এলিজিবল হবে না। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই ‘কনস্যুলার প্রসেসিং’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে দেশে ফিরে গিয়ে কনস্যুলেট অফিস থেকে আইআর-১ ভিসা নিতে হবে। কিন্তু আপনি যেহেতু অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন, তাই আমেরিকা থেকে বের হলে পুনরায় আমেরিকায় প্রবেশের সময় আপনার ওপর তিন বা দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরোপিত হয়ে যাবে। এই নিষেধাজ্ঞা কাটাতে আপনাকে হয় দেশে ফিরে গিয়ে আই-৬০১-এর আবেদন করতে হবে অথবা আমেরিকাতে থেকেই আই-৬০১এ-এর জন্য আবেদন করতে হবে। দেশে ফিরে গিয়ে করা আই-৬০১ এর আবেদনে অনুমোদন পাওয়া অনেক বিবেচনাতেই কঠিন। বিশেষত স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক বিবেচনা, শিক্ষা, ব্যক্তিগত বিবেচনা ও বিশেষ ফ্যাক্টর— এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতেই ‘এক্সট্রিম হার্ডশিপ’ প্রমাণ করতে হয়। আমেরিকাতে অবস্থান করে আই-৬০১এ-এর জন্য করা আবেদন অনুমোদন হলেও আপনাকে ভিসা আনতে দেশে যেতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। কারণ ইতিমধ্যে আপনার আই-১৩০ ও আই-৬০১এ ইউএসসিআইএস থেকে অনুমোদন হয়ে গেছে।
লাইফ অ্যাক্টের ২৪৫(১) ধারা ফিরিয়ে এনে জরিমানার অঙ্ক ৫ হাজার ডলারও ধার্য করলে তা আমেরিকার জন্য বড় অঙ্কের একটি তহবিল নিয়ে আসবে। এই প্রক্রিয়ায় বহু অভিবাসী বিতাড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে স্বেচ্ছায় জরিমানা দিতে আগ্রহী হবে, যা আমেরিকার তহবিলে কয়েক হাজার কোটি ডলারের জোগান দেবে। একই সঙ্গে বেঁচে যাবে বিস্তর অর্থ। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় দেখা গেছে, ১ কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীকে ডিপোর্ট করতে মার্কিন সরকারের প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলার খরচ হবে। এখানেই শেষ নয়। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের ডিপোর্টেশন বাস্তবায়িত হবে, তাদের আমেরিকায় জন্ম নেওয়া সন্তান থাকলে কিংবা স্পেশাল নিডস (ডিজ্যাবিলিটি) রয়েছে এমন সন্তান থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বিভিন্ন সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অপরাধীদের বাদ দিয়ে ভালোদের রাখতে চান। এই উদ্দেশ্য সৎ হলে ফ্যামিলি অ্যাক্টের ২৪৫(১) ধারা তাঁর জন্য বড় সহায় হতে পারে। কারণ এই আইন পুনরায় কার্যকর করা হলে যেহেতু জরিমানা পরিশোধের সময় সবাইকেই আঙুলের ছাপ দিতে হবে। ফলে প্রশাসনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস পরীক্ষা করা ও এর মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করা অনেক সহজ হবে। ট্রাম্প পুরোদস্তুর একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন তিনি এই প্রক্রিয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার ডিফার্ড অ্যাকশন টু প্যারেন্টস অব ইউএস সিটিজেন্স অ্যান্ড লিগ্যাল পারমানেন্ট রেসিডেন্টস (ডাপা) প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করতে পারেনি। তাই অনেক অভিভাবকই তাদের স্ট্যাটাস সমন্বয়ের সুযোগ হারিয়েছেন। তাই ২৪৫(১) ধারার পুনর্বহালই হতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সব দিক থেকেই উত্তম সমাধান। কিন্তু ট্রাম্প কি এই সমাধানটি গ্রহণ করবেন?

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি কেবল ইউএসসিআইএস ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র।

লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্ক প্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭; ইমেইল: expa.expe@gmail.com