Thank you for trying Sticky AMP!!

দীর্ঘতম আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি টানার সময় এসেছে: বাইডেন

হোয়াইট হাউসের ট্রিটি রুমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম আফগান যুদ্ধ অবসানের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের সমাপ্তি টানার সময় এসেছে। সময় এসেছে সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার। তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আশু চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করাই এখন অগ্রাধিকার।

২০০১ সালে হোয়াইট হাউসের ট্রিটি রুমে দাঁড়িয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আফগান যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার প্রায় ২০ বছরের মাথায় স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার একই স্থানে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের অবসানের ঘোষণা দিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর দুই পূর্বসূরি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামার সঙ্গে কথা বলেন।

২০০১ সালে জর্জ বুশের আফগান যুদ্ধ ঘোষণার সময় বাইডেন সিনেটের প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। তিনি তখন একজন সিনেটর হিসেবে জর্জ বুশের আফগান যুদ্ধের অনুমোদন দেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাইডেন। বারাক ওবামা চেষ্টা করেও আফগানিস্থান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সফল হতে পারেননি। তখন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি নিয়ে ওবামা ও বাইডেনের মধ্যে মতপার্থক্যের কথা সংবাদমাধ্যমে আসে।

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, আগামী ১ মে থেকেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে আসবেন। তার মধ্য দিয়ে দুই দশকের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটবে বলে তিনি জানান।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমাদের ওপর হামলা হয়েছিল। হামলার জবাব দিতে আমরা যুদ্ধে গিয়ে ছিলাম। হামলার নেপথ্য নায়ক ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান শক্তিকে দুর্বল করা হয়েছে।’

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আফগান যুদ্ধ কখনোই প্রজন্মের পর প্রজন্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য শুরু করা হয়নি। তাঁর তিনজন পূর্বসূরি আফগান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, দীর্ঘ সময় অবস্থান বা বিপুল অর্থ ব্যয়ে আফগান সমস্যার যাবতীয় সমাধান করা সম্ভব নয়। আমেরিকা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল, তা অর্জিত হয়ে গেছে।

শপথ গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনা ও যুদ্ধের সমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য কঠিনই ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। একসময় ৯৩ হাজারের বেশি মার্কিন সেনার উপস্থিতি ছিল আফগানিস্তানে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সমঝোতা হয়। সর্বশেষ সমঝোতায় তালেবান প্রতিশ্রুতি দেয়, সেনা প্রত্যাহার করা হলে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে তারা কোনো সংঘাতে যাবে না। আগের প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানদের গোপন সমঝোতার জের ধরেই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা

১ মে থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করা হবে। প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা আফগানিস্থানে আছে। তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হবে না। মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য নিরাপত্তার জন্য ক্রমান্বয়ে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর বর্তমান আফগান সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তালেবান দ্রুতই ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর আফগানিস্তানে সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক নয়।

সেনা প্রত্যাহারের জন্য কেবল সময় বাড়ালেই আফগানিস্তানে একটি আদর্শ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে—এমন আশায় থাকার কোনো অবকাশ নেই বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি নিয়ে কথা বলছি। সমস্যাটিকে আমি আমার কোনো উত্তরসূরি প্রেসিডেন্টের জন্য রেখে যেতে চাই না।’

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় একপর্যায়ে বলেন, কোনো কিছু ভেঙে ফেলা সহজ। কিন্তু জোড়া লাগানো সব সময়ই কঠিন।

২০০১ সালে যখন এই যুদ্ধ শুরু করা হয়েছিল, তখন আফগানিস্তানে বর্তমানে নিয়োজিত অনেক মার্কিন সেনার জন্মই হয়নি। তাই এই যুদ্ধকে আমেরিকার প্রজন্মান্তরের যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়।

সেনা প্রত্যাহার করা হলেও আফগানিস্তানে মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতা থাকবে। আফগানিস্তানে মানবিক কর্মসূচিসহ তালেবানের সঙ্গে কাবুল সরকারের শান্তিপ্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় থাকবে বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন।

আফগান যুদ্ধের অবসানের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরলিংটন সমাধিতে যান। আফগান যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের জাতীয় এই সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানান।

আরলিংটন সমাধিতে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মুহূর্তের জন্য তাঁর প্রয়াত ছেলে বিউ বাইডেনকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘গত ৪০ বছরের মধ্যে আমি প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাঁর ছেলে সরাসরি যুদ্ধের মাঠে ছিল।’

ইরাকের রণাঙ্গনে বীরত্বের জন্য পদক পাওয়া অকালপ্রয়াত ছেলের কথা বলতে গিয়ে বাইডেন আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের মাঠে সন্তানের উপস্থিতির মানে কী, আমি তা জানি।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারে সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে উল্লেখ করেছেন।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে বিভক্তি রয়েছে।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুদ্ধের অবসান নয়, যুদ্ধকে আরও প্রলম্বিত করেছেন। আফগান পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে প্রভাবশালী এই আইনপ্রণেতা। তিনি মনে করেন, আফগানিস্তান নিয়ে আমেরিকার কাছে কোনো সহজ বিকল্প নেই। আর সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্পটি বেছে নিয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে আনার এই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলে মনে করেন লিন্ডসে।