Thank you for trying Sticky AMP!!

নাজরা চৌধুরী স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার

একটি অনুষ্ঠানে ডা. নাজরা চৌধুরী

প্রবাসের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে যাঁরা দেশে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সমাজসেবায় নিবেদিত রয়েছেন, ডা. নাজরা চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। আমেরিকায় ছয়টি চিকিৎসা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর অধিকাংশ সময় কাটে বাংলাদেশে। নিজ জন্মভূমিকে আত্মার অবিভাজ্য অংশ মনে করেন তিনি। মা-মাটির সঙ্গে মিশে থাকতেই ভালো লাগে তাঁর। জীবনের প্রয়োজনে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও তাঁর হৃদয়ের পুরোটাজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
মা-বাবার কাছ থেকেই নাজরা এই ভালো লাগার পাঠ নিয়েছেন। তাঁরাই তাঁকে দীক্ষিত করেছেন দেশাত্মবোধের মন্ত্রে। বাবা ইছমত আহমদ চৌধুরী একাত্তরে যুদ্ধ করেছেন অস্ত্র হাতে। আর মা আবেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে পালন করেন সংগঠকের ভূমিকা। শুধু তা-ই নয়, দুজনই ছিলেন জনপ্রতিনিধি। ইছমত আহমদ চৌধুরী নবীগঞ্জ-বাহুবল আসন থেকে ১৯৮৬ সালে এবং আবেদা চৌধুরী সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ মনোনীত হন ১৯৭৩ সালে। দুজনই এখন রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। তাঁদের সেই শূন্যতা পূরণ করতেই যেন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নাজরা। মা-বাবার মতোই মানবসেবায় ব্রতী হয়েছেন তিনি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাঁর কণ্ঠ। দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে যেমন দাঁড়াচ্ছেন, তেমনি বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। বিগত দেড় দশক ধরে সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে তাঁর জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড। কিন্তু এ নিয়ে প্রচারের আলোয় আসতে চান না তিনি। তাঁর দর্শন, মানুষের কল্যাণে কিছু করতে হলে নিভৃতেই করা উচিত।
১৯৬৫ সালে সিলেট শহরের কাজিটুলা এলাকায় জন্ম নেওয়া নাজরা চৌধুরী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৯৩ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। তাঁর জীবনসঙ্গী ডা. সুয়েব আহমদ চৌধুরীও একই সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। নাজরা কেপনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯৫ সালে মাস্টার্স এবং ২০০৩ সালে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে দেশে মেডিসিনে এফসিপিএস করা সুয়েব আহমদ চৌধুরী কিডনি বিষয়ে হানিম্যান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেন ফেলোশিপ। ২০০১ সালে দুজনে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের কেডিলাক সিটিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চৌধুরী এমডি’ নামের নিজস্ব ক্লিনিক। পরবর্তী সময়ে একই নামে একই স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন একটি হাসপাতাল। এ ছাড়া মেনিস্টি, বল্ড উইন, বিগরেপিডস শহরে ডায়ালাইসিস ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা।
প্রবাসে মানবসেবায় নিবেদিত থাকার পাশাপাশি নাজরা চালিয়ে যেতে থাকেন সমাজসেবামূলক নানা কর্মকাণ্ড। ১৯৯৭ সালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এই সংগঠনের মাধ্যমে বাঙালির সংস্কৃতিকে ভিনদেশে জাগরুক রাখার প্রচেষ্টা চালান সংশ্লিষ্টরা। নাজরা পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেন মন ভরছিল না তাঁর। শৈশবের স্মৃতিময় শহর, গ্রাম তাঁকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। সেই ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন দেশে। ২০০৭ সাল থেকে তাঁর দেশে যাওয়া বেড়ে যায়। সেই থেকে বছরে দুবার দেশে যেতেন। আর ২০১৬ সাল থেকে অনেকটা স্থায়ীভাবেই বাংলাদেশে বসবাস করছেন। জনকল্যাণে এতটাই নিবেদিত হয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে চাইছে না তাঁর মন! বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী মনিটরিং কমিটির সঙ্গে। বর্তমানে দেশে একটি চা-বাগান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৃদ্ধ নিবাস গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি কিনেছেন। শিগগির শুরু হবে ২৫০ জন মানুষ থাকার উপযোগী এই নিবাসের কাজ।
অন্যদিকে বড়লেখায় প্রায় পাঁচ শ একর জমির ওপর চা-বাগান প্রতিষ্ঠার কাজও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন নাজরা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ থেকেই বাগান প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি।
ছাত্রজীবনে নাজরা ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন জুনিয়র রেডক্রস, কচি-কাঁচার মেলা, গার্লস গাইড, লিও ক্লাবের সঙ্গে। ১৯৮৪ সাল থেকে সম্পৃক্ত আছেন সিলেটের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন কথাকলির সঙ্গে। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনেও ছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। এসব পরিচয়ের বাইরেও স্বতন্ত্র দুটি পরিচয় রয়েছে তাঁর। নাট্য অভিনেত্রী হিসেবে যেমন দেশে তেমন প্রবাসেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও রয়েছে তাঁর খ্যাতি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে একজন সমাজকর্মী হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। জীবনের বাকিটা পথ সমাজসেবা করেই পাড়ি দিতে চান। আর স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার।