Thank you for trying Sticky AMP!!

নিকি হ্যালি সরে দাঁড়ালেন কেন?

নিকি হ্যালি। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি পদত্যাগ করেছেন। এক সপ্তাহ আগে এক চিঠিতে এ কথা তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানালেও গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তা প্রকাশ করা হয়। সাংবাদিকদের সামনে হ্যালি ও ট্রাম্প দুজনেই একে অপরের ব্যাপক প্রশংসা করেন, কিন্তু ঠিক এখনই হ্যালিকে কেন সরে যেতে হচ্ছে, সে কথা কেউই খোলাসা করে বললেন না।

হ্যালি নিজে বলেছেন, দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পর এখন ব্যক্তিগত খাতে ফিরে যেতে চান। হোয়াইট হাউসে গতকালের অনুষ্ঠানে হ্যালি ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি নিশ্চয় একমত যে ব্যক্তিগত খাতে ফিরে যাওয়া আসলে একধরনের পদোন্নতি।’

হ্যালির এই ব্যাখ্যা সত্ত্বেও মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, তা নিয়ে ওয়াশিংটনে পণ্ডিত মহলে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। প্রকাশ্যে একে অপরের পিঠ চুলকালেও ট্রাম্প ও হ্যালির মধ্যে অনেক প্রশ্নেই মতভেদ রয়েছে। অনেকে ধারণা, গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাম্প প্রশাসনের অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তার সমালোচনামূলক যে চিঠি ছাপে, সেটি হ্যালির লেখা। এ কথার অবশ্য কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে যে সম্ভাব্য কারণটির ব্যাপারে সাধারণ মতৈক্য রয়েছে, তা হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পম্পেও ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বল্টনের নিয়োগের পর হ্যালির গুরুত্ব অনেক কমে এসেছে। তাঁরা দুজনেই পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে ট্রাম্পের মতোই উগ্রপন্থী।

অনেকে বলেছেন, হ্যালি ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তাঁর পদত্যাগের সেটি একটি কারণ। অবশ্য সেই জল্পনাকল্পনায় নিজেই পানি ঢেলে হ্যালি জানান, ২০২০ সালে তিনি ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন।

সিএনএনের ধারণা, হ্যালির পদত্যাগের পেছনে আর্থিক বিবেচনা কাজ করে থাকতে পারে। হ্যালি ও তাঁর স্বামী মাইকেল হ্যালি কেউই মোটেই ধনী নন। নিকি হ্যালি ছয় বছর সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর ছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর বার্ষিক আয় দুই লাখ ডলারেরও কম। এখন তিনি যদি ব্যক্তিগত খাতে চাকরি গ্রহণ করেন, এর চেয়ে বহু গুণ অর্থ উপার্জন তাঁর জন্য কঠিন হবে না।

বেশির ভাগ রিপাবলিকানের চোখে গত পৌনে দুই বছর হ্যালি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। বহুপক্ষীয় কূটনীতির বদলে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি প্রচারে তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তার চেয়েও বড় কথা, ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ঠেকাতে তিনি বেশ কার্যকর হয়েছেন।

সমালোচকদের চোখে অবশ্য জাতিসংঘে হ্যালির সময়কাল অনেক বেশি বিতর্কিত। জাতিসংঘকে দুর্বল ও অকার্যকর করতে ট্রাম্প প্রশাসন এই সময়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিটিতেই হ্যালির সমর্থন ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জলবায়ুসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি প্রত্যাখ্যান, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা। প্রতিটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে, যার অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। নিকি হ্যালি এই পরিষদ থেকে এমন কথাও বলেছেন যে যারা যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করবে না, তারা কোনো সাহায্য পাবে না। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেসব রাষ্ট্রের তালিকা তৈরি করছে।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, হ্যালির স্থলে কাকে নিয়োগ দেবেন, তা এখনো ঠিক করেননি। তাঁর চোখে কন্যা ইভানকা এই পদে সবচেয়ে যোগ্য, কিন্তু স্বজনপ্রিয়তার অভিযোগ উঠবে বলে তাঁর কথা বিবেচনায় আনছেন না।