Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজেকে নিজেই সুখী করুন

সুখী হতে হলে পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব জরুরি। মডেল হয়েছেন রাতুল ও রাখি

ছোট বেলায় পাঠ্যপুস্তকে সুখী মানুষের গল্প কম-বেশি আমরা সবাই পড়েছি, যা খুবই শিক্ষণীয়। এক রাজার ভীষণ অসুখ হলো। বহু চিকিৎসক, বৈদ্য, হেকিম, ওঝা দেখানো হলো। কেউই রোগ সারাতে পারছেন না। অবশেষে একজন চিকিৎসক এসে রাজাকে ভালোভাবে দেখে বললেন—‘রাজাকে সুস্থ করা যাবে। তবে উপায় হলো একজন সত্যিকারের সুখী মানুষের জামা লাগবে। সে জামা গায়ে দিলে রাজা সুখী হয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ অনেক খোঁজাখুঁজির পর একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেল যে নিতান্তই সাধারণ। এতই সাধারণ যে তার কোনো জামা নেই।
আসলেই তাই ধন-সম্পদ অথবা জৌলুশের মধ্যে সুখ নেই। সুখ ব্যক্তি মানসিকতার উপলব্ধির বিষয়। এর কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে বলা যেতে পারে মানসিক প্রশান্তির নাম সুখ এবং এই প্রশান্তি উপলব্ধির ধরনও একেকজনের কাছে একেক রকম। তাই একজন মানুষ সুখী কিনা সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার ব্যক্তিত্বের ম্যাচিওরিটি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার মানসিক রিঅ্যাকশনের ওপর। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের প্রবাসজীবন সম্পর্কে বেশ একটা রঙিন, সুখ-সুখময় ধারণা কাজ করে এবং যখন তারা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী হয়, তখন তাদের কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাকে নানারকম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ফারজানা, দুই সন্তানের জননী। সাত বছর আগে স্নাতক করার পর পরই আমেরিকা প্রবাসী ছেলেকে বিয়ে করে তিনিও প্রবাসী হন। ফারজানার স্বামী নিউইয়র্ক শহরে একজন খেটে খাওয়া মানুষ, যার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাটে—কীভাবে অর্থ উপার্জন করে নিউইয়র্ক শহরে মাথা গুঁজে খেয়ে-পরে টিকে থাকা যায়, সেই সংগ্রামে। এক সময়কার স্মার্ট, শিক্ষিত ফারজানা যে স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকা এসেছিল, বাস্তবের সঙ্গে তার অধিকাংশেরই মিল নেই।
ফারজানার মতো অসংখ্য প্রবাসী নারী যারা সংসার জীবনে স্বামীর ওপর নির্ভরশীল, তারা বিভিন্ন রকম মানসিক হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন এবং যার প্রভাব তাদের সংসার জীবনকে প্রভাবিত করে সংসারের সুখ শান্তি নষ্ট করে দেয়। মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তখনই, যখন কেউ অত্যধিক পরিমাণে পার্টনারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে এবং ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তব পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করতে অসমর্থ হয় এবং অন্যের বাহ্যিক সুখ দেখে নিজেকে কম সুখী ভাবতে শুরু করে।

সুখী আসলে কেউ কাউকে করতে পারে না অথবা কারও কাছ থেকে কিছু অযাচিতভাবে অর্জন করার মাধ্যমেও সুখ আসে না। নিজেকেই নিজের সুখী করা জানতে হয়, আর এটাই সুখী হওয়ার মূল মন্ত্র।
সুখী হতে চাইলে প্রথমেই কারও কাছ থেকে প্রত্যাশা করাটা কমিয়ে দিন, হোক সে স্বামী, ভাই অথবা বন্ধু। আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশায় ব্যাঘাত ঘটলেই আমরা নিজেকে অসুখী ভাবতে শুরু করি। তাই কিছু প্রত্যাশা করার আগে একবার ভাবুন, আত্মতুষ্টির জন্য আপনি নিজেকে কতটুকু পূর্ণতা দিয়েছেন? আমরা যারা প্রথম জেনারেশন হিসেবে নানাভাবে আমেরিকায় আসি, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংসারের হাল ধরা মানুষটিকে সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। কারও ওপর দেশে পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব থাকে, সর্বোপরি প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটিতে একটা সামাজিক অবস্থাও বজায় রেখে চলতে হয়। এমতাবস্থায় একজন স্বামী হয়তো স্ত্রীর সব চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। বুদ্ধিমতী স্ত্রীর উচিত তখন স্বামীকে ভুল না বুঝে বাস্তব পরিস্থিতিকে পর্যালোচনা করে আত্মসংযম করা; অন্য নারীদের চাকচিক্যময় জীবন দেখে নিজেকে অবহেলিত না ভেবে নিজেকে গঠন করা, যা একজন নারীকে দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সচ্ছলতা, সম্মান ও আত্মতৃপ্তি।
তাই নিজেকে নিজেই সুখী করুন। সুখী হওয়ার অজস্র উপাদান ছড়িয়ে আছে আপনার আশপাশেই। ভালোবাসা ব্যক্তিকেন্দ্রিক না করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন, এর চেয়ে বড় সুখ আর কোনো কিছুতে নেই। জীবন একটাই, কেউ দুহাত ভরে উপঢৌকন দেবে সে প্রত্যাশা না করে, ছুড়ে দিন চ্যালেঞ্জ, লুফে নিন আত্মবিশ্বাস জয়ের সুখ, যে সুখ কেউ কাউকে দিতে পারে না, শুধু নিজের মধ্যে আলো হয়ে চতুর্দিককে কেবল আলোকিত করে যায়।