Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের রায়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের বাকি এখনো ১৬ দিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো প্রেসিডেন্ট আছেন। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকেই তাঁকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে। দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এক বিশেষ সম্পাদকীয় নিবন্ধে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট রায় দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় হুমকি—এ কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘ট্রাম্পের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন ও নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বৈধতা প্রদানে অস্বীকার করেছেন। যে নীতিমালা বছরের পর বছর এই দেশকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, তিনি তা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছেন।’ টাইমস–এর রায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য।

প্রায় একই ভাষায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আরেক প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট। এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে এই পত্রিকা লিখেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের ‘সবচেয়ে মন্দ প্রেসিডেন্ট’। অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, তিনি একজন যোগ্য ও সম্মানজনক প্রার্থী, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে তাঁকেই প্রয়োজন। অন্যান্য প্রধান পত্রিকার মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, টাম্পা বে টাইমস, ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস ও ফ্লোরিডার সান-সেন্টিনেল বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছে।

যে কয়েকটি প্রধান পত্রিকা ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেক্সাসের এল পাসো টাইমসবোস্টন হেরাল্ড। ট্রাম্প ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন, নিউইয়র্ক টাইমসওয়াশিংটন পোস্টসহ অধিকাংশ প্রধান পত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্ক তাঁকেই সমর্থন করবে। বলা বাহুল্য, সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়নি।

শুধু জনমতে নয়, নিজ দলের ভেতরেই ট্রাম্পের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। নির্বাচনী বাতাস বিরুদ্ধে যাচ্ছে টের পেয়ে রিপাবলিকান দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা নিজেদের আনুগত্য পরিবর্তন করে নিচ্ছেন। যেসব রিপাবলিকান সিনেটর অথবা কংগ্রেস সদস্য পুনর্নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি। বস্তুত এটি তাঁদের নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা। তাঁদের একজন হলেন নেব্রাস্কার সিনেটর বেন স্যাস, যিনি কঠোরতম ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের কারণে রিপাবলিকান দল সিনেটে তার নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এই মধ্যপন্থী রিপাবলিকান। এমনকি ট্রাম্পের দুই বিশ্বস্ত অনুসারী, সিনেটর মিচ ম্যাককনেল ও সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প নিজেও পরাজয়ের গন্ধ পেয়েছেন। গত শনিবার জর্জিয়ায় এক নির্বাচনী সভায় কিছুটা স্বগতোক্তির মতো তিনি মন্তব্য করেন, বাইডেনের মতো এমন একজন অযোগ্য প্রার্থীর হাতে যদি তিনি পরাজিত হন, তাহলে তাঁকে হয়তো এই দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। তাঁর ভাষায়, ‘ভাবতে পারো, আমার সারা জীবন সামনে পড়ে আছে। এরপর তাহলে আমি করব কী?’

রিপাবলিকান সদস্য ও চাঁদাদাতাদের নিয়ে গঠিত, ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত লিঙ্কন প্রজেক্ট তাঁর এ মন্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে টিপ্পনী কেটেছে, প্রমিজ? অর্থাৎ সত্যি দেশ ছেড়ে যাবেন তো?

শুধু রিপাবলিকান রাজনীতিবিদেরাই নন, ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও পালানোর পথ খুঁজছেন। নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট এক্সিওস জানিয়েছে, ট্রাম্প শিবিরে ইতিমধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা শুরু হয়েছে। মুখে জয়ের কথা বললেও প্রচার ব্যবস্থাপক বিল স্যাপিয়েন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাকে ঝড়–বাদলের ভেতর দিয়ে যাওয়া উড়ন্ত উড়োজাহাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এক্সিওসের উদ্ধৃতি অনুসারে, দলীয় ম্যানেজারের এই হতাশা থেকেই বোঝা যায় পুরো শিবিরের কী হাল।

ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি পরাজিত হন, তাহলে তাঁকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। আয়কর ফাঁকি থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক অনিয়মের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, এই অজুহাতে এই সব মামলা এখন ঝুলে রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা ত্যাগের পর তারা যে পুনরুজ্জীবিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কংগ্রেসে তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিপক্ষ কার্যত তেমন একটি সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছে। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান এরিক সোয়ালওয়েল ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের অপরাধ তদন্তের জন্য একটি ‘প্রেসিডেনশিয়াল ক্রাইমস কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন।

জো বাইডেন ও তাঁর প্রচার শিবির অবশ্য এখনো বিজয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত আশাবাদের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে নির্বাচনের দুই দিন আগেও নিউইয়র্ক টাইমসসহ অধিকাংশ তথ্যমাধ্যমে হিলারি ক্লিনটনের ভূমিধস বিজয়ের কথা ঘোষণা করেছিল। বাইডেন তাই সব রকম আত্মতৃপ্তির বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছেন। তাঁর ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জেন ডিলন এক লিখিত বিবৃতিতে দলীয় সমর্থকদের সতর্ক করে বলেছেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান সামান্য, অবস্থা বদলে যাওয়া অসম্ভব নয়। ডিলন এমন কথাও বলেন, বাইডেন এগিয়ে আছেন বলে জনমত জরিপে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সম্ভবত সঠিক নয়।

কোনো সন্দেহ নেই, এটি অভিজ্ঞ নির্বাচনী বিশেষজ্ঞের নির্বাচনী রণকৌশলমাত্র। ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মোট ভোটের হিসাবে সে নির্বাচনে হিলারি ২ দশমিক ১ শতাংশ ভোটে জিতেছিলেন, যদিও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাস্ত হন। কিন্তু ২০২০ সালে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এ মুহূর্তে বাইডেন ও ট্রাম্পের গড় ব্যবধান ১০ শতাংশ। এ বছর মে মাস থেকে জনমতে বাইডেন অন্তত ৭ শতাংশ এগিয়ে থেকেছেন। এই ব্যবধান কোনো সময়েই হ্রাস পায়নি, বরং বেড়েছে। সর্বশেষ ফাইভথার্টিএইট ডট কমের জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের সমর্থন ৪১ দশমিক ৮ এবং বাইডেনের সমর্থন ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০১৬ সালের অন্য এক সমস্যা ছিল গ্রিন পার্টি ও অন্যান্য তৃতীয় দল, যারা প্রায় ৬ শতাংশ ভোট দখল করে নেয়। এ বছর তৃতীয় দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোট ভোট সে তুলনায় কিয়দংশ হবে বলে ভাবা হচ্ছে।