Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্বাচন পেছালে কি এমন ক্ষতি?

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দুদিন সরস্বতী পূজা। নির্বাচনের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজোর অনুষ্ঠান পড়ে গেল। প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে, নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন, তখন তারা কি সব কিছু ভালোভাবে দেখেশুনে সময় নির্ধারণ করেছিলেন? এবারই প্রথম নয়, মাত্র সেদিন রংপুর-৩ আসনের নির্বাচন হয়েছে দুর্গাপূজার দিন? তখনো মৃদু আপত্তি উঠেছিল, এবারের মতো সাড়া মেলেনি।

সরস্বতী পূজা মুখ্যত বিদ্যার্থীদের অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা তাই আন্দোলন করছে। শাহবাগ আবার জেগে উঠছে। নির্বাচন কমিশন কি করবেন? সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন নাকি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নির্বাচনটা একটু এগিয়ে বা পিছিয়ে দেবেন। তাতে কি এমন ‘মহাভারত’ অশুদ্ধ হয়ে যাবে? কমিশনের মান-ইজ্জতের ব্যাপার? ওটা আগেও ছিল না, এখনো নেই! আপনারা নির্বাচন তো ঠিকমতো করতে পারেন না। অন্তত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে একটি ‘ভালো’ কাজ করুন।

কমিশন বলেছেন, পূজা ও ভোট দুটি-ই পবিত্র কাজ, একসঙ্গে অনুষ্ঠানে সমস্যা নেই। কিন্তু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় কি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কখনো? তখন নিশ্চয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। তাই, অন্য ধর্মের অনুসারী মানুষের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। নাকি এভাবে নির্বাচন করতে যাওয়ার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অন্য কোনো দুরভিসন্ধি আছে? নির্বাচন কমিশনের মধ্যে কেউ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এমন একটি দিন নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। কিচ্ছুতে কাজ হবে না। আমার ধারণা, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কমিশনের ‘ঠুনকো’ জেদ ভেঙে দেবে, নির্বাচন পেছাবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগান্তকারী ভূমিকা সবার জানা। শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলন এরই ধারাবাহিকতার অংশ। গর্ব হয়, আমরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আবার লজ্জা হয় যখন দেখি, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজের ছোট্ট ছোট্ট ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাজনীতি করছে! নির্বাচন কমিশনের অনেক ব্যর্থতার সঙ্গে এটি নতুন সংযোজন বলা যায়।

পূজা মানে উৎসব। নির্বাচনও উৎসব। দুটি উৎসব একই দিনে হবে—ব্যাপারটা বেমানান। এ ছাড়া একটি ধর্মীয় উৎসব, অন্যটি রাষ্ট্রীয় বা অধিকার ও দায়িত্ব পালনের উৎসব। কিছুটা তফাৎও আছে বৈকি। তাই একটি উৎসব আগে-পিছে করা দরকার। পূজার সময় নির্ঘণ্ট তো আর বদল করা যাবে না, সুতরাং নির্বাচনের দিন পাল্টানো হোক। কথায় বলে, ‘সেই তো মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি’—পর্যায়ে যাওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনের সুবুদ্ধি’র উদয় হোক!

শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। প্রতিদিন তা জমে উঠছে। কিন্তু যাদের এই আন্দোলনে সহযোগিতা করার কথা, তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। কয়েক দিন আগে ভারতজুড়ে আমরা দেখলাম, সংখ্যালঘুর আন্দোলনে জাতি–ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে তেমন দৃশ্য এখনো দেখা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ কথা বলছেন, প্রার্থীরাও টুকটাক নড়াচড়া করছেন। সবাই হয়তো ‘অনুকূল হাওয়া’র অপেক্ষায় আছেন, সিগন্যাল মিললে ঝাঁপিয়ে পড়বেন?

আজকাল গণমাধ্যমে মাঝেমধ্যে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’-তে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারের সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। পূজার দিনে ভোট ঘটনাকে কেউ কেউ ‘ধর্মীয় অনুভূতি’-তে আঘাত বলতে চাইছেন। প্রশ্ন হলো, ইসি কি এটি ইচ্ছা করে করেছেন না অনিচ্ছাকৃত? পরপর দুবার একই ঘটনা যদি ‘ইচ্ছাকৃত’ নাও হয়, তবে চরম দায়িত্বহীনতা বটে। হয়তো এ কারণে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা নেই? তাই কিছুটা হলেও ‘আস্থা বাড়ানোর’ এই সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না?