Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য যা করতে হবে

পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়া জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি শ্রদ্ধা। ছবি: মিডিয়াম ডটকম
বারাক ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদ আর ন্যায়বিচারের দাবিতে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে এই পরিস্থিতিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়।

আসলে সময়ের দাবি অনুযায়ী সেরা কৌশলটা নির্ধারণের দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের ওপরই। তবে আমি বিশ্বাস করি, অতীতের প্রচেষ্টা থেকে কিছু মৌলিক শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

প্রথমত, দেশজুড়ে বিক্ষোভের যে ঢেউ বয়ে যাচ্ছে, তা পুলিশের কর্মকাণ্ড আর যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় সংস্কার আনার ক্ষেত্রে দশকের পর দশক ধরে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রকৃত ও বৈধ হতাশার প্রকাশ। বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক মানুষের 

অংশগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ, সাহসী, দায়িত্বশীল আর উৎসাহব্যঞ্জক। তাঁদের প্রতি আমাদের সম্মান ও সমর্থন জানানো উচিত, নিন্দা নয়, যা ক্যামডেন, ফ্লিন্ট শহরের মতো কিছু শহরের পুলিশ প্রশংসনীয়ভাবে অনুধাবন করেছে।

অন্যদিকে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ, প্রকৃত ক্ষোভ থেকেই হোক বা সুযোগ গ্রহণ করে হোক, বিভিন্নভাবে সহিংস হয়ে উঠেছেন, তাঁরা আসলে নিরপরাধ মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। আজ আমি একজন প্রবীণ কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখেছি। তিনি কাঁদছিলেন। কারণ, তাঁর বাড়ির আশপাশের একমাত্র মুদিদোকানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি আমাদের বিচারব্যবস্থায় এবং সমাজে নৈতিকতা দেখতে চাই, তাহলে আগে আমাদের মধ্যে সে নৈতিকতা থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমি শুনেছি যে কেউ কেউ বলছেন, আমাদের বিচারব্যবস্থায় যে বর্ণবৈষম্যমূলক পক্ষপাত রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় হলো বিক্ষোভ আর সহিংসতা। তাঁদের মতে, ভোটাধিকার প্রয়োগ আর নির্বাচনী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। বিক্ষোভের মূল বিষয়টা হলো জনসচেতনতা বাড়ানো, চোখে আঙুল দিয়ে অন্যায়টা দেখিয়ে দেওয়া। বাস্তবতা হলো, আমেরিকান ইতিহাসের পুরোটাজুড়েই দেখা যাবে যে যখনই রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমাজকে প্রান্তিকীকরণের চেষ্টা করেছে, তখনই বিক্ষোভ ও গণ-অসহযোগ দানা বেঁধেছে। কিন্তু আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হতে হবে সুনির্দিষ্ট আইন আর প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনের মাধ্যমে। আর গণতান্ত্রিক একটি দেশে এটি তখনই সম্ভব, যখন আমরা সরকারে এমন কর্তাব্যক্তিদের নির্বাচিত করব, যাঁরা আমাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল।

আরও বড় বিষয় হলো, আমাদের বিচারব্যবস্থা ও পুলিশের কর্মকাণ্ডের ওপর কোন পর্যায়ের সরকারের সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে, তা অনুধাবন করা। রাজনীতি নিয়ে চিন্তার সময় আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্টের পদ আর কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েই মাথা ঘামাই এবং হ্যাঁ, আমাদের এমন প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস, বিচারবিষয়ক দপ্তর আর কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থার জন্য লড়াই চালাতে হবে, যা আসলেই সমাজে ঘুণপোকার মতো ক্ষয় করে চলা বর্ণবাদের উপস্থিতি স্বীকার করে নেয় এবং এ নিয়ে কিছু করতে চায়। তবে পুলিশ আর বিচারব্যবস্থায় সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অঙ্গরাজ্য পর্যায় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ।

কাজেই মোদ্দা কথা হলো, আমরা যদি প্রকৃত পরিবর্তন আনতে চাই, তাহলে বিক্ষোভ আর রাজনীতির মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমাদের দুটোকেই আলিঙ্গন করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে পথে নামতে হবে, সংঘবদ্ধ হতে হবে, ভোট দিয়ে এমন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে, যিনি সংস্কারে ভূমিকা রাখবেন।

সবশেষে বলতে চাই, আমরা বিচারব্যবস্থা ও পুলিশে সংস্কারের বিষয়ে আমাদের দাবিগুলো যতটা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারব, নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের জন্য গড়িমসি করা তত কঠিন হবে।

চলুন, কাজে নেমে পড়ি।

*পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধটি লিখেছেন বারাক ওবামা। গত সোমবার নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়াম ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইটে।