Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতিশোধ নিতে নেমে পড়েছেন ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দলে তাঁর বিরোধীদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন। সিনেটে অভিশংসন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য–যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।

সিনেটে সাতজন রিপাবলিকান ট্রাম্পকে অভিশংসন দণ্ড দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এই সাতজনের মধ্যে একজন ২০২২ সালে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়বেন। তিনি সিনেটর লিসা মারকাউস্কি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

মারকাউস্কি আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর। তিনি ২০০২ সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। রিপাবলিকান পার্টির এক ভিন্নধর্মী এই সিনেটর নিজের অবস্থানে থেকে সব সময় লড়াই করছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মারকাউস্কি তাঁর বহু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।

২০১৮ সালে ট্রাম্পমনোনীত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানাগের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন মারকাউস্কি। ২০২০ সালে উদারনৈতিক বিচারপতি রুথ গ্রিন্সবার্গ মারা গেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নতুন বিচারপতি মনোনয়ন না দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা হয়েও মারকাউস্কি সিনেটে অভিশংসন আদালতে ট্রাম্পের দণ্ডের পক্ষে ভোট দেন। রিপাবলিকান পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনমনোনীত দেব হ্যালান্ডকে ইন্টেরিয়র সেক্রেটারির পদে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতটাই বিগড়ে গেছেন যে সব ঐতিহ্য ভেঙে দলের একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য হিলকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, আলাস্কার ব্যর্থ আইনপ্রণেতা মারকাউস্কিকে তিনি কোনো অবস্থাতেই সমর্থন জানাবেন না।

সিনেটর মারকাউস্কি আলস্কা অঙ্গরাজ্যকে খুব বাজেভাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তিনি জানেন না যে আগামী বছর অন্যরা কে কোথায় থাকবেন। তবে তিনি আলাস্কায় মারকাউস্কির বিরুদ্ধে প্রচারে থাকবেন।

দেব হ্যালান্ডের মতো উদারনৈতিক নৈরাজ্যবাদীকে ইন্টেরিয়র সেক্রেটারি করার কাজে মারকাউস্কির সমর্থন আলাস্কাকে মন্দভাবে প্রতিনিধিত্ব করার একটি উদাহরণ বলে ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্প এর আগে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্থনি গঞ্জালেজের বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক সহকারী ম্যাক্স মিলারের প্রার্থিতাকে সমর্থন করেছিলেন। কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি গঞ্জালেজ প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়া ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার একজন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প দলের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তার জোরে ‘কিং মেকার’ হয়ে ওঠার জন্য নেমে পড়েছেন। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা নীরব থাকেন। তাঁরা বইপত্র লেখেন। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন। দেশের সমস্যা-সংকটে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সাবেক প্রেসিডেন্টদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসবের মধ্যে নেই।

আমেরিকায় রক্ষণশীলতা ও উগ্রতাকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণকে নিজের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন ট্রাম্প। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট’ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এমনকি ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প এখনো বিশ্বাসই করেন না যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরেছেন। রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটি থাকলেও ট্রাম্প নিজেকে দলের মূল নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে ট্রাম্প রাজনীতির মাঠে সামনে থাকার উদ্যোগ নিয়েছেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাত্র পাঁচটি আসনে ডেমোক্র্যাটদের হারাতে পারলে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা চলে আসবে। সিনেটে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন মাত্র একটি আসনে জয়; পাশাপাশি আগের আসনগুলো ধরে রাখা।

সিনেটর মারকাউস্কিকে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটি সমর্থন করছে। ন্যাশনাল রিপাবলিকান সিনেটরিয়েল কমিটির চেয়ারম্যান রিক স্কট বলেছেন, তিনি মারকাউস্কির প্রার্থিতা সমর্থন করবেন।

ফ্লোরিডার সিনেটর স্কট বলেছেন, সমাজতন্ত্রীরা ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছেন। এ সংকটের সময়ে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে কোনো প্রকাশ্য–বিভেদ তিনি আশা করেন না।

মারকাউস্কি জেনেশুনেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত মাসে ট্রাম্পকে অভিশংসন দণ্ড দেওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার পর সিনেটর মারকাউস্কি বলেছিলেন, ‘আমি জানি, আমার পদক্ষেপের জন্য পরিণতি অপেক্ষা করছে। তবে আমি এসব নিয়ে ভীত নই।’

২০০২ সাল থেকে ক্রমাগত সিনেটর নির্বাচিত হয়ে আসা এই আইনপ্রণেতা পুনর্নির্বাচন নিয়ে এবারই প্রথম সমস্যায় পড়ছেন, বিষয়টি এমন নয়। ২০১০ সালে দলের স্থানীয় রক্ষণশীলদের বিরোধিতায় বাছাইপর্বেই হেরে গিয়েছিলেন মারকাউস্কি। দলের সমর্থন ছাড়াই নিজে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি।

রিপাবলিকান পার্টির উদারনৈতিক ও মধ্যপন্থীদের মধ্যে সিনেটর মারকাউস্কির সমর্থন রয়েছেন। দেশের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে না তাকিয়ে তিনি কথা বলে আসছেন। যদিও রিপাবলিকান পার্টিতে এমন লোকজন এখন আর খুব একটা নেই।