Thank you for trying Sticky AMP!!

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু নিজ দেশেই নয়, বাইরের দেশ নিয়েও নিচ্ছেন তুঘলকি সব সিদ্ধান্ত। পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসছেন তিনি। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল বিষয় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপে খোদ মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও খেদ প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, ট্রাম্প তাঁর গৃহীত নানা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও নাজুক করে তুলছেন।

গত শতকের ৯০-এর দশক থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি সাধারণ মত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল যে দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ট্রাম্প সমঝোতার মর্মমূলটিই ভেঙে দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন থেকে ইসরায়েলের রক্ষণশীল মহল ফিলিস্তিনে ওপর যা চাপিয়ে দিতে চেয়েছে, তা-ই একতরফা বাস্তবায়ন করছেন ট্রাম্প।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কাজটি এখন করা হচ্ছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমেরিকার দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে ট্রাম্প মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার বাস্তবায়ন করেন। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর হবে কি না, তা আলোচনার বদলে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে জাতিসংঘের সংজ্ঞা আমেরিকা আর মানবে না বলে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি এসব শরণার্থীদের দেখভাল করে থাকে। জাতিসংঘের এই সংস্থা শরণার্থীদের পরের প্রজন্মকেও শরণার্থী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। জাতিসংঘের এই সংজ্ঞা আর মানছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

জাতিসংঘের এই তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো অর্থসাহায্য করবে না বলে গত মাসে জানিয়ে দেওয়া হয়। বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থসাহায্য ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় নানা মানবিক প্রকল্পে ব্যয় হয়ে আসছিল। নিজেদের বাস্তুভিটের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম লড়াই করা ফিলিস্তিনিদের সংগঠন পিএলওর ওয়াশিংটন দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের এখন আর কোনো কূটনৈতিক উপস্থিতি ট্রাম্পের আমেরিকায়।

ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনার এখন এ নিয়ে কাজ করছেন। আলোচনার টেবিলে আগে ছিল শান্তি। ছিল জেরুজালেম আর ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইস্যু। এখন আলোচনার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

জাতিসংঘের সাহায্য তহবিলে অর্থ প্রদান বন্ধ ঘোষণার মানে ফিলিস্তিন, জর্ডান, সিরিয়া, লেবাননে খাদ্য-কর্মসংস্থান-স্বাস্থ্যসেবার মতো মানবিক সাহায্য থেকে লাখো অসহায় মানুষকে বঞ্চিত করা। যে ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো সীমান্তে দুধের শিশুকে মাতৃকোল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, তার কাছে ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ পৌঁছানোর আশা সুদূর পরাহত বলে সিএনএন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদক জেরমি বেন এমি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন আচরণই প্রত্যাশিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমনি করেই তাঁর কাজকর্ম চালাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও তাঁর কর্মকাণ্ড খ্যাপাটে প্রকৃতির। সমঝোতা আর আলোচনাকে কোনো মূল্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প—এমন কোনো নজির নেই। অন্য পক্ষকে বিদ্রূপ করে নিজের যা করার তা চাপিয়ে দেওয়ার নীতি তাঁর। ট্রাম্প এমনটি করেছেন চীনের সঙ্গে। করেছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে। ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে নিজের মতো করে মত চাপিয়ে দেওয়া, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ছুড়ে ফেলার পর ফিলিস্তিনি নিয়ে ট্রাম্প একই কায়দায় এগোচ্ছেন।

সিএনএন প্রতিবেদকের মতে, নিজের ইচ্ছায় চলছেন ট্রাম্প। তাঁর অনেক সিদ্ধান্ত দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাবে।