Thank you for trying Sticky AMP!!

মানবতার নীতি ভেঙেছেন সেবিকা মুয়াওয়া

এলিজাবেথ মুয়াওয়া

মানবতার মূর্ত প্রতীক হলেন সেবিকারা। একজন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কীভাবে বিত্তবৈভব ছেড়ে মানবসেবায় যোগ দিয়েছিলেন, তা আমরা সবাই জানি। নাইটিঙ্গেল আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত। একই সঙ্গে তিনি একজন লেখক ও পরিসংখ্যানবিদ। ‘দ্য লেডি ইউথ দ্য ল্যাম্প’ নামে পরিচিত এ মহীয়সীর জন্মদিন ১২ মে। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ হিসেবে। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। ইংরেজ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পেশাদারি পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি বিস্তার করেন। নার্সিং নীতিমালা প্রণয়ন ও এ সম্পর্কিত বিশ্লেষণ নিয়ে তাঁর প্রণীত ‘নোটস অন নার্সিং’ গ্রন্থ এ সম্পর্কিত একটি আকর গ্রন্থ।
লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদেরকে নিবন্ধিত করা হয়। ১৯০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নার্সেস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। ১৯০৩ সালে আমেরিকার প্রথম অঙ্গরাজ্যরূপে নর্থ ক্যারোলাইনায় নার্সিং নিবন্ধন আইন পাস হয়।
সেবিকা বা নার্সদের এই যে মানবতার সুদীর্ঘ ইতিহাস, তা কলঙ্কিত হলো আজ এক নার্স বা সেবিকার মাধ্যমে জাম্বিয়ায়। এই নার্স হলেন জাম্বিয়ার এলিজাবেথ মুয়াওয়া। একটি মাতৃসদনে কাজ করার সময় এলিজাবেথ প্রায় পাঁচ হাজার নবজাতককে অদল-বদল করেছেন। তিনি এটাতে খুব মজা পেতেন। কোনো বিশেষ কারণে নয়, শুধু মজা করেই এমনটি করেছেন এলিজাবেথ।
মাইক্রোসফটের ওয়েব পোর্টাল এমএসএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাম্বিয়ার দ্য ইউনিভার্সিটি টিচিং হসপিটালে চাকরি করতেন এলিজাবেথ। সেখানে বারো বছর সেবা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই অদল-বদল করেছেন প্রায় পাঁচ হাজার নবজাতককে।
বর্তমানে এলিজাবেথ খুবই অসুস্থ। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। এ অবস্থায় তিনি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি এখন খুবই অসুস্থ। জানি দ্রুতই মারা যাব। আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। আমি ক্ষমাপ্রার্থী ঈশ্বরের কাছে এবং সকল পিতামাতার কাছে, যাদের সন্তান আমি অদল-বদল করেছি।’ সন্তানের ডিএনএ টেস্টের পর অনেক স্বামী তাঁদের স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এ জন্যও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। শয্যাশায়ী এলিজাবেথ বলেন, ‘আমার এ কাজের জন্য বাধ্য হয়ে অনেক মা নিজের সন্তানকে এমনকি বুকের দুধ পান করাতে পারেননি। আমি এ অপরাধের জন্য নরকে যেতে চাই না। আমি সত্যিই আন্তরিকভাবে দুঃখিত। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন।’
কী সাংঘাতিক নির্দয় এই মহিলা। একটাই জীবন মানুষের। এই জীবনের সবচেয়ে পবিত্র ও নিষ্কলুষ সম্পর্ক পিতামাতা ও সন্তানের। অথচ এই নারীর নিছক মজার শিকার হতে হয়েছে কত সন্তানকে, কত মা-বাবাকে। পাঁচ হাজার সন্তান তাদের প্রকৃত মা-বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ সেবিকারা মানবতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিটি সমাজেই সমাদৃত। এই মহান পেশার সঙ্গে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, ভেঙেছেন মানবতার নীতি। আর কোথাও কোনো সেবিকা যেন এমন কাজ না করেন।