Thank you for trying Sticky AMP!!

যমুনায় জ্যোৎস্না জোয়ার

জীবনের প্রয়োজনে মানুষ মানুষের কাছ থেকে, বিশ্বপ্রকৃতির কাছ থেকে কিংবা কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খুঁজে ফেরে এগিয়ে চলার উৎস। আর এই উৎসের সন্ধানে যাওয়ায় যদি একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সমন্বয় ঘটে তাহলে খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। প্রতিটা মানুষের জীবনে সকল সাফল্যের পেছনে থাকে দুরন্ত ইচ্ছাশক্তি। আর সেই ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে অনুপ্রেরণার অফুরন্ত ফাগুন হাওয়া যদি কারও জীবনে এসে লাগে তখন সেই ইচ্ছাশক্তি আরও বেগবান হয়ে ওঠে, ছুটে চলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনের দিকে। যেমনটি আজ ছুটে চলেছে সজল-শার্লিনের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্পর্কের গভীরতা।
সজলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শার্লিন এখন পুরোপুরি সাঁতারু। এক ডুবে সুইমিং পুলের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ছুটোছুটি করে সে। সাঁতার শিখতে গিয়ে খুব খোলামেলা ভাবে মিশেছে ওরা। নীল জলের বুক চিরে চিরে সাঁতার কাটে জলপরি। নীল জলের ওপরে ফুটে ওঠে নীলপদ্ম শরীর। শার্লিনের সেই অপূর্ব অপরূপ রূপসাগরে অনেক আগেই হারিয়েছে সে।
কয়েক দিন থেকে শার্লিনও খানিকটা অন্যমনস্ক। সাঁতারের ফাঁকে ফাঁকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকে সজলের দিকে। কী যেন খুঁজে ফেরে শার্লিনের কাজল কালো চোখ ওর দিকে। মাঝে মাঝে মায়াবী রহস্যময়ী এক নারী মনে হয় ওর। ফোটা জলপদ্মের মতো ফুটে থাকা শার্লিনের শরীরে বিন্দু বিন্দু জলকণা, চুলের গোড়া বেয়ে নুয়েপড়া জল, ধবধবে ফরসা শরীরে লেপ্টে থাকা সুইমিং কাস্টের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে সজল। ওর এমন হাসি দেখে শার্লিন জিজ্ঞেস করে,
-অমন করে হাসছ কেন ?
- না এমনি।
- না এমনি নয়, নিশ্চয় কিছু আছে, আমাকে বলো।
-আমাকে মাঝে মাঝে এই সুইমিং পুলের নীল জল হতে ইচ্ছে করে।
শুনে হো হো করে হেসে ওঠে শার্লিন, একটু ইঙ্গিতপূর্ণ চোখে চোখ রেখে সে জিজ্ঞেস করে,-তাই না কি! আমার তো তা একেবারে মনে হয় না। এত দিন ধরে তুমি আমাকে সাঁতার শেখাচ্ছ, আমাকে তো তোমাকে রোবট ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়নি। তুমি কেবলই সজল, তুমি জল হতে পারবে না কখনো।
- তুমি এতটা নিশ্চিত হলে কী করে ?
- এত দিন এত কাছে থেকেও তোমাকে না পেয়ে। আমি কেবলই তোমার অপেক্ষায় থেকেছি।
অথচ— , তুমি ভীষণ লাজুক সজল।
সজল নিশ্চুপ।
- আমি খোলা শরীরে সাঁতার কাটি, অথচ তুমি আমাকে ভালো করে দেখ না। আমার শরীরে কয়টা বড় বড় স্পট আছে তুমি কি বলতে পার?
সজল নিশ্চুপ।
- তোমার দেশের ছেলেরা সবাই তোমার মতো লাজুক কি না আমার জানতে ইচ্ছে করে। আমার জানতে ইচ্ছে করে তোমরা ভালোবাসি বলতে জানো কি না।
সজল নিশ্চুপ।
- তুমি কোনো দিন আমার এই খোলা শরীরটাকে কখনো ভালো করে দেখনি। বড় নির্লিপ্ত নির্লোভ তুমি। অথচ -
- অথচ কী ?
- না, থাক।
- থাকবে কেন? বলো আমাকে।
ভাবছে শার্লিন। সজল আবারও তাগাদা দিল বলল,
- কী হলো, বল!
একটু ভেবে নিয়ে বলতে শুরু করল সে,
- বেলিজে আমার এক বয়ফ্রেন্ড ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম সে হয়তো আমাকে ভালোবাসে। আমি ওকে বিশ্বাস করেছিলাম। দেখা হলেই জড়িয়ে ধরতো। চুমু খেত। ভালোবাসি বলত। কিন্তু কিছুদিন পরে আমি বুঝেছিলাম ওর সব মিথ্যে, ফেইক। আমার বাবার সম্পদ আর আমার এই শরীর ছাড়া ওর ভেতরে আর কিছু পাইনি আমি। একটা লোভী অমানুষ আমার বন্ধু ভাবতে নিজেরই ওপর খুব রাগ হতো। অনুতপ্ত হতাম নিজের বোকামির জন্য। একদিন আমার বাবা-মাকে সব আমি খুলে বলি। তাঁদের জড়িয়ে ধরে আমি শিশুর মতো কেঁদে উঠি। আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাঁরা আমাকে তিরস্কার না করে, উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠিয়ে পুরস্কৃত করলেন। বাবা মাথায় হাত রেখে পরম স্নেহভরে বললেন,
-জীবন অনেক বড় প্রিয়, তোমার জীবন সবে মাত্র শুরু। তুমি জীবনকে এখন অর্থহীন ভাবছ, কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন তোমার সে ধারণা একেবারে পাল্টে যাবে। দেখবে জীবন কত সুন্দর আর কত মহিমাময়। আমি আশীর্বাদ করি তোমার স্বপ্ন অবশ্যই একদিন পূরণ হবে।
বাবার দেওয়া সেই আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে জীবনের সেই স্বপ্ন পূর্ণ করতেই আমার এ দেশে আসা। একসঙ্গে অনেক কথা বলতে গিয়ে জায়গাটি কেমন যেন থমথমে পরিস্থিতিতে ভরে গেল। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে থামল শার্লিন। এতক্ষণ সজলও মন দিয়ে কথা শুনছিল। শার্লিনকে এত সিরিয়াস হতে আর কখনো সে দেখেনি। একটি হাসি-খুশি মেয়ের গভীরে একি কাঠিন্য। মনে হচ্ছিল এ যেন এক অন্য শার্লিন। দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে আছে ওরা। কারও মুখে কোনো কথা নেই।
অবশেষে নীরবতা ভাঙল শার্লিন। বলল,
-আমার নিজের ইচ্ছাতেই আমি এ দেশে পড়াশোনা করতে এসেছি। মানুষ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, আর আমি জেগে জেগেই এক রাজকুমারের কথা ভাবতাম। একা একা কথা বলতাম। মনে মনে তার ছবি আঁকতাম।
হঠাৎ সেদিন প্ল্যাটফর্মে আমাকে একেবারে চমকে দিয়ে সুমুখে এসে দাঁড়ালে তুমি। হাসি মুখে জানালে, তুমি পথ হারিয়েছ। জীবনে কত মানুষকে আমি পথের কথা বলেছি, অথচ সেদিন তোমাকে দেখে আমার স্বপ্নের মানুষটির মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। তোমাকে ভালো করে যতবারই দেখি ততই আমি শিহরিত হই। একটা অন্যরকম ভালো লাগা এসে মুহূর্তেই আমার সবকিছু এলোমেলো করে গেল। একটা ঘোরের মধ্যে ট্রেনে এক কামরায় পাশাপাশি এসে বসলাম। তোমার গায়ের মিষ্টি যে গন্ধ, সেই সুবাস আমি বাতাসের ভেতরে কত দিন খুঁজেছিলাম। অথচ সেই সুবাস সেই মানুষ আমার এত কাছে! আমি চোখ বন্ধ করে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিলাম। কে যেন আমাকে ভীষণভাবে আনমনা করল। আনমনাভাবে ভ্যানিটি ব্যাগটি ট্রেনে ফেলে নেমে গেলাম। আমার সর্বস্ব হারিয়ে খুব অসহায় হয়ে রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে আমি যখন পাগলপ্রায়, তখনই তুমি কোথায় কোথায় খুঁজে খুঁজে আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমার সবকিছু। আমি সেদিনে নিশ্চিত হয়ে মনে মনে বলেছিলাম, এই আমার জীবনের দেবদূত!
তুমি ভীষণ সৎ। তোমার কোনো অর্থ লোভ নেই সেদিনই জেনেছিলাম। আর আজ জেনেছি অন্য কিছু। যে জানার ভেতরে মেয়েরা গর্বিত হয়, খুশি হয়। সেই খুশি সেই অনাবিল আনন্দে আজ আমার জীবন পরিপূর্ণ। আমার স্বপ্নের রাজকুমার আজ আমার সুমুখে। তুমিই প্রাণপ্রিয় বন্ধু আমার। আমার জীবনের প্রাণপুরুষ। আমার দেবদূত।
আমার স্বপ্নজাল ... বলতে বলতে শার্লিন ঝাঁপিয়ে পড়ল সজলের বুকে। অনেকক্ষণ বুকের ভেতরে মুখ লুকিয়ে রেখেই বিড়বিড় করে বলল,
-আমি তোমাকে ভালোবাসি সজল। অনেক সাধনায় বিধাতা আমাকে তোমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছেন। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না, আমি মরে যাব।
কী বলবে সজল ভেবে পায় না। শুধু শার্লিনের ভারী বুকের ওঠা-নামায় দোল খেতে থাকে সে।
দোল খেতে খেতে নীরবতা ভেঙে সজল বলল,
-আমি খুব সাধারণ ছেলে শার্লিন। তেমন কোনো পড়া-লেখা নেই, নেই ভালো চাকরি। তা ছাড়া তুমি আমার অনেক কিছুই এখনো জানো না।
সজলকে আরও একটু জোরে জড়িয়ে ধরে বলল,
-তুমি এম এ পাস করেছ, আমি এখনো করিনি।
ব্যস আর আমি কিছু চাই না। আর তোমার বাকি যা আছে, তা আমি মেয়ে হয়ে সব মেনে নিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি সজল। তুমি আমার জীবনের অহংকার। বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না?
শার্লিন যত সহজেই ভালোবাসি বলতে পারল, তত সহজে পারল না সজল। একটু সময় নিয়ে শার্লিনের পিঠ স্পর্শ করে সজল ফিসফিস করে বলল,
-আমিও তোমাকে ভালোবাসি শার্লিন।
- আবারও বল।
- প্রিয়তমা আমার, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- আবার বলো... আবার .. বলতে বলতে শার্লিন দুহাতে সজলের মাথাটা ধরে খুব স্বাভাবিকভাবে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল!
কতটা সময় পার হয়ে গেছে এভাবে ওরা তা জানে না। সজল নিজেকে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করতে করতে বলল,
-চল, সাঁতার শুরু করা যাক।
- না, আজ আর সাঁতারে মন নেই। চলো ঘুরে আসি।
-কোথায় ?
- আগে বলব না, গেলে নিজেই দেখবে।
হেলথ ক্লাব থেকে বের হয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে একসময় শার্লিন এসে হাত ধরেছে সজলের। সজলও মনে মনে এমনিই ভাবছিল, তবে সাহস হয়নি। এক সুন্দরী বিদেশিনীর হাত ধরে ম্যানহাটনের রাস্তায় হাঁটছে সে। এক আশ্চর্য রকমের সুখানুভূতি নিয়ে, চনমনে ভালো লাগা নিয়ে পৃথিবীর রাজধানী শহরে প্রকাণ্ড উঁচু উঁচু অট্টালিকার ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছে ওরা। সূর্যটা ঝকমক করছে মাথার ওপরে, মনে হয় বাতাসে বইছে ফুলের সুবাস। হাঁটতে হাঁটতে একসময় ওরা পার্ক অ্যাভিনিউতে পৌঁছায়। ফুলের পাপড়ি বিছানো পথ ধরে হাঁটতে থাকে ওরা। ছোট ছোট কথা, কথার মাঝে হাসি। হাসির মাঝে জেনে নিচ্ছে অজানা কত কথা। এমনিভাবে দুজন-দুজনকে জানতে গিয়ে স্বর্গসুখ উপলব্ধি করল ওরা।
জীবন খাতায় সাদা-মাঠা পৃষ্ঠাগুলো হঠাৎ করে এমনিভাবে রঙিন হয়ে উঠবে সজল কী কখনো তা ভেবেছিল। না ভাবেনি। এ যেন স্বপ্নের মতো মনে হয় ওর কাছে। শার্লিনও দারুণ খুশি আজ। সেই তখন থেকে একাই কথা বলে চলেছে। অনেক কথা। অনেক ছোট ছোট জিজ্ঞাসা। কথা বলতে বলতে ফিফথ অ্যাভিনিউতে এসে বিশাল চার্চ ‘সেন্ট প্যাট্রিক ক্যাথিড্রাল’ এর সামনে দাঁড়িয়ে শার্লিন বুকে ক্রসচিহ্ন আঁকল, মনে মনে প্রার্থনা করল। সজল বলল,
-ভেতরে যাই চল।
-না আজ নয়, আরেকদিন যাব। বলেই সামনে পা বাড়াল। ফিফথ অ্যাভিনিউ পেরিয়ে ওরা তখন রকোফেলার সেন্টারের সামনে। মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (মোমা) এর বিল্ডিংয়ের সামনে এসে শার্লিন বলল,
- এটা আমার খুব প্রিয় মিউজিয়াম! অনেক কিছু জানার আছে শেখার আছে এখানে। এখানেও আমরা পুরো একদিন থাকব, তবে আজ নয়, অন্য দিন।
হাঁটতে হাঁটতে শার্লিন জিজ্ঞেস করল,
-‘মোমা’তে বিনা টিকিটে ভেতরে যাওয়া যায়, তুমি কি তা জানো?
- না সূচক মাথা নাড়ল সে।
-আমি জানি এটা অনেকেই জানেন না। শুধু শুক্রবারে ‘মোমা’ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে, আমরা সেই সুযোগটিই একদিন গ্রহণ করব।
রেডিও সিটি মিউজিক হলেও ওরা আসবে একদিন এমনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে টাইমস স্কয়ারের দিকে পা বাড়াল ওরা।
অসংখ্য মানুষ টাইমস স্কয়ারে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বপ্নের এই নগরীতে আনন্দ করতে ছুটে এসেছে মানুষ। টাইমস স্কয়ারে দাঁড়ালে পৃথিবীর সব মানুষের আকৃতি কেমন তা দেখা হয়ে যায়। সবাই হাসি-খুশি। জীবনকে নিংড়ে উপভোগ করছে। সেই হাসি-খুশি মন নিয়ে এক অপরূপার হাত ধরে সজল আজ টাইমস স্কয়ারে।
শার্লিনও খুব খুশি। চোখে-মুখে উপচে পড়ছে হাসি। সেই মায়াবী চোখ নিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, -আমি তোমাকে এখানে কেন নিয়ে এলাম জানো?
-না সূচক মাথা নাড়ল সে।
সজলের হাত ধরে টানতে টানতে টাইমস স্কয়ারের মধ্যখানে ন্যাকেড কাউবয় এর কাছে নিয়ে এল। মুচকি হাসি হেসে বলল,
-ন্যাকেড কাউবয়কে দেখ। কত লম্বা, শরীরে একটুও মেদ নেই, দারুণ! কত সুন্দর দেখ!
সজল দেখল খালি শরীরে কাউবয় হেড মাথায় দিয়ে হাতে একটা গিটার নিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে মেয়েদের সঙ্গে ছবির পোজ দিচ্ছে। অধিকাংশই তরুণী-যুবতী। ফটোসেশনের পরে কেউ কেউ ডলার দিচ্ছে কাউবয়কে। শার্লিনও ছবি তুলল কাউবয়ের সঙ্গে। বিষয়টি সজলের ভালো না লাগলেও মুখে কিছু বলল না সে। এরপর শার্লিন সজলকে টেনে আনল কয়েকটা ন্যাকেড মেয়ের কাছে। বলল,
-টপলেস গার্ল। কী দারুণ ফিগার দেখেছ। একটি ন্যাকেড মেয়েকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার কী দারুণ সুযোগ। তুমি ছেলে। এই সুবর্ণ সুযোগ তোমাদের জন্য। দেখ দেখ প্রাণভরে দেখ। যাও কাছে গিয়ে দাঁড়াও, আমি তোমার ছবি তুলে দিই। লাজুক ছেলে তুমি, বাসায় গিয়ে একা বসে দেখ।
বলেই প্রায় জোর করেই ছবি তুলল সে। এক ঝলকে সজল দেখল খোলা বুকে মেয়েগুলি দাঁড়িয়ে ছবিতে পোজ দিচ্ছে। স্তনের ওপরে বিভিন্ন রকমের আলপনা আঁকা। সেই আলপনাটুকুই আভরণ ওদের জন্য। সজলের ভেতরটা রি-রি করে উঠল। তাড়াতাড়ি শার্লিনকে বলল,
-এটা অশালীন। এটা নোংরামি শার্লিন, চলো এখান থেকে যাই।
শার্লিন কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বলল,
-এটা নোংরামি হবে কেন? ছেলেরা দাঁড়ালে নোংরামি হয় না, আর মেয়েদের বেলায় যত অশালীন নোংরামি দেখ। তুমি ভীষণ লাজুক। তুমি আমাকেও ভালো করে দেখ না। তোমার দেশের ছেলেরা কী সবাই তোমার মতো, খোলামেলা মেয়ে দেখলে লজ্জায় লাল হয়ে যায়? তাই সেই লজ্জা ভাঙতে আজ তোমাকে এখানে এনেছি। আগামীকাল ফিফথ অ্যাভিনিউতে টপলেস মেয়েদের প্যারেড আছে, কাল সেখানে তোমাকে নিয়ে যাব।
-কেন ?
-কেন মানে? অসংখ্য টপলেস সুন্দরী মেয়েকে দেখে বলবে কে বেশি সুন্দর ওরা না আমি। না দেখলে তুমি বুঝবে কীভাবে? মেয়ে হিসেবে আমি চাই, একটি ছেলে প্রেমিক হয়ে আমাকে দেখুক, ভালো করে দেখুক, আমাকে ওলট-পালট করে দেখুক।
-শার্লিন, আমাদের দেশের আলাদা একটি সামাজিক মূল্যবোধ আছে। আছে পারিবারিক শিক্ষা ও অনুশাসন। আমরা সবাই সেই মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করি। আমাদের দেশের মেয়েরা ছেলেদের চোখের দিকে তাকাতে পারে না, যেন লাজুক লজ্জাবতী। আমাদের দেশের ছেলেরা মেয়েদের শ্রদ্ধা করে ভালোবাসে।
-তাই বলে তুমি আমাকে এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত করবে? আমিও তোমাকে ভালোবাসি সজল। আমি তো তোমার কাছ থেকে আরও কিছু চাই সজল। আরও অনেক কিছু ...
-আমি জানি শার্লিন। কেন বঞ্চিত হবে তুমি! একদিন সবই পাবে তুমি। তখন দেখবে তোমার জীবনে শুধু প্রাপ্তি আর প্রাপ্তি।
প্রসঙ্গ পাল্টে সজল প্রশ্ন করল,
-তুমি টাইমস স্কয়ারে একটা বিষয়ে খেয়াল করেছ?
-কোনটি?
-টপলেস ছেলে–মেয়ের কাছে খুব অল্প কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে। কিন্তু যে মানুষটি ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ সেজেছে সেইখানে মানুষের ঢল। তুমি কি ভেবেছ এটি কেন?
–না
- শিল্প সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে শালীনতার ভেতরে, অশালীন নোংরামির ভেতরে নয়। আমি যদি তোমাকে আমার দেশের মেয়েদের মতো লাল-সবুজ রঙের শাড়ি পরে একটি পতাকা নিয়ে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি, দেখবে কত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে।
-দারুণ আইডিয়া! আমরাও একদিন টাইমস স্কয়ারে বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্ট করব সজল!
-কেন নয়! অবশ্যই করব। তবে আমার লজ্জা ভাঙানোর জন্য কাল তোমাকে মেয়েদের টপলেস প্যারেডে আনার প্রয়োজন নেই। কারণ আমি শুধু তোমাকেই দেখতে চাই এবং সারাটি জীবন কেবলই তোমাকে দেখব প্রিয়তমা।
সজলের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে বিস্ময়ে অভিভূত শার্লিন। মুগ্ধ নয়নে সজলের চোখে চোখ রেখে কী যেন খুঁজে ফিরছে শার্লিনের পিয়াসী নয়ন। শার্লিন সরে এল সজলের খুব কাছে। আই লাভ ইউ বলতে বলতে আলতো করে চুমু খেল সে। একবার। দুই বার ..! সজলও ভীষণ ডেস্পারেট আজ। শার্লিনের হালকা গ্লিসারিন দেওয়া নরম দুটি ঠোঁটে ছুঁয়ে গেল সজলের ঠোঁট! যেন চকিতে বিদ্যুৎ ঝলক! একবার। দুইবার। বহুবার ..
টাইমস স্কয়ারের রোদেলা হাওয়ায় তখন ভেসে যাচ্ছে চুম্বনের আদিমতার আবেদন। অসংখ্য মানুষের ভিড়ে চৈত্রের ঝাঁ ঝাঁ রোদের ভেতরেও সজলের মনে হলো, ওরা কোনো দোলপূর্ণিমার রাতে জনমানবশূন্য নদীতীরে দুজন প্রার্থনায় দাঁড়িয়ে। প্রার্থনা একসময় দীর্ঘতর হয়। শার্লিনের পারফিউমের সুবাসের ভেতরে-ভেতরে যখন রক্ত কণিকাগুলি ছুটতে থাকে সাগরের দিকে তখনই জ্যোৎস্না জোয়ার জেগেছিল যমুনায়!!