Thank you for trying Sticky AMP!!

যাত্রাবিরতি যখন কষ্টের কারণ

ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছুটে যাই ডানকিন ডোনাট স্টোরে। উদ্দেশ্য গরম কফি পান । কফি নিয়েই ভাবতে থাকি জীবনের কথা। জীবনের নানা নোঙরের কথা। কোথাকার জীবন কোথায় গড়াল!

ভাবনা এসে ভিড় করে। লেখতে বসি, সামাজিকতার কথাই ভাবি বেশি। রাজনীতির বিষয় এখন আর ভাবি না। রাজনীতির ভাবনা এখন আর করি না। পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমিও বদলে গেছি। বজ্রাহত পাখির মতো ডানা ঝাপটাই। দেশ ছেড়ে বিদেশি হয়েছি বহুদিন আগে। মাটি ও ভালোবাসার টানে মাঝেমধ্যে দেশে যাওয়া হয়। সঙ্গে নিয়ে যাই পরিবারকে। এখানে জন্ম বা বেড়ে ওঠা সন্তানদের। দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টানেই এমন করি।

বহু বছর সরাসরি নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনা হয় না। অন্য দেশের এয়ারলাইনসের মাধ্যমে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত কিংবা কাতার অথবা দুবাই এয়ারপোর্টে বিরতি। অনেক সময় এক রাতের। কোনো কোনো সময় তার চেয়ে বেশি। এয়ারলাইনস হোটেলের ব্যবস্থা থাকে। দেশে যাওয়ার সময় মধ্যপ্রাচ্যের এক হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা আমাকে আজও পীড়িত করে। নিজের সন্তানদের কাছে আজও লজ্জিত হই। আজ পর্যন্ত আমার বড় ছেলে ও মেয়েকে উত্তর দিতে পারিনি। প্রশ্ন তাদের, ওরা কী প্রকৃত মুসলমান? ওদের দেশে কী আইন-কানুন আছে? ওদের মাঝে সভ্যতার ছোঁয়া আজও কেন লাগেনি?

কাতার এয়ারলাইনসে দেশের উদ্দেশে রওনা দিলাম কয়েক বছর আগে। একদিনের বিরতি কাতারে । তাই এয়ারলাইনস এক রাত যাত্রীদের থাকার জন্য নিয়ে যায় হোটেলে। আমরা খুশিই হলাম। কারণ অল্প সময়ের জন্য হলেও যা দেখা যায়, তা-ই পাওনা। হোটেলে গিয়ে একটু বিশ্রামের পর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাইরে বের হয়ে খোঁজা শুরু করি কোনো দেশি রেস্তোরাঁর। আরবি ভাষা কিছুটা জানা থাকায়, একজনকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিই। রেস্তোরাঁ কাছেই জেনে নেওয়ার পর আমরা হেঁটে রওনা দিলাম। পথেই মহাবিড়ম্বনার সম্মুখীন হই। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে থাকা তাদের মা—আমার দিকে তাকাল। কী করি, বাচ্চারাও ভয়ে এদিক-ওদিক দেখছে। আমি তাদের সান্ত্বনা দিলাম—কিছু হবে না। অল্প বয়সের, মধ্যবয়সের থেকে শুরু করে বয়স্করাও উত্ত্যক্ত করতে লাগল। কাছে এসে উত্ত্যক্ত করা যাকে বলে। ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। জঘন্যতম তাদের নানা অভিব্যক্তি, আদিম যুগের মতো। কিছুটা সময় এভাবে কাটানোর পর নজরে আসে একটি পুলিশের গাড়ি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে আসছে গাড়িটি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ডান হাত তুলে পুলিশের গাড়ির দিকে ইশারা করলাম। পুলিশ থামিয়ে জানতে চাইল। পুলিশকে জানালাম, আমাদের সমস্যা। এ সময় উত্ত্যক্তকারীরা অদূরে দাঁড়িয়েছিল।

পুলিশ সব শুনে উত্তর দিল, নিজেদের গন্তব্যে চলে যাও দ্রুত। অনুরোধ করলাম আমাদের হোটেলে নিরাপদে যাতে পৌঁছতে পারি সে দিকে যেন একটু খেয়াল রাখ। উত্তরে বলল, ‘আমি তোমার চাকরি করি না।’ আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধীরে ধীরে হেঁটে অত্যন্ত সতর্কতার মধ্যে হোটেলের দিকে এগোলাম। ভয় আর রাগে কাঁপছিলাম। ছেলে-মেয়েরা আমার এ অসহায়ত্ব উপলব্ধি করছিল। হোটেলে যাওয়ার পর তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনি। বর্বর মানুষদের কৃতকর্মের উত্তর কী দেব? এরা কী মানুষ? না আদিযুগের আজব বাসিন্দা? এদের পুলিশ কী আইন-কানুন মেনে চলে না? ওদের আইনের ধারাতে কী লেখা পর্যটক কিংবা ভিনদেশিদের সাহায্য-সহযোগিতা করা নিষেধ?

আজও সদুত্তর দিতে পারিনি। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশেরই একই চালচলন শোনা যায়। তেল-সমৃদ্ধ অধিকাংশ দেশকে অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলো সমীহ করে। ওরা যা ইচ্ছে করুক সবই ন্যায়সম্মত! মুসলমান নামধারী এ জনগোষ্ঠী কবে যে মানুষ হবে? কবে যে তাদের সামাজিক, মানবিক উৎকর্ষ ঘটবে—এ কথা কেউ জানেন না। মধ্যপ্রাচ্যের জনগোষ্ঠীর আচার-আচরণ নিয়ে একজন মুসলমান হিসেবে লজ্জিত হই। কষ্ট পাই। এ কষ্ট বোঝার দায় আছে তাদের?